স্পোর্টস ডেস্ক
০৯ জুন ২০২৫, ১২:২৯ পিএম
পাঁচ ঘণ্টা ২৯ মিনিটের এক মহারণ। দুই সেটে পিছিয়ে থাকা অবস্থায় তিনটি চ্যাম্পিয়নশিপ পয়েন্ট বাঁচিয়ে অবিশ্বাস্যভাবে ঘুরে দাঁড়ালেন কার্লোস আলকারাজ। ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফ্রেঞ্চ ওপেন ফাইনালে ইয়ানিক সিনারকে হারিয়ে জিতলেন নিজের পঞ্চম গ্র্যান্ড স্ল্যাম শিরোপা।
রোববার প্যারিসে রোলাঁ গারোঁতে এক রুদ্ধশ্বাস ফাইনালে আলকারাজ জয় পেলেন ৪-৬, ৬-৭ (৪/৭), ৬-৪, ৭-৬ (৭/৩), ৭-৬ (১০/২) গেমে। ২২ বছর বয়সী স্প্যানিশ তারকার এটি টানা পাঁচটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনালে জয়।
এই জয়ের মধ্য দিয়ে সিনারের টানা ২০ ম্যাচ জয়ের রেকর্ডে ছেদ পড়ল। ম্যাচ শেষে আলকারাজ বলেন, “এটা আমার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচ, কোনো সন্দেহ নেই। এই ম্যাচে সবকিছু ছিল।”
এটাই ছিল আলকারাজের ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো দুই সেটে পিছিয়ে থেকে ম্যাচ জেতা, তাও ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘ ফ্রেঞ্চ ওপেন ফাইনালে। চতুর্থ সেটে ৫-৩ ব্যবধানে পিছিয়ে থেকেও তিনটি ম্যাচ পয়েন্ট ঠেকিয়ে ম্যাচে ফেরেন তিনি।
“আজ আমার জন্য বিষয়টা ছিল নিজেকে বিশ্বাস করার। এক মুহূর্তের জন্যও সন্দেহ করিনি। জানতাম পারব। সত্যিকারের চ্যাম্পিয়নরা এমন মুহূর্তেই তৈরি হয়,” বলেন আলকারাজ।
তিনি হলেন মুক্ত যুগে মাত্র তৃতীয় পুরুষ খেলোয়াড়, যিনি ম্যাচ পয়েন্ট বাঁচিয়ে গ্র্যান্ড স্ল্যাম শিরোপা জিতলেন। এর আগে ২০১৯ উইম্বলডনে ফেদেরারকে হারিয়ে এমন কীর্তি গড়েছিলেন জোকোভিচ। ২০০৪ সালে গাস্তন গাওদিওও করেছিলেন এমন কিছু।
অন্যদিকে, সিনারের টানা তিনটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের স্বপ্ন ভেঙে গেল। গত বছর ইউএস ওপেন জিতেছিলেন, এরপর অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে টানা দুইবার চ্যাম্পিয়ন। এবার ফাইনালে এসে মুখ থুবড়ে পড়তে হলো।
ম্যাচ শেষে হতাশ সিনার বলেন, “খেলা অনেক সহজ, এখন কথা বলা কঠিন। আজ রাতে ঘুম ভালো হবে না জানি, কিন্তু মানিয়ে নিতে হবে।” তিনি আরও যোগ করেন, “হ্যাঁ, কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু কাঁদতে তো আর থাকা যায় না।”
এই ম্যাচে এটা ছিল আলকারাজ ও সিনারের প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনাল লড়াই। আর দুইজনই ২০০০ সালের পর জন্ম নেওয়া, এটাও ইতিহাসে প্রথম। আলকারাজ এখন সিনারকে হেড-টু-হেডে ৮-৪ ব্যবধানে এগিয়ে। গত মাসেই রোম ফাইনালেও সিনারকে হারিয়েছিলেন তিনি।
ম্যাচের শুরু থেকেই চাপ তৈরি করেন আলকারাজ। তিনটি ব্রেক পয়েন্ট তৈরি করেন, যদিও সেগুলো বাঁচিয়ে দেন সিনার। পরে আলকারাজ ৩-২ গেমে এগিয়ে গেলেও, সেই লিড ধরে রাখতে পারেননি। ৪-৩ এ এগিয়ে গিয়ে প্রথম সেট নিজের করে নেন সিনার। দ্বিতীয় সেটে আরও আগ্রাসী হয়ে খেলেন সিনার। ৩-০ তে এগিয়ে যান। আলকারাজ যখন দেড় সেট পিছিয়ে, তখন ম্যাচে ফিরতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। দ্বিতীয় সেটে যখন সিনার সার্ভ করছিলেন ২-০ সেট লিড নেওয়ার জন্য, তখনই ব্রেক করেন আলকারাজ।
তবুও টাইব্রেকারে হারতে হয় তাঁকে। টানা চারটি সেট পয়েন্ট নিয়ে শেষ পর্যন্ত দুর্দান্ত এক ফোরহ্যান্ডে দ্বিতীয় সেট নিজের করে নেন সিনার। তবে তৃতীয় সেটে আলকারাজের ঘুরে দাঁড়ানো শুরু। প্রথম গেমেই ব্রেক করে পিছিয়ে পড়েন, কিন্তু এরপর টানা চারটি গেম জিতে ৪-১ এ এগিয়ে যান। ৫-৩ এ সার্ভ হারালেও পরের গেমে প্রতিপক্ষকে ব্রেক করে সেট জিতে নেন।
চতুর্থ সেটে দুজনেই লড়াইয়ে ছিলেন সমানে সমান। কিন্তু ৩-৩ তে সিনার ব্রেক করে আবারও জয়ের কাছাকাছি পৌঁছান। তখন মনে হচ্ছিল, ট্রফি এবার সিনারের হাতে উঠতে চলেছে। কিন্তু আলকারাজ তখনই তিনটি চ্যাম্পিয়নশিপ পয়েন্ট বাঁচিয়ে ম্যাচে ফেরেন। নিজের সার্ভ ধরে রেখে ম্যাচ নিয়ে যান টাইব্রেকারে। সেখানে আবারও উজ্জ্বল হয়ে ওঠেন তিনি।
চূড়ান্ত সেটে প্রথম গেমেই সিনারের সার্ভ ভেঙে দেন আলকারাজ। এরপর আরও দুটি ব্রেক পয়েন্ট বাঁচিয়ে ৩-১ ব্যবধানে এগিয়ে যান। কিন্তু নাটক তখনো বাকি! ৫-৩ এ এগিয়ে থেকেও সার্ভ হারান আলকারাজ, সিনার টানা তিন গেম জিতে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন। তখনই আবার পাল্টা জবাব দেন স্প্যানিশ তারকা। নিজের সার্ভ ধরে ম্যাচ নিয়ে যান ১০-পয়েন্ট টাইব্রেকারে।
সেখানেই আর ভুল করেননি আলকারাজ। দুর্দান্ত ফোরহ্যান্ডে প্রথম চ্যাম্পিয়নশিপ পয়েন্টেই ম্যাচ শেষ করে দেন। একদিকে কান্নাভেজা চোখে সিনার, অন্যদিকে ইতিহাস গড়া হাসি নিয়ে আলকারাজ—রোলাঁ গারোঁর ফাইনাল মঞ্চে জন্ম নেয় এক রূপকথার রাত।