images

স্পোর্টস / ক্রিকেট

বে ওভালের স্মৃতি ফিরিয়ে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক টেস্ট জয়

০২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:৫৮ এএম

সিলেটে যেনো সেই মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের স্মৃতি ফিরিয়ে আনল বাংলাদেশ। গত বছরের জানুয়ারিতে বে ওভালে নিউজিল্যান্ডকে তাদেরই ঘরের মাটিতে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে প্রথমবারের মত হারিয়েছিল বাংলাদেশ। ঐতিহাসিক সেই জয়ের দুই বছর না পেরোতেই আরও এক স্মরণীয় জয় পেলো টাইগাররা। বিশ্বকাপ ব্যর্থতার পর ঘরের মাটিতে দুই টেস্টের সিরিজ খেলতে কিউইদের আমন্ত্রণ জানায় বাংলাদেশ। এ সিরিজেরই প্রথম টেস্টের পঞ্চম ও শেষ দিনে সফরকারীদের উড়িয়ে ১৫০ রানের বিশাল এক জয় পেয়েছে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর দল।

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টাইগারদের অতীত অভিজ্ঞতা তিক্ততায় ভরা। টেস্টের শক্তিমত্তা ও অভিজ্ঞতার বিচারে বাংলাদেশের থেকে ঢের এগিয়ে কিউইরা। এদিকে সাকিব আল হাসান নেই, নেই তামিম ইকবালও। সেই কিউইদের নিয়ে চায়ের দেশে রীতিমতো ছেলেখেলাই করল শান্ত-মুশফিকরা। ব্যাটিং-বোলিং দুই বিভাগেই টাইগারদের আধিপত্য! ফলে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে আগের দুই আসরে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল তলানীতে। তবে এবার নতুন চক্র রোমাঞ্চকর এক জয় দিয়ে শুরু হল টাইগারদের।

ঘরের মাঠে কিউইদের বিপক্ষে এ নিয়ে ৭ম টেস্ট খেলল বাংলাদেশ। যেখানে ৩ হার ও ৩ ড্রয়ের পর নিউজিল্যান্ডদের বিপক্ষে এই প্রথম টেস্ট জিতল বাংলাদেশ। আর তাতে দারুণ অবদান বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামের। কিউইদের দুই ইনিংস মিলিয়ে মোট ১০ উইকেট নিলেন তিনি। সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজের পর বাংলাদেশের তৃতীয় বোলার হিসেবে টেস্টে দ্বিতীয়বারের মতো এক ম্যাচে ১০ উইকেট নিলেন তাইজুল। ২০১৮ সালে টেস্টে প্রথমবারের মতো তাইজুল ১০ উইকেট নিয়েছিলেন এই সিলেটেই! 

bb

সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে নিজেদের দুই ইনিংসে যথাক্রমে ৩১০ ও ৩৩৮ রান করেছিল বাংলাদেশ। জবাবে প্রথম ইনিংসে ৩১৭ রান করেছিল কিউইরা। জয়ের জন্য ৩৩২ রানের লক্ষ্যে ছিলো টিম সাউদিদের। সেই লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১১৩ রান তুলতেই চতুর্থ দিনেই নিউজিল্যান্ডের ৭ উইকেট তুলে নিয়ে সেই কাজ আরো কঠিন করে দেন টাইগার বোলাররা। ফলে জয়ের মঞ্চ আগের দিনই তৈরি করে রেখেছিল বাংলাদেশ। ২১৯ রানে পিছিয়ে, হাতে বাকি কেবল ৩ উইকেট। অবশেষে কিউইদের শেষ ৩ উইকেটও আজ তুলে নিয়ে ১৫০ রানের ঐতিহাসিক জয় পায়  টিম টাইগার্স।

আজ সকালের প্রথম প্রথম ৩০ মিনিট অবশ্য দারুণভাবে কাটিয়ে দেন ড্যারিল মিচেল, ইশ সোধি জুটি। পঞ্চাশ হাঁকিয়ে ছুটে চলা ড্যারিল মিচেল অবশ্য থামেন ব্যক্তিগত ৫৮ রানে। নাইম হাসানের বলে তাইজুল ইসলাম দৌড়ে এসে লুফে নেন দারুণ এক ক্যাচ। আর তাতেই ভাঙে মিচেলের প্রতিরোধ। পঞ্চম ও শেষ দিনে ২৪ বলে ৩৪ করে বাংলাদেশকে চ্যালেঞ্জ জানানো কিউই অধিনায়ক টিম সাউদিকে ইনিংস লম্বা করতে দেননি তাইজুল ইসলাম। তাকে ফিরিয়ে তাইজুল পূর্ণ করলেন তার টেস্ট ক্যারিয়ারের ১২ তম ফাইফার। বাংলাদেশের সাদা পোশাকে তাইজুল ইসলাম ‘দুঃসময়ের কাণ্ডারি’, তা আবারও প্রমান করলেন তিনি।

 সাকিব আল হাসান নেই, তাই স্পিনে নেতৃত্ব দিতে হচ্ছে তাইজুলকেই। ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভরাডুবির পর খাদের কিনারায় থাকা দলকে ইতিহাস গড়ার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছেন এই বাঁহাতি স্পিনার। শেষ ব্যাটার ইশ সোধিকে ফিরিয়ে তাইজুল দখলে নেন নিজের ১০ উইকেট। আর তাতেই বাংলাদেশের ১৫০ রানের বড় জয়।

bangladsh

এর আগে বাংলাদেশের ৩৩২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ভীষণ চাপে পড়ে নিউজিল্যান্ড। ইনিংসের প্রথম ওভারেই শরিফুল ইসলামের পেস তান্ডবে নাজেহাল হয়ে টম লাথাম সাজঘরে ফেরান। উড়তে থাকা বাংলাদেশ দ্রুতই ফিরিয়ে দেয় কেন উইলিয়ামসনকে। আগের ইনিংসে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে বাংলাদেশকে চ্যালেঞ্জ জানানো কেন এই ইনিংসে জ্বলে উঠার সুযোগই পাননি। ১১ রানে থাকা কেন উইলিয়ামসনকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন তাইজুল ইসলাম। জোরাল আবেদনে আম্পায়ার আঙুল উঁচিয়ে আউট দেন, উইলিয়ামসন অবশ্য রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি। 

এরপর হেনরি নিকোলসের উইকেট তুলে নেন মেহেদী হাসান মিরাজ। শর্ট ফাইন লেগে দাঁড়িয়ে দারুণভাবে ক্যাচ লুফে নেন নাইম হাসান। ব্যক্তিগত ২ রানে নিকোলস বিদায় নিলে ৩০ রানে ৩ উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড। দলীয় ৬০ রান তুলতেই পাঁচ উইকেট হারিয়েছে কিউইরা। বিশাল লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে তারা যেন দিশেহারা। ধুঁকতে থাকা ডেভন কনওয়েকে ইনিংস বড় করতে দেননি তাইজুল ইসলাম, ভাঙলেন তার প্রতিরোধ। প্যাভিলিয়নে ফেরার আগে ৭৬ বলে তিন চারে কনওয়ে করেন ২২ রান। এরপর টম ব্লান্ডেলকেও সাজঘরের পথ দেখান তাইজুল, উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে আসে কেবল ৬ রান। 

দলীয় ৮২ রানে ৬ষ্ঠ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ হারের পথে এগিয়ে চলে কিউইরা। এরপর কাইল জেমিসনকে তাইজুল সাজঘরে ফিরালে, বাংলাদেশ জয়ের সুবাতাস পেতে শুরু করে। এদিকে এই উইকেট নিয়েই তাইজুল পৌঁছান আরেক কীর্তিতে। এক টেস্টের দুই ইনিংসেই ফোর-ফার শিকারের মাইলফলক। চতুর্থ দিন মাঠে আর বল না গড়ালে কিউইদের ইনিংস শেষ হয় ৭ উইকেট হারিয়ে ১১৩ রানে।