images

স্পোর্টস / ক্রিকেট

টি-টোয়েন্টিতে শেষ হল পঞ্চপাণ্ডবের অধ্যায়

সালমান ইসলাম

০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:৩১ পিএম

বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। এর মধ্যে ২০০৭ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে এক নতুন অধ্যায় রচিত হয়। নিজেদের প্রথম ম্যাচেই শক্তিশালী ভারতকে হারিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করে টাইগাররা। আর সেই জয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন মাশরাফি বিন মর্তুজা, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিম। সেদিন বিশ্বকে নতুন বাংলাদেশের আগমনী বার্তা দিয়েছিলেন তারা। পরের বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের। আগের চার তারকাসহ রিয়াদ একসঙ্গে মিলে পঞ্চপাণ্ডব হতে আরও কয়েকবছর লেগে যায়। অবশেষ এই পঞ্চপাণ্ডবের ১৮ বছরের অধ্যায় শেষ হলো আজ রিয়াদের অবসরের মধ্যে দিয়ে।  

২০০৮ সাল থেকেই মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিক ও রিয়াদ- এই পাচঁজন ক্রিকেটারকে এক সঙ্গে বাংলাদেশের জার্সি গায়ে ক্রিকেট খেলতে দেখা যায়। তাদের বাড়তি বয়সের সাথে বাড়ে দায়িত্ব, একটা সময় তারা বাংলাদেশ ক্রিকেটের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার মানদন্ডে সেরা পাঁচ ক্রিকেটার বিবেচিত হতে থাকেন। বাংলাদেশের ক্রিকেটে এই পাঁচজনকে নিয়ে ভক্তরা ও বিশ্লেষকরা আলাদাভাবে ভাবতে থাকেন। গণমাধ্যমে তাদের 'পঞ্চপান্ডব' নামে অভিহিত করা হয়।

bangladesh_cricket_panchopandab_t20পঞ্চপাণ্ডবের হাত ধরে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ঘুরে দাঁড়ানোর সূচনা করে। একসময় বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশের পরিচয় ছিল ‘মিনোজ’। বড় দলের সঙ্গে লড়াই করতে পারলেই তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতো অনেকে। বেশিরভাগ ম্যাচে বাংলাদেশ হারতো বিনা লড়াইয়ে। সেসব অন্ধকার দিন পেরিয়ে আলোর পথে যাত্রা শুরু এই পাঁচ তারকার সৌজন্যে।

বিদায়ের বেহাগ বাজবে। আবেগপ্লুত থাকবেন অবসর নিতে যাওয়া ক্রিকেটার। দর্শকরা অভিনন্দন জানাবেন মাঠের বাইরে সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য। ভদ্রলোকের খেলা ক্রিকেটে এটাই রীতি। বিরাট কোহলির মতো তারকাও টি-টোয়েন্টি ছেড়েছেন বিশ্বকাপ জিতে, মাঠ থেকে সতীর্থদের কাঁধে চেপে। তবে বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের সেই সৌভাগ্য হয় না বললেই চলে। বাংলাদেশের অন্যতম সফল খেলোয়াড় ধরা হয় পঞ্চপাণ্ডবকে। এই পাঁচজনেরই বিদায়টা হয়েছে অভিমান-সমালোচনা আর আকস্মিকভাবে। তাতে বেদনাহতই হয়েছেন সমর্থকরা।

বাংলাদেশ ক্রিকেটে এই পঞ্চপাণ্ডবের মধ্যে ছোট ফরম্যাটের এই খেলা থেকে সর্বপ্রথম অবসর নেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। ২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টুয়েন্টিতে সিরিকে টসে এসে অবসরের ঘোষণা দেন বাংলাদেশের সর্বকালের অন্যতম সেরা অধিনায়ক মাশরাফি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২০০৬ সালে টি-টুয়েন্টিতে অভিষেক হওয়া নড়াইল এক্সপ্রেসের ক্যারিয়ার ছিলো ৫৪ ম্যাচের। যেখানে তার উইকেট ৩৯টি। ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ১৯ রানে চারটি। এই ফরম্যাটে ব্যাট হাতে সর্বোচ্চ ৩৬’র সঙ্গে ১৩.৪৬ গড়ে মোট ৩৭৭ রান তার।

2_mashএরপর এই অবসরের তালিকায় যোগ হয়ে থাকেন তামিম ইকবাল। ২০২২ সালে জুলাইয়ে নানামুখী আলোচনার পর অবসরের ঘোষণা দেন টাইগার এই বাঁহাতি ওপেনার। ২০০৭ সালে কেনিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে পদার্পণ হয় তামিম ইকবালের। এরপর জাতীয় দলের জার্সি গায়ে শর্টার ফরম্যাটের ৭৮টি ম্যাচ খেলেছেন বাঁহাতি এই ওপেনার। ৭৮ ম্যাচে তার ব্যাট থেকে এসেছে ১ হাজার ৭৫৮ রান। যেখানে তার রয়েছে সর্বোচ্চ ১০৩ রানে অপরাজিত থাকার একটি ইনিংস। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বাঁহাতি এই ওপেনারের গড় ২৪.০৪ ও স্ট্রাইক রেট ১১৬.৯৬। এই ফরম্যাটে তামিমের রয়েছে একটি সেঞ্চুরি ও ৭টি হাফ সেঞ্চুরি।

28_tamimমাঠ থেকে বা সতীর্থদের কাঁধে চেপে বিদায় হয়নি মুশফিকুর রহিমও। ২০২২ সালে এশিয়া কাপের ব্যর্থতার সমালোচনায় দেশে ফিরেই হঠাৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অবসর ঘোষণা দেন মুশি। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে তিনি ১০২টি টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে ১৯.৪৮ গড়ে তার ক্যারিয়ার শেষ করেন। যেখানে রান সংগ্রহ করেছেন ১৫০০। স্ট্রাইক রেট ১১৫.০৮, আর পঞ্চাশ রানের ইনিংস রয়েছে তার ঝুলিতে মোট ৬টি। বাংলাদেশের জার্সিতে মুশফিক প্রথম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলেন ২০০৬ সালে, খুলনায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে।

15_mushfiqসাকিব আল হাসান বাংলাদেশের ক্রিকেট নিউক্লিয়াস বললেও ভুল হবে না। এই টাইগার অলরাউন্ডারের নিজের পারফরমেন্সে লাল-সবুজ এই পতাকাকে ক্রিকেটের অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেয়েছন। সারা বিশ্বে বাংলাদেশের ক্রিকেট পঞ্চপাণ্ডবের হাত ধরে যত উচায় নিয়ে গেয়েছেন, তার অর্ধেকংশ যে সাকিবের হাত ধরে গিয়েছে তা বললে ভুল নয়! কিন্তু টাইগার এই অলরাউন্ডারের টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিয়েছেন মাঠ থেকে বা সতীর্থদের কাঁধে চেপে না বসেই। 

জাতীয় দলের ক্রিকেটের শেষ বয়সে এসে রাজনৈতিকে নাম লেখান সাকিব আল হাসান। তবে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে সরকারে বিদায়ে টাইগার এই অলরাউন্ডারের নামের পাশে আসে হত্যা মামলা। একই সঙ্গে সাকিব সমস্যায় পরেন তার চোঁখ নিয়ে। ফলে নানা সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। এরই মধ্যে ভারতের বিপক্ষে চলতি বছরে কানপুর টেস্টে মাঠে নামার আগে সংবাদ সম্মলনে এসে টি-টোয়েন্টির অবসরের কথা জানান তিনি। তিনি জানান, ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সে তার শেষ টি-টোয়েন্টি খেলে ফেলেছেন।

75_Shakib২০০৭ টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক হয় সাকিবের। এই পর্যন্ত ৭০ টেস্ট ৩৮.৩৩  গড়ে করেছেন ৪ হাজার ৬০০ রান। করেছেন ৫ সেঞ্চুরি ও ৩১টি হাফ সেঞ্চুরি। এছাড়া ৩১.৮৫ গড়ে ২৪২ উইকেট নিয়েছেন। অন্যদিকে ২০০৬ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হওয়া সাকিবের ১২৯ ম্যাচে ২ হাজার ৫৫১ রান ছাড়াও বল হাতে নিয়েছেন ১৪৯ উইকেট।

পঞ্চপাণ্ডবের ভিতরের মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে বলায় 'সাইলেন্ট কিলার'। একমাত্র রিয়াদ অবসরের কথা ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে এসে আজ জানালেন দুই ম্যাচ আগে থেকে। আজ মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয়  টি-টোয়েন্টি ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে এসে এই সিরিজ দিয়ে অবসরের কথা জানান তিনি। ২০০৭ সালে টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হয় রিয়াদের, কেনিয়ার নাইরোবিতে। তারপর বাংলাদেশের জার্সিতে খেলেছেন ১৩৯ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি। সব ঠিক থাকলে থামবেন ১৪১ ম্যাচ খেলে। নামের পাশে প্রায় আড়াই হাজার রান; পার্টটাইম হাত ঘুরিয়ে নিয়েছেন ৭ এর সামান্য বেশি ইকোনমিতে চল্লিশ উইকেট।
30_Mahmudullah_riyadরিয়াদের এই বিদায়ের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটে পঞ্চপাণ্ডবের ১৮ বছরের অধ্যায়ের ইতি টানল। তবে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে খুব একটা ভালো যায়নি পঞ্চপাণ্ডবের যাত্রা। একসঙ্গে ২৯ ম্যাচ খেলে ১টি পরিত্যক্ত ম্যাচ বাদে ১২টি জয়ের বিপরীতে পরাজয়ের সংখ্যাই ১৬ ম্যাচে। তবু এর মধ্যে রয়েছে ২০১৬ সালের এশিয়া কাপে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে ফাইনাল খেলার মতো সুখস্মৃতি।