images

স্পোর্টস / ক্রিকেট

আঞ্চলিক পর্যায় থেকে আন্তর্জাতিক ধারাভাষ্যে অভিষেক রোজেল আহমেদের

স্পোর্টস ডেস্ক

০৩ মে ২০২৪, ০২:২৩ পিএম

ছোট বেলা থেকেই ক্রিকেটের প্রতি ভালবাসা ছিল প্রখর। মায়ের বানানো কাঠের ব্যাট দিয়ে ক্রিকেটে হাতেখড়ি। তারপর সময় পেরিয়ে বয়স যখন ৮ তখন বাসায় ছিল সাদাকালো টেলিভিশন । তখন ভারত-পাকিস্তানের খেলা দেখাতো বাংলাদেশ টেলিভিশনে। তাই দেখে ক্রিকেটের প্রতি ঝোঁকটা আরও বাড়ল। রোজেলের বাবা লেখাপড়া নিয়ে বেশ কড়াকড়ি করতেন বিধায় বাসায় তখনও ডিশ ছিলো না। ডিশ না থাকলেও কারিগরি বুদ্ধি রোজেলের কম ছিলো না। পাশের বাসার ডিশের তারের উপর নিজের বাসার এন্টেনার দুই প্রান্ত লাগিয়ে দিলে হালকা আবছা আবছা করে টেন স্পোর্টস চ্যানেল টা এসেছিলো, দেখলেন অস্ট্রেলিয়া ব্যাটিং করছে।

অস্ট্রেলিয়ার খেলা দেখে তার বেশ ভালই লাগলো, তখন সিদ্ধান্ত নিলো অস্ট্রেলিয়াকেই সাপোর্ট করবে। ছোটবেলায় ভাল ক্রিকেট খেলার জন্য শারীরিক শিক্ষা শিক্ষক মাসুম স্যার তাকে সিলেক্ট করলো। জিলা স্কুল টিমের জন্য পাঠালো ময়মনসিংহ সার্কিট হাউসের অলক (কোচ) দার কাছে। কিন্তু তার বাবার কথা পড়ালেখা ঠিক রেখে খেলতে হবে। সে তখন ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। ক্লাস এবং প্র্যাকটিস করে এসে আর লেখাপড়া করার মতো শক্তি থাকতো না, বাসায় এসেই ঘুমিয়ে পড়ত। তার বাবা তাকে আর প্র্যাকটিসে যেতে দিল না। সেই সাথে তার ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল।  

ষষ্ঠ শ্রেণিতে ক্যাডেট কলেজে ভর্তির জন্য রোজেল ইংরেজি পড়ত হাবুল স্যারের কাছে। হাবুল স্যার মাঝে মাঝে ইংরেজিতে ক্লাস নিতেন। তাই দেখে তার ইংরেজির প্রতি ভালবাসা জন্মালো। সে বাসায় নিজে নিজে, আয়নার সামনে দাড়িয়ে এবং রাস্তায় চলতে ফিরতে ইংরেজি প্র্যাকটিস করতে লাগলো। প্রথমে অনেক ভুল বলতো, কখনো ভুল অর্থ হত, কখনো ভুল কালের প্রয়োগ করতো। কিন্তু সে হাল না ছেড়ে ধৈর্যের সাথে প্র্যাকটিস করতে থাকলো। সাথে অস্ট্রেলিয়ার সমর্থক হওয়ায় অস্ট্রেলিয়ার ধারাভাষ্যকারদের ধারাভাষ্য শুনে আরও প্র্যাকটিস করতে থাকলো। যখন সে দশম শ্রেণির ছাত্র তখন তার এলাকার এক বড় ভাই তাকে নিয়ে গেলো নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার একটা টুর্নামেন্টে ধারাভাষ্য দেওয়ার জন্য। সেখানে উপস্থিত ছিল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, চেয়মকরতাসহ আরও অনেক গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ। অনেকেই প্রশংসা করলো, আবার অনেকেই বলল ইংরেজিতো সবাই বুঝে না, বাংলায় করলেই ভালো হতো কিন্তু তখনও রোজেল বাংলা ধারাভাষ্য পারতো না যেহেতু সে ইংরেজি ধারাভাষ্যই শুনে শুনে শিখেছে।

1696615169231

এই বছরেই সে স্পেলিং বী, বাংলাদেশ নামক এক প্রতিযোগিতায় জোনাল রাউন্ড থেকে নির্বাচিত হয়ে ডিভিশনাল রাউন্ডে শীর্ষ ৫৪ জনের মধ্যে থেকে প্রতিযোগিতা শেষ করে। ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে নটর ডেম কলেজ ইংলিশ ক্লাব আয়োজিত ন্যাশনাল ইংলিশ কার্নিভালে রোজেল উপস্থিত বক্তৃতায় ২য় এবং ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের হয়ে ১ম হয়। ২০১৩ সালে দশম শ্রেণিতে থাকাকালীন শারিরিক শিক্ষা শিক্ষক কাশেম স্যার বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার ইংরেজিতে উপস্থাপনা করার সুযোগ করে দিল। আন্তঃস্কুল ফুটবল প্রতিযোগিতার ফাইনাল ম্যাচে তার হাতে মাইক তুলে দিলেন কাশেম স্যার। কলেজে উঠার পর আন্তঃকলেজ ফুটবল প্রতিযোগিতার ফাইনাল ম্যাচেও সে ইংরেজিতে ধারাভাষ্য দিয়ে অনেকের প্রশংসা অর্জন করলো।

২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিলো “ফ্রেশ প্রেজেন্টস;স্বাধীন কমেন্টেটর হান্ট অরগানাইজড বাই রেডিও স্বাধীন”। সারাদেশের টপ ৩৫ জনের একজন ছিলো রোজেল। সেখান থেকে ভয়েজ অব আমেরিকা বাংলাদেশের সাংবাদিক অমৃতর সাথে পরিচয় হয়। যার সহায়তায় ২০১৮ সালের নভেম্বেরে তৎকালীন “লাস্ট ম্যান স্ট্যান্ডস বাংলাদেশ” এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর রিফাতুল ইসলাম, হাসিব আহমেদের মাধ্যমে প্রফেশনাল কমেন্ট্রিতে সুযোগ পায়।

1696659670078

এরপর ২০১৯ শালের ৩০ মে তে শুরু হওয়া “আইসিসি ক্রিকেট বিশকাপ ২০১৯” এ বাংলা ধারাভাষ্যে সে সুযোগ করে নেয়। করোনা মহামারী শুরু হওয়ার পর অনেকদিন তার ধারাভাষ্য বন্ধ থাকে। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রোজেল যোগ দেন রেডিও ভুমিতে। অনেকদিন কাজ করার পর ২০২১ এ আবারো লকডাউন থাকায় ধারাভাষ্যে বিরতি পরে যায়। এ বছরই তার নিজের স্কুলের “থার্ড এমজেডএস এলামনাই ক্রিকেট টুর্নামেন্ট অরগানাইজড বাই এমজেডএস এক্স স্টুডেন্টস স্পোর্টস ক্লাব” এ ধারাভাষ্য দিয়ে বেশ সুনাম অর্জন করে।

IMG_20220304_222929

২০২১ এর অক্টোবরে “টিস্পোর্টস হান্ড্রেড বলস কর্পোরেট ক্লেশ” টুর্নামেন্টে সুযোগ পান তিনি। তারপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একে একে ওয়াল্টন কর্পোরেট টি টুয়েন্টি টুর্নামেন্ট অর্গানইজড বাই টিকে স্পোর্টস, লাইফ স্প্রিংস ডমিনেটরস কাপ, বঙ্গবন্ধু ফোর নেশন্স ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড ক্রিকেট টুর্নামেন্ট, প্র বক্সিং দি আলটিমেট গ্লোরি, ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগ, বঙ্গবন্ধু আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় সাঁতার চ্যাম্পিয়নশিপ, হকি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, বসুন্ধরা কিংস ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশিপ এ ধারাভাষ্য দিয়ে ক্রীড়া মহলে বেশ পরিচিতি লাভ করে। ২০২১, ২০২২ এবং ২০২৩ সালে টানা তিনবার সে “বিজিএমইএ কাপ” ফুটবল টুর্নামেন্টে খেলোয়াড়দের নিলাম পরিচালনা করে।

যে স্বপ্ন ছোট বেলা থেকে দেখতেন রোজেল যে একদিন আন্তর্জাতিক ধারাভাষ্যকার হবেন তিনি, অবশেষে সেই দিনটা আসলো ২০২৪ সালের ৩১ মার্চ “বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল বনাম অস্ট্রেলিয়া নারী ক্রিকেট দলের” টি-টোয়েন্টি সিরিজে। আর এই সুযোগটা করে দেন অস্ট্রেলিয়া ট্যুর অব বাংলাদেশের ব্রডকাস্টার “সাইলেন্ট মিডিয়া” এর সিইও রবি হোসাইন নীরব এবং প্রখ্যাত ধারাভাষ্যকার কুমার কাল্যান। এই সিরিজের ২টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে রোজেল ধারাভাষ্য করেন। ভবিষ্যতে মেন্স ইন্টারন্যাশনাল, আইসিসির টুর্নামেন্টসহ অ্যাশেজ সিরিজে ধারাভাষ্য দেওয়ার স্বপ্ন দেখেন তিনি।