০৫ অক্টোবর ২০২৩, ০৮:২২ এএম
দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটের সঙ্গে আক্ষেপ, হতাশা, অতৃপ্তি না পাওয়ার বেদনাসহ আরো অজস্র বিশেষণ যুক্ত করলেও তা শেষ হবে না। বিশ্ব ক্রিকেটে এই দেশটি নিজেদের সফলতার সূর্য যখনই দেখার দৃশ্যপট তৈরি করে ঠিক তখনই যেন শরৎকালের মতো সবকিছু পরিবর্তন হয়ে যায়। মুহূর্তেই আনন্দের প্রতিচ্ছবি বিষাদে রূপ নেয়। ১৯৯২ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল থেকে অশ্রুসিক্ত ২০১৫ সালের ইডেন পার্কের সেই বিষাদময় বিদায় আজও কাঁদায় কোটি ভক্তদের। সবকিছুকে ছাপিয়ে নতুন এক সূর্যোদয়ের অপেক্ষায় টেম্বা বাভুমার নেতৃত্বাধীন দক্ষিণ আফ্রিকা।
ওয়ানডে বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকা নিজেদের নামের পাশে চোকার্স তকমাটা জড়িয়েছে অনেক বছর হল। এছাড়াও প্রোটিয়াদের বিশ্বকাপের মঞ্চে বৃষ্টির সঙ্গে যেন অন্যরকম এক সম্পর্ক। ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপে সেমিফাইনালের মঞ্চে ইংলিশদের বিপক্ষে বৃষ্টির বাগড়ায় তাদের সমীকরণ দাঁড়িয়েছিল ১ বলে ২২ রান।
এরপর স্বপ্নভঙ্গের বিশ্বকাপ যেন বারবার প্রোটিয়াদের তাড়না করেছিল। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে আবারো সেই সেমিফাইনালে মন খারাপের গল্প রচনা করে দক্ষিণ আফ্রিকা। বার্মিংহামে লেন্স ক্লুস্নারের সেই একাকী লড়াই ও ভুল বুঝাবুঝিতে অজি তারকা ড্যারেন লেহমানের থ্রোতে রান আউটে ম্যাচ টাই। এরপর টুর্নামেন্টের নিয়মানুযায়ী আবারো বিশ্বকাপ ফাইনাল থেকে বিচ্ছেদের দৃশ্যপট রচনা করেছিল হেন্সি ক্রোনির দল।
এরপর ২০০৭ সালে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে আবারো বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে প্রোটিয়ারা। কিন্তু সেবার অজি পেসার শন টেইট ও গ্লেন ম্যাকগ্রার আগুনে পুড়েছিল গ্রাহাম স্মিথের দল। এক বিশ্বকাপ বাদে সবচেয়ে বেদনাদায়ক বিদায়ের গল্প আবারো মঞ্চায়িত করে প্রোটিয়ারা। নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডে সেবার ১৯৯২ সালের মতো বৃষ্টি আসলেও দক্ষিণ আফ্রিকা নিজেদের ব্যর্থতার কারণেই ফাইনালে উঠতে পারেনি।
ডেল স্টেইনের বলে কিউই ব্যাটার গ্রান্ট ইলিয়টের সেই বিশাল ছয় ব্রেন্ডন ম্যাককালামদের আনন্দে ভাসালেও কাঁদিয়েছিল এবি ডি ভিলিয়ার্সদের। অশ্রুজ্বলে সেবার মাটিতে লুটিয়ে পড়েছিলেন মরনে মরকেলের মতো বিশাল দেহের ক্রিকেটার। বেদনার রঙ কেমন হয় তা হয়তো চার চারবার বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে এসে স্বপ্ন না ভাঙলে কেউই বলতে পারবে না।
দক্ষিণ আফ্রিকা সেই সব বিষাদময় স্মৃতি ভুলে ডি কক, হেনরি ক্লাসেন ও বাভুমাদের হাতে দেখছে নতুন এক উজ্জ্বল আলোর স্বপ্ন। এবারের ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে নিজেদের চোকার্স তকমা মুছে ফেলার মিশনে প্রোটিয়ারা। অভিজ্ঞ ও তারুণ্যের দক্ষতা দিয়ে ভারসাম্যপূর্ণ এক স্কোয়াড নিয়ে ভারতে এসেছে কাগিসো রাবাদারা।
ভারতে রওনা দেওয়ার আগে হেড কোচ রব ওয়াল্টার জানিয়েছেন, "আমরা খেলোয়াড়দের একটি সুষম ভারসাম্যপূর্ণ দল এবং দক্ষতা তৈরি করার চেষ্টা করেছি যা আমাদের ভারতের কন্ডিশনের সাথে কার্যকরভাবে মানিয়ে নিতে সাহায্য করবে। আমাদের শক্তি পেস বোলিং এবং আমরা বেশিরভাগ পরিস্থিতিতে চারজন দক্ষ ফাস্ট বোলার নিয়ে সক্ষম হতে চাই।"
আফ্রিকার বর্তমান স্কোয়াডে একাধিক টপ অর্ডার ব্যাটার রয়েছে, যারা মুহূর্তেই খেলার পরিস্থিতি পাল্টে দিতে সক্ষম। ওপেনার কুইন্টন ডি কক ও রেজা হেন্ড্রিকস থেকে ধরে মিডেল অর্ডারে এইডেন মার্করাম, রাসি ফন ডার ডুসেন ও হেনরি ক্লাসেনের মতো দারুণ দক্ষতা সম্পন্ন ব্যাটার রয়েছে। যা দক্ষিণ আফ্রিকার এবারের আসরে বড় ভরসার নাম। লোয়ার অর্ডারে ডেভিড মিলারের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের সঙ্গে বাড়তি প্রাপ্তি পেস বোলিং অলরাউন্ডার মার্কো ইয়ানসেনের ব্যাটিং।
অপরদিকে বোলিং ইউনিটে রয়েছে গতির ঝড় তোলা কাগিসো রাবাদা, সেই সঙ্গে তরুণ পেস বোলিং সেনশেন জেরাল্ড কোয়েটজি বাড়তি রসদ যোগাবে প্রোটিয়াদের। স্পিন বোলিংয়ের দায়িত্ব থাকছে অভিজ্ঞ তাবরেজ শামসি ও কেশব মহারাজের কাঁধে। সব মিলিয়ে ভারসাম্যপূর্ণ এক দল নিয়ে বিশ্বকাপে চ্যালেঞ্জ জানাতে প্রস্তুত দক্ষিণ আফ্রিকা। ৭ অক্টোবর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিজেদের বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু করবে বাভুমা বাহিনী।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিশ্বকাপ দল: টেম্বা বাভুমা (অধিনায়ক), কুইন্টন ডি কক, রেজা হেনড্রিকস, মার্কো জানসেন, হেনরিখ ক্লাসেন, কেশব মহারাজ, এইডেন মার্করাম, ডেভিড মিলার, লুঙ্গি এনগিডি, কাগিসো রাবাদা, তাবরেজ শামসি, রাসি ফন ডের ডুসেন, অ্যানডাইল ফেলুকায়ো, লিজাড উইলিয়ামস ও জেরাল্ড কোয়েটজি।