ধর্ম ডেস্ক
১২ জুন ২০২৩, ০৫:৫৯ পিএম
‘মাকামে ইবরাহিম’ পবিত্র কাবা নির্মাণের জন্য ব্যবহৃত জান্নাতি পাথর। এখানে দোয়া করলে আল্লাহ তাআলা কবুল করেন, তাই এই স্থানকে দোয়া কবুলের স্থান বলা হয়। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আর স্মরণ করুন, যখন ইবরাহিম ও ইসমাইল কাবার ভিতগুলো উঠাচ্ছিল (এবং দোয়া করছিল,) ‘হে আমাদের রব, আমাদের পক্ষ থেকে কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী।’ (সুরা বাকারা: ১২৭)
মাকাম শব্দের একটি অর্থ হচ্ছে- দাঁড়ানোর স্থান। অর্থাৎ হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর দাঁড়ানোর স্থান। এই পাথরের ওপর দাঁড়িয়ে হজরত ইবরাহিম (আ.) কাবা শরিফ নির্মাণ করেছেন। পাথরের ওপর তাঁর কদম মোবারক রাখলেই সেটা নরম হয়ে যেত এবং কদম মোবারক পাথরের ভেতর চার আঙ্গুল পরিমাণ দেবে যেত, যাতে নির্মাণকাজের সময় পা পিছলে না যায়।
কোনো কোনো বর্ণনায় বলা হয়েছে, পাথরটি হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর ইচ্ছানুযায়ী কাজের সুবিধার্থে ওপরে-নিচে, ডানে-বামে চলে যেত। কাবাঘর নির্মাণশেষে পাথরাটি কাবা ঘরের পাশে রেখে দেওয়া হয়। কাবা শরিফের পূর্বদিকের তাওয়াফের স্থানে ক্রিস্টালের একটা বাক্সে বর্গাকৃতির একটি পাথর চারদিকে লোহার বেষ্টনী দিয়ে রাখা আছে। কালের বিবর্তনে পাথরটি বর্তমান স্থানে রাখা হয়েছে।
এক মিলিয়ন রিয়াল ব্যয় করে মাকামে ইবরাহিম রাখার বক্সটি বানানো হয়েছে। পিতল ও ১০ মিলিমিটার পুরো গ্লাস দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে এটি। ভেতরের জালে সোনা চড়ানো। হাজরে আসওয়াদ থেকে মাকামে ইবরাহিমের দূরত্ব ১৪.৫ মিটার। কোরআনে কারিমে এ পাথরকে প্রকৃষ্ট নিদর্শন বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
ইরশাদ হয়েছে, ‘মক্কাতেই মানবজাতির জন্য সর্বপ্রথম ঘর তৈরি হয়েছিল। ওই ঘর বিশ্ববাসীদের জন্য হেদায়াত ও বরকতের উৎস। আর এতে রয়েছে ‘মাকামে ইবরাহিমের’ মতো প্রকৃষ্ট নিদর্শন..’ (সুরা আলে ইমরান: ৯৬-৯৭)
তাফসিরে তাবারিতে এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, বায়তুল্লাহতে আল্লাহ তাআলার কুদরতের পরিষ্কার নিদর্শন রয়েছে এবং খলিলুল্লাহ ইবরাহিম (আ.)-এর নিদর্শনাবলী রয়েছে, যার মধ্যে একটি হলো- তাঁর খলিল ইবরাহিম (আ.)-এর পদচিহ্ন ওই পাথরে যার ওপর তিনি দাঁড়িয়েছিলেন। (তাফসিরে তাবারি: ৪/১১)
মক্কার উম্মুল জুদস্থ জাদুঘরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সালেহ বিন আবদুর রহমানের সূত্রে জানা গেছে, চার হাজার বছরের বেশি সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও মাকামে ইবরাহিমে হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর পদচিহ্ন অপরিবর্তিত রয়েছে। পাথরটির ওপর প্রতিটি ছাপের দৈর্ঘ্য ২৭ সেমি এবং প্রস্থ ১৪ সেমি। পাথরের নিচের অংশে রূপাসহ প্রতিটি পাথরের দৈর্ঘ্য ২২ সেমি এবং প্রস্থ ১১ সেমি। পাথরটিতে হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর পদচিহ্নের গভীরতা পাথরটির উচ্চতার অর্ধেক, ৯ সেমি।
পবিত্র কাবা শরিফ নির্মাণ করার সময় পিতা হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর নির্মাণকাজের প্রয়োজনে পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.) এ পাথরটি নির্বাচন করেছিলেন। এ সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রা.) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.)-কে আমি বলতে শুনেছি— হাজরে আসওয়াদ ও মাকামে ইবরাহিম জান্নাতের ইয়াকুত (দীপ্তিশীল মূল্যবান মণি) হতে দুটো ইয়াকুত। আল্লাহ তাআলা এই দুটির আলোকপ্রভা নিষ্প্রভ করে দিয়েছেন। এ দুটির প্রভা যদি তিনি নিস্তেজ করে না দিতেন, তাহলে তা পূর্ব-পশ্চিমের মধ্যে যা কিছু আছে সব আলোকিত করে দিত। (মেশকাত, তিরমিজি: ৮৭৮ ইফা)
কাবাঘরের তাওয়াফশেষে মাকামে ইবরাহিমের পেছনে দাঁড়িয়ে দুই রাকাত নামাজ পড়তে হয়। তবে জায়গা না পেলে কাবা চত্বরের অন্য কোথাও আদায় করলে নামাজ হয়ে যায়। আর এ স্থানে দোয়া করলে আল্লাহ তাআলা তা কবুল করেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এবং (সেই সময়কে স্মরণ করুন) যখন কাবাগৃহকে মানবজাতির সম্মিলনক্ষেত্র ও নিরাপত্তাস্থল করেছিলাম। (এবং বলেছিলাম) তোমরা মাকামে ইবরাহিমকে (ইবরাহিমের দাঁড়ানোর জায়গায়) নামাজের জায়গা হিসেবে গ্রহণ করো।’ (সুরা বাকারা: ১২৫)
পবিত্র কোরআনের দু’জায়গায় মাকামে ইবরাহিমের আলোচনা করা হয়েছে। তা হলো সুরা বাকারার ১২৫ ও সুরা ইমরানের ৯৭ নম্বর আয়াত। হাদিসে এসেছে, ‘মানুষের গুনাহ যদি হাজরে আসওয়াদ ও মাকামে ইবরাহিমের পাথরকে স্পর্শ না করতো, তাহলে যেকোনো অসুস্থ ব্যক্তি তা স্পর্শ করলে (আল্লাহর পক্ষ হতে) তাকে সুস্থতা দান করা হতো।’ (সুনানে কুবরা, বায়হাকি: ৫/৭৫; শরহুল মুহাজজাব: ৮/৫১)
সুতরাং হজ ও ওমরার সব রোকন যথাযথ আদায়ের পাশাপাশি দোয়া কবুলের স্থান মাকামে ইবরাহিমে নামাজ পড়া এবং সেইসঙ্গে দোয়া করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সহিহ সুন্নাহ অনুযায়ী বায়তুল্লাহ জেয়ারতের তাওফিক দান করুন।
মহান আল্লাহর সব নিদর্শন স্বচক্ষে দেখার তাওফিক দান করুন। মাকামে ইবরাহিমে নামাজ পড়ার পাশাপাশি মনের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে দোয়া করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
মাকামে ইব্রাহিম, ইব্রাহিম আঃ এর কবর, মাকামে ইব্রাহিম সম্পর্কে কোরআনের আয়াত, জান্নাতি পাথর মাকামে ইবরাহিম, মাকামে ইবরাহিম বেহেশতি পাথর, মাকামে ইবরাহিম নামাজ, মাকামে ইবরাহিম তাওবা কবুল