সালমান ইসলাম
২৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৮:২৮ এএম
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের বয়স ৫০ পূর্ণ হয়নি, বাকি এখনও কয়েক বছর। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাস আরেকটু পুরনো হলেও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পথচলা শুরু ১৯৭৭ সালে। সে বছর বাংলাদেশে আসে ঐতিহাসিক মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাব (এমসিসি)। ঢাকা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত বর্তমানে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ওই ম্যাচটিকেই ধরা হয় বাংলাদেশের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ। দীর্ঘ এই সময়ে মিলেছে অনেক প্রাপ্তিই। আবার আছে লক্ষ্যে পৌঁছাতে না পারার হতাশাও। আজ থাকছে ২০২৩ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেটের অম্ল-মধুর-
বছরের শুরুতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয়, আর শেষে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ হার। মাঝে আশা-হতাশার ঝোড়ো বাতাস দুলিয়েছে ভক্তদের। টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে ৪৭ ম্যাচের ১৯টিতে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ (নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ ম্যাচ টি-টোয়েন্টির ফলাফল বাদ দিয়ে)। তাতে ২০২৩ সাল যেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য ভালো-খারাপের কিছুর পূর্বাভাস নিয়ে আসে।
ওয়ানডে ক্রিকেটে টাইগারদের যথারীতি সাফল্য
বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে পছন্দের ফরম্যাট এটি। তবে একদিনের ক্রিকেটে ২০২৩ সালটা খুব একটা ভালো যায়নি বাংলাদেশের। ২০২৩ সালে ৩২টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলে ১১টিতেই জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। এরপরও একটা দিক থেকে ২০২৩ সালে ওয়ানডে ফরম্যাটে রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। সেটা হয় ম্যাচ খেলার দিক থেকে। শেষ হতে যাওয়া বছরটাতে নিজেদের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ৩২টি পঞ্চাশ ওভারের ম্যাচে অংশ নিয়েছে লাল সবুজের দল।
আইসিসির পূর্ণ সদস্য দেশগুলোর মধ্যে যা তৃতীয় সর্বোচ্চ। ২০২৩ সালে সবচেয়ে বেশি ৩৫টি ওয়ানডে খেলেছে সবশেষ বিশ্বকাপের রানার্সআপ দল ভারত। এই তালিকায় দুই নম্বরে আছে নিউজিল্যান্ড। ৩৩টি ওয়ানডে খেলতে মাঠে নেমেছে কিউইরা।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে পুরোনো তিক্ততা
এই ফরম্যাটে বছরটা আগের মতোই তিক্ততা ছড়িয়েছে। ব্যাটে-বলে হতাশা দেখিয়েছেন ক্রিকেটাররা। পুরো বছরে চারটি সিরিজ মিলিয়ে মোট ১১ ম্যাচে মাত্র ৭টি জয় এসেছে বাংলাদেশের (নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ ম্যাচ টি-টোয়েন্টির ফলাফল বাদ দিয়ে)। ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত এই ফরম্যাটটির সঙ্গে যেন বাংলাদেশের তিক্ততা আগে থেকেই। বারবার নাস্তানাবুদ অবস্থা হয়েছে। বছরের শুরুর দিকে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩-০ সিরিজ জয় যেনো বড় সফলতা এ বাদে তেমন রেকর্ড নেই বাংলাদেশের।
টেস্ট ক্রিকেটে ব্যর্থতার গান
সকালের সূর্য দেখলে বলে দেওয়া যায় দিনটি কেমন যাবে। তবে বাংলাদেশের টেস্ট ভাগ্যের ক্ষেত্রে হয়েছে উল্টোটা। বছরের শুরুতেই দুর্বল প্রতিপক্ষ আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জয় এসেছে। এছাড়া আফগানদের বিপক্ষে রেকর্ড গড়ে জয়। আর বছরের শেষে ঘরে মাঠে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডকে হারানো। তিন সিরিজের দুইটি জয় দুর্বল প্রতিপক্ষের বিপক্ষে। ফলে ২০২৩ সালে ক্রিকেটের বড় পরিসরে টাইগারদের নেই কোনো সামগ্রিক রেকর্ড।
এশিয়া কাপে বাংলাদেশ
২০২৩ সালের এশিয়া কাপে বাংলাদেশের ভালো সময় কাটেনি। ভালো করার আভাস নিয়ে তৃতীয় হয়ে ফিরেছে টাইগাররা। গ্রুপ পর্বে আফগানিস্তানকে ৮৯ রানে হারিয়ে সুপার চারে জায়গা করে নিলেও সুপার ফোরে ৩ ম্যাচের ২টিতে হেরে বিদায় নিতে হয়েছে তৃতীয় দল হয়ে। আর ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত।
ভারতের মাটিতে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ব্যর্থতা
সেমি-ফাইনাল খেলার স্বপ্ন নিয়ে বিশ্বকাপ খেলতে ভারতে গিয়েছিল বাংলাদেশ দল। সেই স্বপ্ন পূরণ হওয়া দূরের কথা, বিশ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বাজে ফল করে হতাশ হয়ে দেশে ফিরেছেন ক্রিকেটাররা। বিশ্বকাপে মোট ৯ ম্যাচ খেলে কেবল দুই জয় বাংলাদেশ। যা আগের কোনও বিশ্বকাপে এমন হয়নি লাল-সবুজদের।
এর মধ্যে ভারত বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ব্যাটিং বিপর্যয় চোখে পড়ার মতো। টপ-অর্ডার ও মিডল অর্ডারের ধারাবাহিক ব্যর্থতায় মূলত কার্যত পিছিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশকে। ভারত ম্যাচ ব্যতীত সব ম্যাচেই বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে টপ-অর্ডার। বরাবরই ব্যর্থ হচ্ছেন তানজিদ হোসেন তামিম, নাজমুল হোসেন শান্ত, তওহীদ হৃদয়ের মতো ব্যাটাররা।
এছাড়া বিশ্বমঞ্চে সুযোগ কাজে না লাগাতে পারাও বাংলাদেশের হারের অন্যতম কারণ। সাকিব বাহিনী সেই সুযোগ লুফে নিতে পারছে না। অন্যদিকে চলতি বিশ্বকাপে তরুণদের ওপরেই আস্থা রেখেছিল টিম ম্যানেজমেন্ট। তবে তারা দায়িত্ব নিয়ে দলকে এগিয়ে নিতে পারেননি। নিজেদের সেরাটা দিতে পারেননি তরুন তানজিদ, হাসান, নাজমুল হোসেন শান্তর মতো ক্রিকেটাররা। তরুণ দায়িত্ব নিতে পারলে ভালো কিছু পেতে পারতো বাংলাদেশ।
এছাড়া ভারত বিশ্বকাপ জুড়ে আলোচিত ছিল ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে। বিশ্বকাপে রীতিমতো ছেলেখেলা চলছে বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে। বিশেষ করে মিরাজ, তাওহীদ হৃদয়, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ব্যাটিং পজিশন বারবার পরিবর্তন বাংলাদেশের ব্যর্থতার অন্যতম কারণ। অপরদিকে বিশ্বকাপের আগে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা টাইগার পেসার তাসকিন-শরিফুলরা। তবে বিশ্বকাপে হতাশ করছেন তারা।