০৪ অক্টোবর ২০২৩, ০২:১১ পিএম
বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্ট ওয়ানডে বিশ্বকাপের ১৩তম আসর মাঠে গড়াবে আগামীকাল। ইতোমধ্যে অংশগ্রহণকারী দেশগুলো অবস্থান করছে ভারতে। মূল আসর শুরুর আগে কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে প্রতিটি দলই খেলছে অফিসিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচ। ৫ই অক্টোবর থেকে ভারতের মাটিতে শুরু হওয়া দশ দলের ক্রিকেট বিশ্বকাপ নিয়ে টানা ৪৫ দিন বুঁদ হয়ে থাকবে ক্রিকেটে প্রেমীরা।
এরইমধ্যে সবাই সবার প্রিয় দলকে সাপোর্ট দিতে আয়োজনের কমতি নেই, কোন দলের শক্তিমত্তা কেমন, কোথায় দুর্বলতা সে সব নিয়েও চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। এমনই এক দল পাকিস্তান।
সাম্প্রতিক ফর্ম: এশিয়া কাপের সুপার ফোর থেকে ছিটকে গেলেও বিশ্বকাপের অন্যতম দাবিদার ভাবা হচ্ছে পাকিস্তানকে। কারণ ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ে দুইয়ে রয়েছে বাবর আজমের দল। এশিয়ান কন্ডিশনে খেলা বলেই শিরোপা জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী পাকিস্তান।
অতীত ইতিহাস: বিশ্বকাপে পাকিস্তানের যাত্রা শুরু ১৯৭৫ সালে। ক্রিকেট মহাযজ্ঞের প্রথম আসরে হতাশা নিয়েই দেশের বিমান ধরে তারা। সেবার গ্রুপ পর্বের গন্ডিই পেরোতে পারেনি পাকিস্তান। এর পরে ১৯৭৯, ১৯৮৩ ও ১৯৮৭ তিনটি বিশ্বকাপেই সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিয়ে থাকে পাকিস্তান। ১৯৯২ সালে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে নাটকীয়ভাবে শিরোপা জিতেছিল পাকিস্তান। যেখানে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় হওয়ার কথা ছিল, সেখানে চ্যাম্পিয়ন হয়েই বীরের বেশে দেশে ফিরেছিল ইমরান খানের দল।
১৯৯৬ সালে ভারত ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে যৌথভাবে বিশ্বকাপ আয়োজনের সুযোগ পায় পাকিস্তান। আশানুরূপ ফল পায়নি তারা। কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে ছিটকে যায় তারা। ১৯৯৯ সালে বিশ্বকাপে ফেবারিট হিসেবে ইংল্যান্ডে যায় পাকিস্তান। নিয়তির নির্মম পরিহাস। শিরোপা হারানোর বেদনা নিয়েই ঘরে ফেরে তারা। এরপর ২০০৩ ও ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে ভক্তদের চরম হতাশ করেন পাকিস্তানের ক্রিকেটাররা। গ্রুপ পর্ব থেকেই তাদের বিদায় নিশ্চিত হয়।
২০১১ সালেও সেমি থেকে বিদায় নিতে হয় পাকিস্তানকে। এরপর ২০১৫ বিশ্বকাপে কোয়াটার ফাইনাল আর শেষ ২০১৯ আসরে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিতে হয় ম্যান ইন গ্রিনদের। এবার বাবর আজমের নেতৃত্বে বিশ্বকাপে খেলতে নামবে তারা। ওয়ানডে বিশ্বকাপে মোট ৮০টি ম্যাচ খেলেছে পাকিস্তান। জয় পেয়েছে ৪৫ ম্যাচে। ৩২ ম্যাচ হারতে হয়েছে। ৩টি ম্যাচে কোনও ফল নির্ধারণ হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতে আয়োজিত এবারের বিশ্বকাপে অন্যতম হট ফেভারিট বাবর-রিজওয়ান বাহিনীই।
২০২৩ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের শক্তি: ভারতের মাটিতে বিশ্বকাপ হলেও পাকিস্তান বেশ এগিয়ে থাকবে। কন্ডিশন বিবেচনায় পাকিস্তান অন্য অনেক দল থেকে এগিয়ে থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। তাদের বিশ্বসেরা পেস বোলিং আক্রমণ যেকোনো দলের জন্য ভয়ের কারণ। আফ্রিদি-রউফদের গতি আর সুইং সামলানো হবে প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। পাশাপাশি শাদাব-ওয়াসিমরা স্পিন জাদু দেখাতে মরিয়া।
দুর্বলতা: পাকিস্তানের অন্যতম দুর্বলতা মিডল অর্ডার ব্যাটারদের ব্যর্থতা। সাম্প্রতিক সিরিজগুলোতে টপ অর্ডারে বাবর-রিজওয়ান ছাড়া কেউ জ্বলে উঠতে পারেনি। শুধু তাই নয় এই দুই ব্যাটার আউট হলে তাসের ঘরের মতো দ্রুতই ভেঙে পড়ে পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপ। যা বড় দুশ্চিন্তার কারণ। তাই বিশ্বকাপে ভাল করতে হলে মিডল অর্ডারদের দায়িত্ব নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
যে কারনে ভারতের মাটিতে চমক দিতে পাকিস্তান: কন্ডিশন বিবেচনায় পাকিস্তান অন্য অনেক দল থেকে এগিয়ে থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। তাদের বিশ্বসেরা পেস বোলিং আক্রমণ যেকোনো দলের জন্য ভয়ের কারণ। এছাড়া বাবর, রিজওয়ান ও ইফতেখারের মতো অভিজ্ঞ ব্যাটার সঙ্গে আগা সালমানের মতো নতুন তারকা ব্যাটারতো আছেই। অভিজ্ঞতা ও অলরাউন্ডদের মেলবন্ধনে দারুণ স্কোয়াড সাজিয়েছে ম্যান ইন গ্রিনরা।
বিশ্বকাপে পাকিস্তানের স্কোয়াড: বাবর আজম (অধিনায়ক), শাদাব খান, আসিফ আলী, আজম খান , হারিস রউফ, হাসান আলী, ইমাদ ওয়াসিম, খুশদিল শাহ, মোহাম্মদ হাফিজ, মোহাম্মদ হাসনাইন, মোহাম্মদ নেওয়াজ, মোহাম্মদ রিজওয়ান, মোহাম্মদ ওয়াসিম, শাহিন শাহ আফ্রিদি ও শোয়েব মাকসুদ।
বিশ্বকাপে অংশগ্রহন: আসন্ন বিশ্বকাপসহ ১৩ বার
শিরোপা: ১বার
আইসিসি র্যাঙ্কিং: দুই নম্বরে
বিশ্বকাপের অধিনায়ক: বাবর আজম
বিশ্বকাপের কোচ: গ্র্যান্ট ব্র্যাডবার্ন
বিশ্বকাপে তাদের প্রতিপক্ষ : দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত, বাংলাদেশ, নিউজিল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, অস্ট্রেলিয়া, আফগানিস্তান, নেদারল্যান্ডস, ইংল্যান্ড।