images

স্পোর্টস / ক্রিকেট

ছোট ফরম্যাটের ক্রিকেটে বড় যত অঘটন

স্পোর্টস ডেস্ক

০১ জুন ২০২৪, ০৮:৫৭ পিএম

২০০৭ আসর থেকে টি-টোয়েন্টির বিশ্বকাপের সূচনা হলেও এর আকাশ ছোঁয়া জনপ্রিয়তা তখনও হয়নি। প্রথম আসরের ফাইনালে ভারত-পাকিস্তানের উত্তেজানপূর্ণ ম্যাচ দেখে ধীরে ধীরে এই সংস্করণের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে। দর্শকরাও সময়ের সঙ্গে চার-ছক্কার ফুলঝুঁড়ি আর ধুম-ধারাক্কা ক্রিকেট দেখতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। ২০০৭ সাল থেকে ২০২৪। পেরিয়ে গেছে প্রায় দেড় যুগ।

এই দীর্ঘ সময়ে ৮ বার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের উন্মাদনায় মেতেছে ক্রিকেট দুনিয়া। ফেলে গেছে নানা জানা অজানা ঘটনা, সেই সঙ্গে রয়েছে বিভিন্ন রকমের অঘটন। দেখা নেওয়া যাক ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে শুরু হওয়া নানা অঘটনের কিছু চিত্র—

zim_aus_2007

জিম্বাবুয়ে বনাম অস্ট্রেলিয়া (২০০৭)

ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয়ের পর বেশ ফুরফুরে মেজাজেই প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে আসে রিকি পন্টিংয়ের অস্ট্রেলিয়া। প্রথম বিশ্বকাপেই ফেভারিট অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে অঘটনের জন্ম দেয় জিম্বাবুয়ে। সেবার অস্ট্রেলিয়াকে পাঁচ উইকেটের ব্যবধানে হারিয়ে ক্রিকেট বিশ্বকে চমকে দেয় প্রোস্পার উৎসেয়ার জিম্বাবুয়ে।

প্রথমে ব্যাট করতে নেমে এল্টন চিগুম্বুরা, গ্যারি ব্রেন্টের দুর্দান্ত বোলিংয়ে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৩৯ রান তুলে অস্ট্রেলিয়া। ১৪০ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে ব্রেট লি, নাথান ব্র্যাকেনদের মতো পেসারদের পাত্তাই দেয়নি জিম্বাবুয়ের ওপেনিং ব্যাটার ব্রেন্ডন টেইলর। ৪৫ বলে ৬০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে ১ বল বাকি থাকতেই দলকে এনে দেন ৫ উইকেটের জয়। আর এতেই প্রথম বিশ্বকাপেই দেখা মেলে এক বড় অঘটনের।

ned_vs_eng_2009

নেদারল্যান্ডস বনাম ইংল্যান্ড (২০০৯)

২০০৯ সালে ইংল্যান্ডে বসে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দ্বিতীয় আসর। সেই টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচেই স্বাগতিক ইংলিশদের হারিয়ে অঘটনের জন্ম দেয় নেদারল্যান্ডস। লর্ডসে অনুষ্ঠিত ম্যাচে ইংলিশদের ছুঁড়ে দেওয়া ১৬৩ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৪ উইকেট হাতে রেখেই জয় তুলে নেয় ডাচরা।

প্রথমে ব্যাট করতে নেমে রবি বোপারার ৪৬ ও লুক রাইটের ৭১ রানে ভর করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৬২ রান তোলে স্বাগতিক ইংল্যান্ড। জবাবে ব্যাট করতে নেমে টম ডি গ্রুথের ৪৯, পিটার বোরেনের ৩০ এবং রায়েন টেন ডাসকেটের ২২ রানে ভর করে রোমাঞ্চকর ম্যাচের শেষ বলে জয় তুলে নেয় নেদারল্যান্ডস।

এর পাঁচ বছর পরে আবারও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মুখোমুখি হয় ইংল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডসের। ২০১৪ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হওয়া এই বিশ্বকাপেও নেদারল্যান্ডসের কাছে শোচনীয়ভাবে হেরে যায় ইংলিশরা। ডাচদের ছুঁড়ে দেওয়া ১৩৪ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ৮৮ রানে অলআউট হয়ে যায় ইংলিশরা। এতেই ৪৫ রানের বড় জয় পায় নেদারল্যান্ডস।

hongkong_vs_bangladesh_2010

হংকং বনাম বাংলাদেশ (২০১৪)

৮০ রানে নেপালের কাছে ও ৭ উইকেটে আফগানিস্তানের কাছে হেরে সেবার টুর্নামেন্ট শুরু করে হংকং। স্বভাবতই সেই ম্যাচে বাংলাদেশ ছিল ফেভারিট। কিন্তু হংকং টুর্নামেন্ট শেষ করে মাথা উঁচু রেখে। টাইগারদের বিপক্ষে তুলে নেয় ২ উইকেটের জয়। স্পিনার নাদিম আহমেদের ৪ উইকেট ও নিজাকাত খানের ৩ উইকেট বাংলাদেশকে ১০৮ রানে থামাতে বড় অবদান রাখে। ব্যাটিংয়ে নেমে ওপেনার ইরফান আহমেদ ও মুনির দার  দলকে জয়ের বন্দরে পৌছে দেন।

afg_vs_west

আফগানিস্তান বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ (২০১৬)

ভারতের নাগপুরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে মাত্র ১২৪ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দিয়েও শেষ পর্যন্ত জয় তুলে নেয় আফগানিস্তান। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নাজিবুল্লাহ জাদরানের ৪০ বলের ৪৮ রানের ইনিংসে ভর করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১২৩ রান করে আফগানিস্তান। জবাবে ব্যাট করতে নেমে জনসন চার্লস, ডোয়ায়েন ব্রাভো, আন্দ্রে রাসেল ও মারলোন স্যামুয়েলসের মতো ব্যাটারদের আটকে দেয় আফগান বোলাররা। মোহাম্মদ নবী, আমির হামজা এবং রশিদ খান মিলে নেন পাঁচ উইকেট। তাতেই মাত্র ৬ রানের ব্যবধানে হেরে বসে ওই আসরের চ্যাম্পিয়নরা।

sco_vs_bb

স্কটল্যান্ড বনাম বাংলাদেশ (২০২১)

বিশ্বকাপের মূল পর্বে সরাসরি খেলার সুযোগ পায়নি বাংলাদেশ। বাছাইপর্বে দুই গ্রুপে থাকা বাংলাদেশ আর শ্রীলঙ্কাকেই ফেবারিট ধরে নিয়েছিল সবাই। ছয় দলের মধ্যে টেস্ট খেলুড়ে দেশ তো এই দুটিই। কিন্তু সেই ফেবারিট বাংলাদেশকে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে স্কটল্যান্ড।

বিশ্বকাপের দ্বিতীয় ম্যাচেই বাংলাদেশকে আটকে দেয় স্কটল্যান্ড। প্রথমে ব্যাটিং করে ১৪১ রানের টার্গেট দিয়েছিল স্কটল্যান্ড। কিন্তু সেই রান তাড়া করতে গিয়েই হিমশিম খেতে হয় বাংলাদেশের ব্যাটারদের। শেষ পর্যন্ত ৬ রানে জিতে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয় স্কটল্যান্ড। সেই টুর্নামেন্টে প্রথম পর্বের সব ম্যাচ জিতে সুপার টুয়েলভে ওঠে স্কটল্যান্ড। সুপার টুয়েলভে কোনো ম্যাচ জিততে না পারলেও বেশ ভালো লড়াই করেছিল তারা।

sri_vs_nam

শ্রীলঙ্কা বনাম নামিবিয়া (২০২২)

বিশ্বকাপের অষ্টম আসরের উদ্বোধনী ম্যাচেই গোটা ক্রিকেট মহলকে চমক দেয় নামিবিয়া। আসরের প্রথম দিনের ম্যাচেই সেবারের এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে ৫৫ রানের জয় পায় নামিবিয়া। তাদের এমন জয়ের পর ভারতের কিংবদন্তি তারকা ক্রিকেটার শচীন টেন্ডুলকারের টুইট করে জানিয়েছিলেন— ‘নামিবিয়া ক্রিকেট বিশ্বকে জানান দিলো, নামটা মনে রেখো।’

নামিবিয়ার সঙ্গে ২০২২ সালের এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়নদের ম্যাচটি ছিল একপ্রকার ডেভিড-গোলিয়াথের লড়াই। সেই ম্যাচেই কিনা ঘটল বিশ্বকাপ ইতিহাসের অন্যতম অঘটন। নামিবিয়ার ১৬৩ রানের জবাবে এক ওভার বাকি থাকতে ১০৮ রানে গুটিয়ে অসহায় আত্মসমর্পণ করে শ্রীলঙ্কা।