images

স্পোর্টস / ক্রিকেট

কোহলির অবসর নেওয়ার পেছনে পরিবারই তাহলে মূল কারণ!

স্পোর্টস ডেস্ক

১৩ মে ২০২৫, ০৬:৪৫ পিএম

টেস্টে ভারতের চতুর্থ নম্বর ব্যাটিং পজিশন একসময় ছিল শচীন টেন্ডুলকারের রাজত্ব। সেই জায়গাটিকে নিজের করে নিয়েছিলেন বিরাট কোহলি। আর সেই কোহলিই হঠাৎ করে সোমবার জানিয়ে দিলেন, আর টেস্ট খেলবেন না। নিজের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক বিবৃতিতে ৩৬ বছর বয়সী তারকা জানান, তিনি দীর্ঘদিনের প্রিয় ফরম্যাটকে বিদায় জানাচ্ছেন।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোহলির এই সিদ্ধান্তের মূল কারণ- পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে চাওয়া। খেলোয়াড়ি জীবনের ব্যস্ত সূচির মাঝে পরিবারের জন্য পর্যাপ্ত সময় বের করা কঠিন হয়ে যাচ্ছিল। তাই এই সিদ্ধান্ত।

এর আগে টেস্ট থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন রোহিত শর্মাও। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হলেন কোহলি। ফলে আগামী ২০ জুন থেকে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শুরু হতে যাওয়া পাঁচ ম্যাচের সিরিজে একপ্রকার বদলের ধাক্কা নিয়েই নামতে হচ্ছে ভারতকে।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সর্বশেষ বর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিতে খুব একটা ভালো কাটেনি কোহলির সময়। তবে এরপর ঘরোয়া ক্রিকেটে রনজি ট্রফিতে রেলওয়ের বিপক্ষে দিল্লির হয়ে খেলতে দেখা যায় তাকে। তাতে অনেকেই ভেবেছিলেন, তিনি আবারও নিজেকে প্রমাণ করে ইংল্যান্ড সফরে ফিরতে চাইছেন।

কিন্তু সব জল্পনাকে পেছনে ফেলে সোমবার টেস্ট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়ে ভক্তদের বিস্মিত করলেন কোহলি। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে নানা প্রশ্ন, কেন এমন সিদ্ধান্ত? এত দ্রুত কেন?

বর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিতে হারার পর বিসিসিআই খেলোয়াড়দের নিয়ে ১০ দফা নিয়ম জারি করে। এর একটি ছিল, দীর্ঘ বিদেশ সফরে খেলোয়াড়দের সঙ্গে পরিবারের সময় কাটানোর ওপর নিয়ন্ত্রণ। নিয়ম অনুযায়ী, দেড় মাসের বেশি দীর্ঘ সফরে পরিবার খেলোয়াড়ের সঙ্গে থাকতে পারবে মাত্র ১৪ দিন।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, এপ্রিল মাসে নির্বাচক কমিটির প্রধান অজিত আগারকর ও বিসিসিআইয়ের এক গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসককে ম্যাসেজ করে নিজের অবসরের ইচ্ছার কথা জানান কোহলি। জানান, পরিবারের সঙ্গে আরও বেশি সময় কাটাতে চান তিনি।

তবে বিসিসিআই তখনই কোহলিকে বলে যেন তিনি তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্ত না নেন, আরও একটু সময় নিয়ে ভাবেন। এরপর ৭ মে আবারও বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করেন কোহলি। তখনও বোর্ড তাকে বলেন, এখনই ঘোষণা না দিতে। কারণ, তখন চলছিল ‘অপারেশন সিঁদুর’ ও পাকিস্তানের সঙ্গে সামরিক উত্তেজনা।

শেষ পর্যন্ত ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসার পর কোহলি বোর্ড ও নির্বাচকদের জানিয়ে দেন, তিনি এখন অবসরের ঘোষণা দেবেন। এরপরই নিজের ইনস্টাগ্রামে আনুষ্ঠানিকভাবে জানান টেস্ট ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা।

পরিবারকে সময় দিতে না পারার হতাশা আগেও প্রকাশ করেছিলেন কোহলি। বেঙ্গালুরুতে এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, “পরিবারের ভূমিকা বোঝানো সত্যিই কঠিন। বাইরের দুনিয়ায় যত বড় কিছুই ঘটুক না কেন, শেষ পর্যন্ত যখন পরিবারের কাছে ফিরে আসা যায়, তখনই মানসিকভাবে ভারসাম্য রাখা সম্ভব হয়।”

তিনি আরও বলেন, “অনেকে বুঝতেই পারেন না এর মূল্য কতটা। আমি চাই না আমার রুমে গিয়ে একা বসে থেকে হতাশায় ডুবে থাকি। আমি চাই স্বাভাবিক একটা পরিবেশে থাকতে। তখনই আপনি খেলাটাকে দায়িত্ব হিসেবে নিতে পারেন।”

২০১১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যাত্রা শুরু করেন কোহলি। এরপর ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন ভারতের ইতিহাসের সবচেয়ে সফল টেস্ট অধিনায়ক। তার নেতৃত্বে ভারত খেলেছে ৬৮টি টেস্ট, জিতেছে ৪০টি, যা এখনো পর্যন্ত সর্বোচ্চ। সবচেয়ে বড় অর্জন, ২০১৮-১৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ঐতিহাসিক ২-১ সিরিজ জয়। প্রথমবারের মতো ভারত অজিদের ঘরের মাঠে টেস্ট সিরিজ জেতে কোহলির নেতৃত্বেই।

টেস্ট ক্রিকেটের এক স্বর্ণযুগের প্রতিনিধি বিদায় নিলেন। কোহলির সিদ্ধান্তে অনেকেই হয়তো খুশি নন, তবে পরিবারকেই যে তিনি প্রথমে রাখতে চান, সেটিই বারবার বুঝিয়ে দিয়েছেন। এখন দেখা যাক, সীমিত ওভারের ক্রিকেটে তাকে আর কতদিন দেখা যায়।