আহমদ ইশতিয়াক আনাম
২৭ এপ্রিল ২০২২, ০৩:৩৬ পিএম
বাংলাদেশ ক্রিকেটের বিতর্ক যেন কিছুতেই থামছে না। বোর্ড ও নির্বাচকদের নানা সিদ্ধান্ত প্রায়ই জন্ম দিচ্ছে প্রশ্নের। অন্যায় আচরণের শিকার হয়ে মুখ খুললে বিপদে পড়তে হয় ক্রিকেটারদেরই। আর এসব বিতর্কের সঙ্গে প্রায়ই কোন না কোনভাবে জড়িয়ে থাকে প্রধান নির্বাচক মিনাহাজুল আবেদিন নান্নুর নাম।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট দলের আসন্ন সিরিজের জন্য টেস্টের স্কোয়াড ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই আলোচনায় আবু জায়েদ রাহী। তার দলে না থাকা অবাক করেছে অনেককেই। টেস্ট বোলার হিসেবে খ্যাত রাহীও তাই নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে পড়েছেন শঙ্কায়।
রাহী বলেন, ‘আমি এখন টেনশনে আছি আমার ভবিষ্যৎ নিয়েই।’ গত নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকা সফরেও দলের সঙ্গেই ছিলেন রাহী, যদিও সুযোগ পাননি একটি ম্যাচেও। এমনকি ওয়ানডে ফরম্যাটের ২০১৯ সালের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে থেকেও একটি ম্যাচও ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি তিনি।
তাসকিন শরিফুলের ইনজুরিতে রাহী খেলবেন বলেই ধরে নিয়েছিল সবাই। রাহী নিজেও আশাবাদী ছিলেন সুযোগ পাবেন, ‘আমি তো গত দুই সিরিজে ছিলাম। প্রস্তুতি ম্যাচেও খেলেছি। নিউজিল্যান্ডে আমার তিন উইকেট এক প্রস্তুতি ম্যাচে। ভেবেছিলাম টেস্ট সিরিজে ডাক পাবোই, তার ওপর শরিফুল-তাসকিন ইনজুরিতে। এরপরও আমাকে না নেয়ায় আমি অবাক হয়েছি।’
অভিজ্ঞ রাহী সুযোগ না পেলেও ঠিকই সুযোগ পেয়েছেন এখনও পর্যন্ত টেস্ট ম্যাচ না খেলা শহিদুল ইসলাম ও রেজাউর রহমান। রাহী আরও বলেন, ‘দেখুন আমি একজন ক্রিকেটার। টেস্ট ফরম্যাটে নিয়মিত ছিলাম বলে ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টিতে আমাকে তেমন বিবেচনা করা হয় না। এখন টেস্ট দল থেকেও বাদ পড়লাম। এখন আমি আসলেই চিন্তিত কী হবে সামনে।’
টেস্ট স্কোয়াড ঘোষণার দিন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু বলেছিলেন, কিছু বিষয় আছে যেগুলো নিয়ে রাহীর কাজ করতে হবে। তবে দল ঘোষণার পর বোমা ফাটিয়েছেন রাহী। গণমাধ্যমে বলেছেন, ‘শুধু খেলা নয়, এখানও আরও অন্য কাহিনী আছে।’
তবে এই ‘অন্য কাহিনী’ নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি রাহী। তবে যতটুকু বলেছেন সেটা নিয়েই ভয়ে আছেন তিনি। আগামীতে বিপদে পড়তে পারেন বলেও আশঙ্কা করছেন তিনি।
খেলোয়াড়দের ভবিষ্যত নিয়ে বিসিবির নির্লিপ্ততার অভিযোগ অবশ্য নতুন কিছু নয়। কিছুদিন আগেই বাংলাদেশের পেস বোলিং অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনও তুলেছিলেন অভিযোগ। যুক্তরাজ্যে চিকিৎসা নিয়ে ঢাকায় ফিরে এই পেস বোলিং অলরাউন্ডার বলেছিলেন ছয় মাসেও তার কোন খোঁজখবর নেয়নি বিসিবি।
তবে এরপর বিসিবি ডেকে বসে এই বোলিং অলরাউন্ডারকে। বোর্ড কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা শেষে বের হয়েই পাল্টে যায় সুর। তখন সাইফুদ্দিন বলেন যে ভুলভাবে উদ্ধৃত করা হয়েছে তাকে।
তবে কি বোর্ড থেকে চাপ বা সতর্কবাণী দেওয়া হয়েছিল সাইফুদ্দিনকে? রাহীর এই মন্তব্যের পর এবার রাহীকেও ডেকেছে বোর্ড। বিসিবি'র ক্রিকেট অপারেশন্স বিভাগের প্রধান জালাল ইউনুস বলেন, ‘'সিলেকশন প্যানেল দেখবে সিলেকশনের বিষয়গুলো, তবে রাহীর সাথে বিসিবি বসবে। ঈদের পরে তার সাথে কথা বলা হবে।’
এর আগে মোহাম্মদ আশরাফুলকে নিয়ে কটূক্তি করা নান্নু রাহীর বিষয়ে বলেন, ‘বাদ পড়ার পর রাহী যেভাবে কথা বলেছেন তা হতাশাজনক।’
সব মিলিয়ে সময়টা বেশ খারাপই যাচ্ছে এই পেসারের। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফিরে এবারের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেও দল পাননি রাহী। দক্ষিণ আফ্রিকাতেও সুযোগ হয়নি ম্যাচ খেলার, এখন শ্রীলঙ্কা সিরিজে সোজা দলের বাইরে। এদিকে কয়েকদিন আগে বিসিবি কর্তৃক ঘোষিত কেন্দ্রীয় চুক্তিতেও নেই রাহীর নাম, এমনকি ১২০জন বেতনভুক্ত ক্রিকেটারের তালিকাতেও নেই তিনি।
নিজের সর্বশেষ দুই টেস্ট ম্যাচে শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের বিপক্ষে কোনও উইকেট নিতে পারেননি রাহী। এরপরই প্রথম একাদশ থেকে এবং পরবর্তীতে স্কোয়াড থেকেই বাদ পড়েন তিনি।
এআইএ