স্পোর্টস ডেস্ক
০৪ জানুয়ারি ২০২৪, ১১:৫২ এএম
অস্ট্রেলিয়া সফরে সাদা পোশাকের সিরিজের প্রথম দুইটিতেই হেরেছে পাকিস্তান। ধবলধোলাই এড়ানোর লক্ষ্যে গতকাল সিরিজের তৃতীয় এবং শেষ টেস্টে সিডনিতে মাঠে নামে শান মাসুদের দল। তবে এদিনও ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে ৯৬ রানেই ৫ উইকেট হারিয়েছিল সফরকারীরা। এরপরও শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান যে প্রথন ইনিংসে ৩১৩ রানের সংগ্রহ গড়ে তার বড় কৃতিত্বের দাবীদার পেসার আমির জামাল।
পাকিস্তানি বোলার নয় নম্বরে নেমে কাল খেলেছেন ৮২ রানের এক দায়িত্বশীল ইনিংস যার সুবাদে লড়াকু পুঁজি পায় সফরকারীরা। এর আগে পার্থে সিরিজের প্রথম এবং নিজের অভিষেক টেস্টেও জাদু দেখিয়েছিলেন জামাল। প্রথম ইনিংসেই ৬ উইকেট নেয়ার পাশাপাশি দ্বিতীয় ইনিংসেও পেয়েছিলেন ১ উইকেট।
দুর্দান্ত এই বোলার দ্বিতীয় ম্যাচে মেলবোর্নেও বল হাতে ছিলেন উজ্জ্বল, প্রথম ইনিংসে ৩ উইকেট এবং দ্বিতীয় ইনিংসে নেন ২ উইকেট। মেলবোর্নে প্রথম ইনিংসে ব্যাট হাতে ৩৩ রান করে অপরাজিতও ছিলেন তিনি। সাদা পোশাকে পাকিস্তানের হয়ে অভিষেকের পরই দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে ওঠেছেন তিনি।
তবে জাতীয় দলের ক্রিকেটার হওয়ার পথে জামালের এই যাত্রা কখনোই সহজ ছিল না। প্রচণ্ড আত্মত্যাগ, দৃঢ় প্রতিজ্ঞা আর স্বপ্নের কারণেই নিজেকে এই অবস্থানে আনতে পেরেছেন তিনি। এ পথে তাকে থামতে হয়েছে বেশ কয়েকবার, স্বপ্নকে বাজি রেখে পরিবারের হাল ধরতে হয়েছে, ট্যাক্সি চালিয়ে রুটিরুজির জোগাড় করতে হয়েছে।
১৯৯৬ সালে পাকিস্তানের মিয়াওয়ালিতে জন্মগ্রহণ করেন জামাল। জাতীয় দলের ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন নিয়েই পেশাদার ক্রিকেটের পথে আসেন তিনি। ২০১৪ সালে খেলেন পাকিস্তান অনূর্ধ্ব-১৯ দলেও। কিন্তু এরপর চার বছরেও প্রথম বিভাগ ক্রিকেকেটে খেলতে পারেননি তিনি।
এদিকে অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল না হওয়ায় অনূর্ধ্ব-২৩ দলে খেলার সুযোগও হাতছাড়া হয় তাঁর। তবুও আশা ছাড়েননি তিনি। পরিবারের প্রতি দায়িত্ব পালন করতেই অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে ট্যাক্সি চালিয়েছেন। তবুও ক্রিকেট অনুশীলন ছাড়েননি। সংগ্রামের এসব কথা কদিন আগে নিজেই জানিয়েছেন জামাল।
পাকিস্তানি এই পেসার বলেন, আমি ভোর ৫টা থেকে সকাল সাড়ে দশটা পর্যন্ত ট্যাক্সি চালাতাম । এরপর ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত বোলিং অনুশীলন করে আবার আবার ২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত রাইড। এসব করে ঠিক মত অনুশীলনের সময় বের করতে পারতেন না বলেও জানিয়েছেন জামাল।
জামাল বলেন, এসব কষ্টই আমাকে সময়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে শিখিয়েছে। এটাও বুঝিয়েছে জগতে সবকিছুরই মূল্য আছে। যখন আপনি কঠোর পরিশ্রম করে কিছু অর্জন করবেন তখন সবকিছুকে মূল্য দিতে শিখবেন।
এদিকে সংগ্রামের এই যাত্রায় অনেকেই তাকে স্বপ্ন বিসর্জন দেয়ার পরামর্শও দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। জামাল বলেন, অনেকে আমাকে ক্রিকেট খেলা বন্ধ করে দিতে বলেছিল। সবাই বলতো আমি যে ক্রিকেট খেলি তাতে কোনো আশা নেই। আর আমি বরাবর বলতাম, আশা সব সময়ই থাকে। তার জন্য শুধু এগিয়ে যেতে হবে। কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। বাকিদের থেকে অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হবে।
আর সবার চেয়ে বেশি পরিশ্রম করেই আজ পাকিস্তান দলে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন এই পেসার। অভিষেক টেস্টেই অজিদের বিপক্ষে ৫ উইকেট শিকারের পাশাপাশি ব্যাট হাতেও নিজের সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছেন তিনি। স্বপ্নজয়ের পথে বাধা এলেও প্রবল আশা আর নিজের প্রতি বিশ্বাসকে সঙ্গী করেই পথ চলেছেন। আর তাই স্বপ্ন পরিণত হয়েছে বাস্তবে। তাই তো স্টিয়ারিং হুইলের চাকা ঘুরিয়ে যে হাত একসময় রুটি-রুজির যোগাড় করতো সেই হাতেই আজ দেশের জন্য বয়ে আনছেন সম্মান।