images

ইসলাম

হজ কবুলের জন্য যেসব আমলে গুরুত্ব দেবেন

ধর্ম ডেস্ক

১৬ জুন ২০২৩, ০৭:২৭ এএম

মকবুল হজ তথা হজ কবুলের জন্য হাজিদেরকে কোরআন-সুন্নাহ নির্দেশিত কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়। হজের বিধি-বিধান ও মাসায়েল সংক্রান্ত আলেমদের আলোচনা ও কিতাবাদিতে এ নিয়ে আলোচনা রয়েছে। তবুও হাজি সাহেবদের আরেকবার স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য এখানে হজ কবুলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু শর্ত নিয়ে আলোচনা করা হলো। 

১) আল্লাহর সন্তুষ্টির নিয়ত ও ইখলাস
আল্লাহ তাআলার আনুগত্য, সন্তুষ্টি, নৈকট্য ও তাঁর নির্দেশ পালনার্থে কোনো কাজ করার দৃঢ় সংকল্পকে নিয়ত বলে। ইবাদতে নিয়ত করার অর্থ হলো ইবাদতে হৃদয়কে হাজির রাখা, আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশা করা, ইবাদত কবুল হওয়ার প্রত্যাশা করা, সব কাজ আন্তরিকতার সঙ্গে পালন করা। ইবাদত করার সময় আল্লাহ তাআলা দেখছেন বলে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করা। হাদিসে জিবরাঈলে বলা হয়েছে, ‘তুমি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত করো, যেন তুমি তাঁকে দেখছ। যদি দেখতে না পাও (অন্তরে বিষয়টি হাজির করতে না পারো), তাহলে বিশ্বাস করো যে, তিনি তোমাকে দেখছেন।’ (সহিহ মুসলিম: ৮)

নবী (স.)-এর বাণী- ‘প্রত্যেক কাজের ফলাফল নিয়ত অনুসারে হয়। প্রত্যেক মানুষ তার কাজের ফলাফল আল্লাহর কাছে তদ্রূপ পাবে, যেরূপ সে নিয়ত করেছে।’ (বুখারি : ১)

২) নবীজির দেখানো পদ্ধতি তথা মুতাবাআ (অনুসরণ)
যেকোনো ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য অবশ্যই নবীজির তরিকা অনুযায়ী হতে হবে। অন্যথায় ইবাদত কবুল হবে না। আল্লাহর রাসুল (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি এমন কোনো আমল করল, যাতে আমার নির্দেশ (সুন্নাহ) নেই, তবে তা প্রত্যাখ্যাত।’ (মুসলিম : ১৭১৮)

সুতরাং হাজী সাহেব যেসব ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি জোর দিবেন অন্যতম হচ্ছে- ইখলাস ও মুতাবাআ। 

৩) হালাল সম্পদ থেকে হজ
হজ করতে হবে হালাল সম্পদ দিয়ে। কারণ হারাম সম্পদ দিয়ে হজ করা হারাম ও নাজায়েজ। বরং কোনো কোনো আলেম বলেছেন, এমন হজ শুদ্ধ হবে না। কেউ কেউ বলেন, যদি তুমি এমন সম্পদ দিয়ে হজ কর যে সম্পদের উৎস হারাম তাহলে তুমি যেন হজ করলে না; তোমার বাহনটা হজ করল। অর্থাৎ উট হজ্জ করল। হাদিসে এসেছে, ‘আল্লাহ তাআলা পবিত্র; শুধুমাত্র পবিত্রটাই তিনি গ্রহণ করেন...।’ (তিরমিজি: ২৯৮৯) পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা ব্যয় কর তোমাদের অর্জিত হালাল সম্পদ থেকে।’ (সুরা বাকারা: ২৬৭)

৪) গুনাহের কাজ থেকে বিরত থাকা
হজ যেন আল্লাহর কাছে কবুল হয় সেজন্য আল্লাহর নিষেধকৃত বিষয়গুলো থেকে বিরত থাকা চাই। গুনাহের মধ্যে রয়েছে পাপাচার, অবাধ্যতা, হারাম কথা, হারাম কাজ, বাদ্য শুনা ইত্যাদি। এক কথায় ইহরাম অবস্থায় যা কিছু শরিয়ত নিষিদ্ধ করেছে, সেসব থেকে বেঁচে থাকা। আল্লাহর বাণী- ‘হজের নির্দিষ্ট কয়েকটি মাস আছে। যে ব্যক্তি সেসব মাসে নিজের উপর হজ অবধারিত করে নেয় সে হজের সময় কোনো যৌনাচার করবে না, কোনো গুনাহ করবে না এবং ঝগড়া করবে না। (সুরা বাকারা: ১৯৭)
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনোরূপ অশ্লীল কথা বা গুনাহর কাজে লিপ্ত না হয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে হজ সম্পন্ন করে, সে সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে ফিরে আসে।’ (বুখারি: ১৫২১)

৫) কোমল ও সদাচারী হওয়া
হাজি সাহেবের উচিত- কোমল, সহজপ্রাণ ও উদার হওয়া। যতটুকু সম্ভব সহযাত্রীদের সাথে ভালো ব্যবহার করা। কোনো মুসলমানকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকা তার উপর ফরজ। তা পবিত্র স্থানগুলোতে হোক কিংবা বাজারে হোক। হাজি সাহেব তাওয়াফকালে ভিড় করে কাউকে কষ্ট দেবেন না। সাঈকালে কাউকে কষ্ট দিবেন না। জমরাতে কাউকে কষ্ট দিবেন না। অন্যকোনো স্থানেও কষ্ট দিবেন না। মকবুল হজের জন্য এ বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে আমল করা বাঞ্ছনীয়। 

এভাবে হজ আদায় করার জন্য হাজি সাহেব কোনো আলেমের সাহচর্যে থেকে হজ আদায় করতে পারেন। যদি তা সম্ভব না হয়, হজে যাওয়ার আগে নির্ভরযোগ্য আলেমদের গ্রন্থ অধ্যয়ন করা উচিত; যাতে সুস্পষ্ট জ্ঞানের ভিত্তিতে ব্যক্তি আল্লাহর ইবাদত করতে পারে এবং আল্লাহর দরবারে যেন তার হজ কবুল হওয়ার যোগ্যতা রাখে। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সকল হজযাত্রীকে মকবুল হজ নসিব করুন। আমিন।

হজ কবুল, মকবুল হজ, মাবরুর হজ, হজ কবুল হওয়ার শর্ত, মাকবুল হজের শর্ত, হজ কবুল হবে যে শর্তে