images

স্পোর্টস / ফুটবল

আরও এক এল ক্লাসিকোয় হার, রিয়ালের সামনে কঠিন পথ

স্পোর্টস ডেস্ক

২৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:০৭ পিএম

লা কার্তুজার উত্তাল সন্ধ্যায় রিয়াল মাদ্রিদকে ৩-২ গোলে হারিয়ে কোপা দেল রে জয় করেছে বার্সেলোনা। ক্লাসিকোর টানটান উত্তেজনাপূর্ণ লড়াইয়ে অতিরিক্ত সময়ে জুলস কুন্দে হয়ে ওঠেন বার্সার অপ্রত্যাশিত নায়ক।

খেলার ১১৬তম মিনিটে প্রতিপক্ষের ভুল পাস ধরে নিচু শটে বল জালে জড়ান কুন্দে। যখন মনে হচ্ছিল ম্যাচ গড়াবে টাইব্রেকারে, তখনই বার্সার এই গোল নিশ্চিত করে দেয় শিরোপা। এবার ট্রেবল জয়ের স্বপ্ন বুনছে বার্সা, কোপার পর এখন তাদের চোখ লা লিগা আর চ্যাম্পিয়নস লিগে।

এর আগে প্রথমার্ধে পেদ্রির দুর্দান্ত গোলে এগিয়ে যায় বার্সা। তবে দ্বিতীয়ার্ধে বদলি নামা কিলিয়ান এমবাপে এবং অরেলিয়ান চুয়ামেনি সাত মিনিটের ব্যবধানে দুটি গোল করে রিয়ালকে এগিয়ে দেন। কিন্তু ৮৪তম মিনিটে ফেরান তোরেস থিবো কুর্তোয়াকে কাটিয়ে গোল করে ম্যাচে ফেরান বার্সাকে। এরপর অতিরিক্ত সময়ের রুদ্ধশ্বাস নাটকীয়তার পর কুন্দের গোলেই শেষ হাসি হেসেছে কাতালানরা।

রেফারিং নাটক: ৯৬তম মিনিটে পেনাল্টি বাতিল
ম্যাচের আগে থেকেই রেফারি রিকার্ডো দে বুরগোস এবং ভিএআর কর্মকর্তা পাবলো গনসালেসের ওপর সন্দেহ-অবিশ্বাসের চাপ ছিল তুঙ্গে। রিয়ালের পক্ষ থেকে প্রকাশ্যে অভিযোগ এসেছিল রেফারিদের পক্ষপাত নিয়ে।

প্রথমার্ধে বেশ কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত হলেও বড় কোনো ইভেন্ট ঘটেনি। তবে ম্যাচের শেষদিকে নাটক জমে ওঠে। ৯৬তম মিনিটে রাফিনহাকে ফাউল করা হয় বলেই মনে হয়েছিল। রেফারি পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দেন, বার্সা শিবিরে শুরু হয় উদযাপন। তবে দীর্ঘ ভিএআর পর্যালোচনার পর সিদ্ধান্ত পাল্টে পেনাল্টি বাতিল করেন রেফারি। রিপ্লেতে দেখা যায় রাফিনহা নিজ থেকেই পড়ে গিয়েছিলেন।

শেষ পর্যন্ত কুন্দের গোলে বার্সা জয় পেলেও রিয়াল খেলোয়াড়রা ক্ষুব্ধ ছিলেন। বদলি হয়ে বেরিয়ে যাওয়া রুডিগার মাঠে কিছু একটা ছুঁড়ে মারার জন্য লাল কার্ড পান, লুকাস ভাসকেজও লাল কার্ড দেখেন। ম্যাচ শেষে হুলস্থূল পরিস্থিতি সামাল দিতে মাঠে নামতে হয় দলের স্টাফদেরও।

ফ্লিকের অধীনে ক্লাসিকোয় বার্সার দাপট
গত মৌসুমে তিনটি ক্লাসিকোতেই হেরেছিল বার্সা। এবার হান্সি ফ্লিকের অধীনে তিনটি ক্লাসিকোতেই জয়। দু'সপ্তাহ পর আবার মুখোমুখি হবে দুই দল, তবে আপাতত ফ্লিকের ছেলেদের উদযাপনের পালা।

পেদ্রির গোলের মাধ্যমে দারুণ শুরু করেছিল বার্সা। দ্বিতীয়ার্ধে কিছুটা চাপে পড়লেও হার মানেনি। ফেরান তোরেস আর কুন্দের নৈপুণ্যে ঘুরে দাঁড়িয়ে শিরোপা নিশ্চিত করে তারা। 

ফ্লিকের দল এই বছর মাত্র একবার হেরেছে। সামনের সপ্তাহে চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে ইন্টার মিলানের বিপক্ষে লড়বে তারা। আর লা লিগাতেও রিয়ালের থেকে ৪ পয়েন্ট এগিয়ে আছে বার্সা।

বেঞ্চ থেকে নেমে বাজিমাত এমবাপের
ম্যাচের আগে থেকেই শোনা যাচ্ছিল, গোড়ালির চোটে কিলিয়ান এমবাপে পুরো ফিট নন। শুরুতেই তাকে বেঞ্চে রাখেন কোচ আনচেলত্তি। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে নেমেই ম্যাচে বদলে দেন এমবাপে।

৭০তম মিনিটে দুর্দান্ত ফ্রি-কিক থেকে গোল করে সমতা ফেরান ফরাসি সুপারস্টার। এটি ছিল তার ক্যারিয়ারের প্রথম সরাসরি ফ্রি-কিক গোল। এবারের মৌসুমে রিয়ালের চারটি ফাইনালেই গোল করেছেন এমবাপে, যদিও চ্যাম্পিয়নস লিগে হতাশ করেছেন।

তবে এমবাপে দেখিয়ে দিয়েছেন, সঠিক পরিবেশ আর ছন্দে থাকলে তিনি রিয়ালের বড় সম্পদ হতে পারেন।

রিয়াল মাদ্রিদের সামনে এখন কী?
এই মৌসুমে বার্সেলোনার কাছে হারের ধাক্কাই অনেকটাই রিয়াল মাদ্রিদের মৌসুম নির্ধারণ করে দিয়েছে। অক্টোবরে লিগে ৪-০ গোলে হারার পর থেকেই শিরোপার দৌড়ে এগিয়ে যায় বার্সা। জানুয়ারিতে সুপারকাপের ফাইনালে ৫-২ ব্যবধানে হার আবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, মুখোমুখি লড়াইয়ে এখন দুই দলের মধ্যে বড় একটা ব্যবধান রয়েছে।

তবে শনিবারের ফাইনাল ছিল অন্যরকম। দ্বিতীয়ার্ধে দুর্দান্তভাবে ম্যাচে ফিরেছিল মাদ্রিদ। গোল করে এগিয়েও যায় তারা। অতিরিক্ত সময়ে কুন্দের জয়সূচক গোল আসার আগ পর্যন্ত ম্যাচে টিকে ছিল তারা। দলের মানসিকতা ছিল প্রশংসনীয়। হার মেনে নেওয়ার কোনো লক্ষণ ছিল না, মৌসুম হাতছাড়া হওয়ার হতাশাও চোখে পড়েনি। মাদ্রিদ লড়াইয়ে ছিল শেষ পর্যন্ত।

তবে শেষমেশ আরেকটি ট্রফি হাতছাড়া হলো। চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে বিদায়ের ঠিক ১০ দিন পর কোপা দেল রেতেও শূন্য হাতে ফিরতে হলো। এখনও লা লিগার শিরোপা লড়াই বাকি। পাঁচ ম্যাচ হাতে রেখে বার্সার চেয়ে চার পয়েন্ট পিছিয়ে মাদ্রিদ। ১১ মে'র এল ক্লাসিকো হতে পারে সেই ম্যাচ, যা শিরোপার ভাগ্য গড়ে দেবে।

শনিবারের দ্বিতীয়ার্ধের পারফরম্যান্স অবশ্য আশাব্যঞ্জক ছিল। তবে দেখা এখন এই, দলটা আরেকবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে কি না, লা লিগার শেষ পর্যায়ে নিজেদের সেরাটা দিতে পারে কি না। সামনে কঠিন পরীক্ষা অপেক্ষা করছে, বিশেষ করে আগামী সপ্তাহে সেল্তা ভিগোর বিপক্ষে ম্যাচ।

যদি অনুমান মিলে যায়, আর মাদ্রিদ লিগে বার্সাকে টপকাতে ব্যর্থ হয়, তাহলে মৌসুম শেষ হবে কোনো বড় শিরোপা ছাড়াই। আর রিয়াল মাদ্রিদের মতো ক্লাবে ট্রফিহীন মৌসুম মানেই প্রায় নিশ্চিতভাবে কোচের চাকরি হারানোর শঙ্কা।

কার্লো আনচেলত্তি অবশ্য জানিয়েছেন, মৌসুম শেষে বসে সবকিছু বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে কোপা দেল রে ফাইনালের এই হার পারফরম্যান্স যত ভালোই হোক, পরিবর্তনের দাবিকে আরও একটু জোরালো করল।