images

স্পোর্টস / ক্রিকেট

লয়েড থেকে মরগ্যান, ভারত জয় করবে কোন কাপ্তান? 

০৫ অক্টোবর ২০২৩, ০৮:০৯ এএম

১৯৭৫ সালে ইংল্যান্ডের মাটিতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ওয়ানডে বিশ্বকাপের প্রথম আসর। ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটের রূপকথার গল্প সেবারই শুরু হয়েছিল। ক্লাইভ লয়েডের হাত ধরে নিজেদের ক্রিকেটীয় শক্তির জানান দিয়ে উদ্বোধনী বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এরপরের গল্প সবারই জানা, ১৯৭৯ সালেও নিজেদের রাজত্ব ধরে রাখে লয়েডের দল। 

এশিয়া মহাদেশ থেকে ১৯৮৩ সালে ২২ গজে নয়া রাজার আবির্ভাব ঘটে। কপিল দেবের নেতৃত্বে বিশ্ব কাঁপানো দল ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হতাশায় ডুবিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ভারত। এরপর ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে ক্যারিবিয়ানদের দাপট ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে যাওয়া। ক্রিকেটে ১৯৮৭ সাল থেকে নিজেদের আধিপত্যের জানান দেয়া শুরু করে অ্যালেন বর্ডারের অস্ট্রেলিয়া। ভারতের কলকাতায় অনুষ্ঠিত সেবারের বিশ্বকাপে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইংলিশদের হারিয়ে বিশ্ব সেরার তকমা নিজেদের করে নিয়েছিল অজিরা।

এরপর ১৯৯২ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেন ইমরান খান। তাঁর অধিনায়কত্বেই সেবারের বিশ্বকাপ বা বেনসন অ্যান্ড হেজেস কাপের শিরোপা জয় করে নেয় পাকিস্তান। অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত সেবারের বিশ্বকাপের ফাইনালে ইংল্যান্ডকে ২২ রানে হারিয়ে শিরোপা জয় করে নায় পাকিস্তান। সে টুর্নামেন্টের ফাইনালে ম্যান অব দ্যা ম্যাচ হয়েছিলেন পাকিস্তানের ওয়াসিন আকরাম এবং ম্যান অব দ্যা টুর্নামেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন নিউজিল্যান্ডের মার্টিন ক্রো। 

এদিকে এশিয়ার দুই দেশ ভারত এবং পাকিস্তানের বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন পূরণ হলেও তখনও চির আরাধ্য সেই ট্রফি জয় করতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। তবে এর জন্য খুব বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি তাদের। ১৯৯৬ সালে আয়োজিত পরের বিশ্বকাপেই বিশ্বসেরার খেতাব অর্জন করে নেয় লঙ্কানরা। সেবার রিকি পন্টিং, শেন ওয়ার্ন, মার্ক ওয়াহদের সমন্বয়ে গঠিত দাপুটে অস্ট্রেলিয়াকে ফাইনালে সাত উইকেটে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় সনাথ জয়াসুরিয়া এবং অর্জুনা রানাতুঙ্গার শ্রীলঙ্কা। 

এদিকে ১৯৯৬ এরপর বাকি তিন বিশ্বকাপেই রূপকথার জন্ম দেয় অস্ট্রেলিয়া। পরের তিনটি বিশ্বকাপেই শিরোপা জয় করে নেয় তারা যার শুরু হয় ১৯৯৯ বিশ্বকাপ দিয়ে। ৯৯ এর সে বিশ্বকাপের মূল আয়োজক ছিল ইংল্যান্ড যাতে অংশ নিয়েছিল মোট ১২টি দেশ। সেবার ফাইনালে পাকিস্তানের মুখোমুখি হয়েছিল অজিরা। আর লো স্কোরিং ম্যাচে পাকিস্তানকে সহজেই হারিয়ে দ্বিতীয় বারের মত শিরোপা জিতে নেয় অস্ট্রেলিয়া। পন্টিং গিলক্রিস্টদের সেই দাপট বজায় থেকেছে পরের দুই বিশ্বকাপেও। 

১৯৯৯ এর মত ২০০৩ এবং ২০০৭ বিশ্বকাপের শিরপাও জিতে নেয় অস্ট্রেলিয়া। ২০০৩ সালে বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ ছিল জিম্বাবুয়ে, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং কেনিয়া। সেবার ফাইনালে অজিদের প্রতিপক্ষ ছিল ভারত। টানা দ্বিতীয় শিরোপা জয়ের ম্যাচে সেবার শচীন, শেবাগ, সোউরভদের ভারতের বিপক্ষে আগে ব্যাট করে ৩৫৯ রান করেছিল অজিরা, শতকের দেখা পেয়েছিলেন অধিনায়ক পন্টিং। পরে চারত অসহায় আত্মসমর্পন করে মাত্র ২৩৪ রানেই। ফলে টানা দুই শিরোপা জয় নিশ্চিত হয় অস্ট্রেলিয়ার। 

এরপর ২০০৭ সালেও বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে হ্যাটট্রিক শিরোপা জয় নিশ্চিত করে অস্ট্রেলিয়া। সেবার বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর ফাইনালে অজিদের প্রতিপক্ষ ছিল শ্রীলঙ্কা। আর লঙ্কানদের বিপক্ষে এ ফাইনালেও বজায় ছিল অস্ট্রেলিয়ার দাপট যার ফলশ্রুতিতে টানা তৃতীয় বিশ্বকাপের দেখা পায় অজিরা। 

এদিকে অজিদের টানা তিন শিরোপা জয়ের পর বিশ্বমঞ্চে আবারো আবির্ভাব হয় ভারতের, বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ২০১১ সালে যৌথভাবে বিশ্বকাপ আয়োজন করে ভারত। আর এ টুর্নামেন্ট দিয়েই ঘোচে ক্রিকেটের বরপুত্র শচীন টেন্ডুলকারের শিরোপা খরা। ঘরের মাটিতে অনুষ্ঠিত ফাইনালে মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বে কুমার সাঙ্গকারা, তিলকারত্নে দিলশান, লাসিথ মালিঙ্গাদের শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে দ্বিতীয় শিরোপা জয় করে নেয় ভারত। 

এদিকে পরের বিশ্বকাপেই আবার ঘুরে দাড়ায় অস্ট্রেলিয়া। ২০১৫ সালে বিশ্বকাপ যে আয়োজিত হয়েছে অজিদের দেশেই। অবশ্য সহ-আয়োজক হিসেবে ছিল নিউজিল্যান্ড। তবে ফাইনাল হয়েছিল অজিদের ঘরের মাটিতেই। আর ফাইনালে কিউইদের পরাজিত করে শিরোপা জিতে নেয় মাইকেল ক্লার্কের অস্ট্রেলিয়া নিশ্চিত হয়  সবথেকে বেশি পাঁচটি বিশ্বকাপ জয়ের ইতিহাস। 

এরপর ২০১৯ সালের বিশ্বকাপে ক্রিকেটবিশ্ব দেখেছে এক মহাকাব্যিক ফাইনাল। ইংল্যান্ডের মাটিতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের ফাইনালে ইংলিশদের বিপক্ষে কিউইদের ম্যাচটি ড্র হওয়ার পর ম্যাচ গড়ায় সুপার ওভারে। পরে সুপার ওভারেও বিজয়ী নির্ধারিত না হওয়ায় বাউন্ডারি হাকানোর হিসাবে এগিয়ে থাকায় জয়ী হয় এউইন মর্গানের ইংল্যান্ড, নিশ্চিত হয় ইংলিশদের প্রথম ওয়ানডে বিশ্বকাপ শিরোপা। 

গত তিনটি বিশ্বকাপ পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, স্বাগতিক দেশের হাতেই ওঠেছে বিশ্বকাপের শিরোপা। এবার যেহেতু আবার বিশ্বকাপ আয়োজিত হচ্ছে ভারতে, তবে কি রোহিত শর্মার দলের হাতেই ওঠবে বিশ্বকাপের ট্রফি। মহেন্দ্র সিং ধোনির পর রোহিতের অধীনেই কি কাটবে ভারতের দীর্ঘ এক দশকের আইসিসি শিরোপা খরা?