images

স্পোর্টস / ক্রিকেট

মায়ের জন্য ক্যানসার হাসপাতাল গড়ার স্বপ্ন থেকে বিশ্বকাপ জয় ইমরান খানের

২৫ মে ২০২৫, ১০:১২ এএম

১৯৯২ সালের এক ঐতিহাসিক সন্ধ্যায়, মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে দাঁড়িয়ে পাকিস্তান ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ইমরান খান যখন বিশ্বকাপ ট্রফি উঁচিয়ে ধরেন, তখন শুধু একটি দেশের নয় আসলে কোটি মানুষের হৃদয়ে তিনি জয়ের আলো ছড়িয়ে দেন। কিন্তু সেই জয় ছিল কেবল একটি ম্যাচ কিংবা একটি টুর্নামেন্টের নয়; সেটি ছিল এক গভীর, মানবিক স্বপ্নের সূচনা। পাকিস্তানে একটি পূর্ণাঙ্গ ক্যান্সার হাসপাতাল গড়ার অঙ্গীকার।

ইমরান খানের এই স্বপ্নের পেছনে ছিল এক মর্মান্তিক ব্যক্তিগত ঘটনা। ১৯৮৫ সালে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মা শওকত খানুমের মৃত্যু তাঁকে ভেতরে ভেতরে ভেঙে দিয়েছিল। সেই যন্ত্রণার মধ্যেই তিনি উপলব্ধি করেন, পাকিস্তানে এমন একটি হাসপাতালের অভাব রয়েছে, যেখানে সাধারণ মানুষও সম্মানজনক ও আধুনিক ক্যান্সার চিকিৎসা পেতে পারে।

তিনি সিদ্ধান্ত নেন- মায়ের স্মৃতিকে শ্রদ্ধা জানাতে ও হাজারো অসহায় ক্যান্সার রোগীকে সহায়তা করতে তিনি গড়ে তুলবেন এক আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল।

বিশ্বকাপ জয় একটি বড় অর্জন হলেও, ইমরান খানের জন্য সেটি ছিল একটি বৃহৎ লক্ষ্যের মাধ্যম। ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ জয়ের পর ম্যাচ-পরবর্তী বক্তৃতায় তিনি যে কথাটি বলেন, তা আজও অনেকের স্মৃতিতে গেঁথে রয়েছে। “এই জয়ের মাধ্যমে আমি আমার ক্যান্সার হাসপাতাল নির্মাণের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চাই।”

সেই থেকে শুরু হয় এক ব্যতিক্রমধর্মী যাত্রা। একজন ক্রিকেটারের গণ্ডি ছাড়িয়ে এক মানবিক নেতৃত্বের পরিচয়।

শুধু খ্যাতি নয়, তিনি নিজে রাস্তায় নেমে তহবিল সংগ্রহ করেছেন। বাড়ি বাড়ি গেছেন, দেশে-বিদেশে অনুষ্ঠান করেছেন, নিলামে তুলেছেন নিজের সই করা ব্যাট, জার্সি সবই হাসপাতালের জন্য। তাঁর এই নিষ্ঠা ও স্বচ্ছতা মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে অবিশ্বাস্যভাবে।

স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেয় ১৯৯৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর, লাহোরে উদ্বোধন হয় শওকত খানুম মেমোরিয়াল ক্যান্সার হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার। যেটি ছিল পাকিস্তানের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ক্যান্সার চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান। এটি শুধু ধনীদের জন্য নয়, বরং গরিব ও অসহায় রোগীরাও এখানে বিনামূল্যে চিকিৎসা পান।

পরবর্তীতে, হাসপাতালের শাখা গড়ে ওঠে পেশোয়ার ও করাচিতে সারাদেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এই সেবার আলো।

তাঁর এই ক্যান্সার হাসপাতাল আজও হাজারো জীবন বাঁচায়, লাখো মানুষের মনে জাগায় আশার আলো। ১৯৯২ সালের সেই ট্রফি, হয়তো ট্রফির মতই চকচক করছিল, কিন্তু তার চেয়েও উজ্জ্বল ছিল এক মানুষের প্রতিজ্ঞা "আমি ক্রিকেট খেলেছি, কারণ আমাকে হাসপাতাল বানাতে হতো।"