images

স্পোর্টস / ফুটবল

পোপ ফ্রান্সিস যেভাবে শান্তির বার্তাবাহক হিসেবে ফুটবলকে ব্যবহার করতেন

স্পোর্টস ডেস্ক

২২ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৩৪ এএম

পূর্বসূরি পোপ বেনেডিক্ট যিনি মোৎসার্টের সংগীত ভালোবাসতেন, তার চেয়ে একেবারে আলাদা ছিলেন বর্তমান পোপ ফ্রান্সিস। আর্জেন্টিনার এই যাজক ছোটবেলা থেকেই ভালোবাসতেন ফুটবল। তার ভাষায়, 'বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর খেলা।' 

শুধু খেলার প্রতি ভালোবাসা নয়, পোপ ফ্রান্সিস বিশ্বাস করতেন ফুটবল সমাজে শিক্ষা, শান্তি এবং ঐক্যের বার্তা পৌঁছে দিতে পারে। এই লক্ষ্যেই ২০১৪ সালে রোমের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে তাঁর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় ‘ইন্টার-রিলিজিয়াস ম্যাচ ফর পিস (শান্তির জন্য আন্তঃধর্মীয় ম্যাচ)’। যা বিভিন্ন ধর্মের তারকা ফুটবলারদের অংশগ্রহণে একটি ঐতিহাসিক ম্যাচ।

২০১৯ সালে তিনি বলেছিলেন, ‘অনেকে বলে, ফুটবল পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর খেলা। আমিও তাই মনে করি’। ২০১৩ সালে ইতালি ও আর্জেন্টিনার জাতীয় দলকে তিনি মনে করিয়ে দেন তাদের সামাজিক দায়িত্বের কথা। বলেছিলেন, ‘ব্যবসার মোহে না হারিয়ে খেলাটাকে সম্মান করতে হবে’। তার ভাষায়, ‘ধর্ম বা ফুটবল;উভয়েরই উদ্দেশ্য নিজের চেয়ে বড় কিছুর জন্য কাজ করা’।

শৈশবে তিনি বুয়েনোস আইরেসের রাস্তায় খেলতেন ছেঁড়া কাপড়ের তৈরি বল দিয়ে, ছিলেন দলের গোলকিপার। নিজের সম্পর্কে হাসতে হাসতে বলতেন, ‘আমি সেরাদের একজন ছিলাম না, আমার যেন দুই পা-ই বাঁ।’ কিন্তু গোলকিপার হিসেবে খেলতেন বেশি। তার ভাষায়, ‘এতে শিখেছি, বিপদ যে কোনো দিক থেকে আসতে পারে, সেটার জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়’।

ফ্রান্সিসের প্রিয় ক্লাব ছিল সান লরেনজো, যেটির সদস্যপদ তিনি পোপ হওয়ার পরও বজায় রেখেছেন। এমনকি ভ্যাটিকানের এক সুইস গার্ড নিয়মিত ক্লাবের খেলার ফলাফল ও পয়েন্ট টেবিল তাঁর ডেস্কে রেখে যেতেন।

বিশ্বখ্যাত খেলোয়াড়দের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়েছে বহুবার। লিওনেল মেসি, ডিয়েগো ম্যারাডোনা, বুফন, ইব্রাহিমোভিচসহ আরও অনেকেই ভ্যাটিকানে এসেছেন পোপের সঙ্গে দেখা করতো। মেসিকে তিনি ‘একজন ভদ্রলোক’ বলে আখ্যা দিলেও, মারাদোনার প্রতি ভালোবাসার মধ্যেও তিনি স্বীকার করেন, ‘খেলোয়াড় হিসেবে অসাধারণ ছিলেন, কিন্তু মানুষ হিসেবে ব্যর্থ।’

২০২৪ সালে প্রকাশিত তাঁর আত্মজীবনীতে ম্যারাডোনাকে উৎসর্গ করা একটি পুরো অধ্যায় রয়েছে। সেখানে ম্যারাডোনার বিখ্যাত 'হ্যান্ড অফ গড' গোল নিয়ে মজার ছলে বলেছেন, ‘তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, বলো তো কোন হাতটা দোষী?’

পোপের মতে, খেলাধুলা এবং ধর্ম উভয়েরই মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত স্বার্থপরতা ছেড়ে গোষ্ঠীগত কল্যাণকে অগ্রাধিকার দেওয়া। ‘আমরা সবাই এমন কিছুর সেবা করি যা আমাদের ব্যক্তিগত সীমার বাইরে, আমাদের সামষ্টিকভাবে উন্নত করে,’ বলেছিলেন ফ্রান্সিস।