স্পোর্টস ডেস্ক
২০ মে ২০২৫, ০২:৩৫ পিএম
ভারতের সঙ্গে সাম্প্রতিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন দেশটির জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও অলরাউন্ডার শাহিদ খান আফ্রিদি। ইসলামাবাদে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান আফ্রিদি। ‘অপারেশন বুনইয়ানুম মারসূস’-এর সফলতার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান তিনি।
এ সময় বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারারও। ভারতীয় আগ্রাসনের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাহসী পদক্ষেপের প্রশংসাও করেন সাবেক এই মারকুটে ব্যাটার।
আরও পড়ুন- ভারতের মিসাইল হামলা থেকে যেভাবে অল্পের জন্য বেঁচেছেন অজি ক্রিকেটাররা
আরও পড়ুন- ‘ভারত বুঝতে পারছে পাকিস্তানের মুখোমুখি হওয়া কতটা ব্যয়বহুল’
তিনি বলেন, "এই কঠিন সময়ে পুরো জাতি এক হয়েছে, এবং একসঙ্গে দাঁড়িয়ে শত্রুকে জবাব দিয়েছে।" প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ আফ্রিদিকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, জাতি ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাঁর এই সংহতি প্রশংসার যোগ্য।
সম্প্রতি ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্ব তীব্র আকার ধারণ করার পর একাধিকবার আফ্রিদি প্রকাশ্যে ভারতের সমালোচনা করেছেন। তিনি ভারত সরকারের আগ্রাসী মনোভাবের নিন্দা জানিয়ে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর দক্ষতা ও প্রস্তুতির প্রতি আস্থা প্রকাশ করেন।

পাকিস্তান সেনবাহিনীর প্রশংসা করে তিনি বলেছিলেন, "পাকিস্তানের সেনাবাহিনী অত্যন্ত প্রশিক্ষিত। এদের ভয় দেখিয়ে কিছু হবে না।" পেহেলগাম হামলার পেছনে পাকিস্তানের হাত আছে বলে ভারতের দাবি উড়িয়ে দিয়ে আফ্রিদি একে ‘ফলস ফ্ল্যাগ অপারেশন’ বলে আখ্যা দেন এবং মোদি সরকারকে ‘অদক্ষ’ বলেও মন্তব্য করেন।
এই মন্তব্যের পর ভারতের পক্ষ থেকে আফ্রিদির ইউটিউব চ্যানেলসহ ১৫টি পাকিস্তানি চ্যানেল ব্লক করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া রাশিদ লতিফ, শোয়েব আখতার ও বাসিত আলীর মতো সাবেক ক্রিকেটারদের চ্যানেলও রয়েছে।
আফ্রিদি আরও বলেছিলেন, "ভারতের মিডিয়া এখন এমনভাবে যুদ্ধ কাভার করে, যেন ‘কার্টুন নেটওয়ার্ক’। এইসব অতিরঞ্জিত সংবাদ দিয়ে তারা মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ায়।"
করাচিতে অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে আফ্রিদি বলেন, "ভারত ভুল করে পাকিস্তানকে হালকাভাবে নিয়েছে। আমাদের সেনাবাহিনী দুর্দান্ত জবাব দিয়েছে। ভারতীয় বাহিনী সাধারণ মানুষ ও উপাসনালয়ের ওপর হামলা চালিয়ে মানবতা লঙ্ঘন করেছে।" এ সময় তিনি মোদি সরকারের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তিরও সমালোচনা করেন। আফ্রিদি বলেন, "বিদেশে শিখ কর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগে মোদি এখন আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পড়েছে।" এই সমাবেশটি ছিল পাকিস্তান সরকারের ঘোষিত 'ইয়াওমে তাশাক্কুর' বা ‘কৃতজ্ঞতা দিবস’-এর অংশ, যেখানে হাজার হাজার মানুষ সেনাবাহিনীর প্রতি সমর্থন জানায়।

ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে এক হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর নতুন করে উসকে উঠে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা। প্রমাণ ছাড়াই পাকিস্তানকে দোষারোপ করে ভারত। এর জেরে ভারত ইন্দাস পানি চুক্তি স্থগিত, ভিসা বাতিল ও কূটনৈতিক সম্পর্ক সীমিত করার মতো পদক্ষেপ নেয়।
পাকিস্তানও পাল্টা পদক্ষেপ নেয়- ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ, আকাশসীমা বন্ধ করে দেওয়ার মতো কড়া সিদ্ধান্ত নেয় তারা। উত্তেজনা চরমে পৌঁছায় ৭ মে, যখন ভারত একাধিক পাকিস্তানি শহর- পাঞ্জাব ও আজাদ কাশ্মীরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এতে বহু বেসামরিক নাগরিক নিহত হন।
জবাবে পাকিস্তান কয়েকটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান গুলি করে নামায় এবং ড্রোন হামলা প্রতিহত করে। ১০ মে ভারত ফের পাকিস্তানের বিমানঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। পাল্টা জবাবে পাকিস্তান চালায় ‘অপারেশন বুনইয়ানুম মারসূস’, যার লক্ষ্য ছিল ভারতের সামরিক স্থাপনা।
শেষ পর্যন্ত ১১ মে রাতভর কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন, যা দুই দেশের কর্মকর্তারাও পরে নিশ্চিত করেন।