images

স্পোর্টস / ক্রিকেট

ক্রুনাল পান্ডিয়া কী আইপিএল গ্রেটদের তালিকায় থাকবেন?

স্পোর্টস ডেস্ক

০৫ জুন ২০২৫, ১১:২৭ এএম

সংখ্যার দিকে না তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে যদি উত্তর দিতে বলা হয়, আইপিএলের সেরা দশ বোলারের তালিকায় কি ক্রুনাল পান্ডিয়ার নাম থাকবে? ফাইনালে ম্যাচসেরা হয়ে ইতিহাস গড়ার দিন হলে হয়তো ‘হ্যাঁ’ বলা সহজ, কিন্তু বাস্তবিক প্রশ্নটা হলো- এই প্রতিযোগিতামূলক টি-টোয়েন্টি লিগে সত্যিই কি তাঁর থাকার যোগ্যতা আছে?

এবার তাহলে চোখ মেলে সংখ্যাগুলোর দিকে তাকানো যাক। আইপিএল ২০২৫-এ প্রায় প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পরিসংখ্যানে শীর্ষ দশে আছেন ক্রুনাল। উইকেটসংখ্যায় দশে, ইকোনমি রেটে সাত নম্বরে (কমপক্ষে ২৫ ওভার বোলিং করা বোলারদের মধ্যে), আর ইএসপিএনক্রিকইনফোর 'সর্বাধিক প্রভাবক বোলারদের' তালিকায় ছয়ে। শুধু বোলিং নয়, ব্যাট হাতে দিল্লি ক্যাপিটালসের বিপক্ষে অপরাজিত ৭৩ রানের ইনিংসটাও ভুলে গেলে চলবে না। সব মিলিয়ে চলতি আইপিএলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রভাবক পারফরমার তিনিই।

ক্রুনালকে নিয়ে বলতে গেলে পাঞ্জাব কিংসের বিপক্ষে ম্যাচটিই আদর্শ উদাহরণ, কেন এমন 'চোখে না পড়া' বোলাররাও টিকে যান চ্যাম্পিয়ন দলের পরিকল্পনায়। এটি তাঁর চতুর্থ আইপিএল শিরোপা! বল ঘোরানোর মতো স্কিল নেই, ক্লাসিক স্পিন অ্যাকশন নেই, নেই কোনো রহস্য ডেলিভারিও। কিন্তু যেটুকু আছে, সেটাই টি-টোয়েন্টিতে আদর্শ। আর তা হলো সঠিক গতি, নিখুঁত লেন্থে বল ফেলা, কোথায় বল ফেললে ব্যাটারের বিপদ বাড়বে সেই বোঝাপড়া আর লড়াকু মানসিকতা।

ক্রুনালের গতি আর নিখুঁত লেন্থে বল ফেলার কারণে ব্যাটাররা তাঁর বিরুদ্ধে সবচেয়ে পছন্দের সুইপ শট খেলতেই পারছে না। পুরো আইপিএলে সব রকম সুইপ মিলিয়ে তাঁর বিপক্ষে রান হয়েছে মাত্র ৬৫। আরও নয়জন স্পিনার এই শটে বেশি রান খেয়েছেন। ফাইনালে তাঁর বিপক্ষে দুটি সুইপ খেলার চেষ্টা হয়েছিল, একটিতেও রান আসেনি। তখন ব্যাটারদের একমাত্র ভরসা- খারাপ বলের অপেক্ষা করা, কিংবা নিজের পজিশন পাল্টে বলের লেন্থে গিয়ে খেলার চেষ্টা করা।

401649

ঠিক এই জায়গায় মাথার খেলা খেলেন ক্রুনাল। নির্ভার থাকা পাঞ্জাব ব্যাটার প্রভসিমরন সিং যখন তাঁকে এগিয়ে এসে মারতে গেলেন, তখন ক্রুনাল জানতেন- এমন সময় প্রভসিমরন একটু জায়গা তৈরি করে খেলেন। কাজেই বলটি করলেন ম্যাচের সবচেয়ে ধীরগতির (৮১.৪৯ কিমি প্রতি ঘণ্টা), সঙ্গে দিলেন অফ-স্ট্যাম্পের বাইরে ফ্লাইট, এটিই সবচেয়ে বেশি ঘোরা বল ছিল তখন পর্যন্ত। ব্যাটই ছুঁতে পারেননি প্রভসিমরন।

পাঞ্জাব কিংসের সেরা ব্যাটার জশ ইংলিস যখন চার্জ নিতে গেলেন, তখন ক্রুনাল নিলেন উল্টো কৌশল। ১০০ কিমি/ঘণ্টার চেয়ে বেশি গতি দিয়ে বল করে জায়গা দিলেন না একটুও। কারণ ইংলিস সোজা এগিয়ে খেলেন। দুটি বলেই এল দুটি উইকেট। তবে কেবল ওই দুই বল নয়, তার আশপাশের পরিকল্পনাও গড়ে দিয়েছে আরসিবির প্রথম শিরোপার ভিত।

ব্যাট হাতে ১৯০ রানে আটকে যাওয়া দলের পক্ষে ক্রুনাল বোলিং করলেন টানা চার ওভার, ১৭ রানে ২ উইকেট। গোটা আইপিএলেই এটি আহমেদাবাদের সবচেয়ে কম প্রথম ইনিংস স্কোর। এই চার ওভারে মাত্র একবার লেন্থ ভুল করেন ক্রুনাল, সেটিও ছিল ইয়র্কার। ২-৪ মিটারের মধ্যে এমন কোনো বল ছিল না, যেটা দাঁড়িয়ে থেকেই মারা যায়। ডানহাতি ব্যাটারদের দেওয়া ২০টি বলের মধ্যে মাত্র একটি পড়েছিল এক সেট স্টাম্পের বাইরে।

ক্রুনাল যেহেতু অ্যাকশন থেকে নয়, হাতে বল ঘুরিয়ে লেন্থ নিয়ে খেলেন, তাই মাঝেমধ্যে বলটা একটু ছোট হয়ে যেতে পারে। টি-টোয়েন্টিতে ভুল করলেও সেটা ছোট লেন্থে হলে মাফ। তারপরও তাঁর ২৪ ডেলিভারির মধ্যে মাত্র পাঁচটি ছিল ৭ মিটার বা তার চেয়েও ছোট, যার মধ্যে মাত্র একটিই ছিল ৮ মিটারের কমে।

তিনি যে একমাত্র বাউন্ডারিটি দিয়েছেন, সেটি এসেছে ৭ মিটারের কম লেন্থে আর খুব ধীরে বল করার কারণে, সম্ভবত বল বেশি ঘোরানোর চেষ্টা করতে গিয়েই হোঁচট। তাঁর বলের গতি ছিল ৭৯.৮৮ থেকে ১০৮.৩৩ কিমি প্রতি ঘণ্টা পর্যন্ত। নিজেই ম্যাচ শেষে বললেন, টি-টোয়েন্টিতে বল ধীরে করা মানে সাহসের ব্যাপার, কিন্তু এটিই তখন সবচেয়ে কার্যকর মনে হচ্ছিল তাঁর।

আরসিবির কোচ অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার বলেছিলেন, বড় ম্যাচের অভিজ্ঞতা আর মানসিক দৃঢ়তার কারণেই তাঁরা চেয়েছিলেন ক্রুনালকে। প্রথম ম্যাচেই নিজেকে প্রমাণ করেছেন। যেভাবে শুরু করেছিলেন, সেভাবেই শেষ করলেন। এখন তিনি সেই আট খেলোয়াড়ের একজন, যাঁরা চারটি আইপিএল ফাইনাল জিতেছেন।

সেরা দশে থাকবেন- এই বাজি হয়তো কেউ ধরতেন না। কিন্তু আজ সেখানে ঠিকই আছেন ক্রুনাল পান্ডিয়া।