images

ইসলাম

অসিয়ত করা কোরবানির গোশত আত্মীয়রা খেতে পারবে?

ধর্ম ডেস্ক

১১ জুন ২০২৩, ০৩:৪১ পিএম

মৃত্যুর আগে কেউ নিজের নামে কোরবানি করার অসিয়ত করে গেলে সেই গোশতের হুকুম কী? এই গোশত কি সবাই খেতে পারবে? এর উত্তর হলো— অসিয়তের কোরবানি মৃত ব্যক্তির ত্যাজ্য সম্পদের তিনভাগের একভাগ দিয়ে করা হলে সেই গোশত আত্মীয়রা খেতে পারবে না, বরং পুরোটাই দান করে দিতে হবে। 

আর যদি অসিয়ত ছাড়া মৃত ব্যক্তির পক্ষে আত্মীয়রা নিজেদের টাকা দিয়ে কোরবানি দেয়, সেই কোরবানির গোশত নিজেরা খেতে পারবে। আবার আত্মীয়-স্বজনকেও দেওয়া যাবে। (মুসনাদে আহমদ: ০১/১০৭; ইলাউস সুনান: ১৭/২৬৮-২৬৯; রদ্দুল মুহতার: ৬/৩২৬; ফতোয়ায়ে কাজিখান: ০৩/৩৫২)

বিশ্ববিখ্যাত ফতোয়া গ্রন্থ ফতোয়ায়ে শামিতে রয়েছে, মৃত ব্যক্তির ওয়ারিস যদি তার অসিয়তকৃত কোরবানি তার নির্দেশে (তারই রেখে যাওয়া সম্পদের এক তৃতীয়াংশ থেকে) আদায় করে থাকে, তাহলে তা সদকা করে দেওয়া ওয়াজিব। তা খাওয়া যাবে না। আর যদি ওয়ারিস মৃতের পক্ষ থেকে নফল আদায় করে, তবে খেতে পারবে। কেননা তখন কোরবানি জবাইকারীর পক্ষ থেকে আদায় হবে, আর সওয়াব মৃত ব্যক্তি পাবেন। (ফতোয়ায়ে শামি: ৬/৩২৬)

মনে রাখতে হবে, মৃতের ত্যাজ্য সম্পদের তিন ভাগের দুই ভাগ তার ওয়ারিসদের হক। তাই মৃতের অসিয়ত ও ঋণ থাকলে তা এক তৃতীয়াংশ থেকে পূরণ করবে। বাকি দুই ভাগ ওয়ারিসদের মধ্যে মিরাসের অংশ অনুযায়ী বণ্টন করা হবে। ফতোয়ায়ে হিন্দিয়াতে রয়েছে, মৃতের অসিয়ত বাস্তবায়ন করা হবে তার রেখে যাওয়া সম্পদের এক তৃতীয়াংশ থেকে। এরপর বাকি দুই অংশ ওয়ারিসদের মধ্যে মিরাসের অংশ অনুযায়ী বণ্টন করা হবে। (ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ৬/৪৪৭; আস-সিরাজি ফিল মিরাস: ৪-৫)

এক তৃতীয়াংশের বেশি সম্পদ দিয়ে মৃতের অসিয়ত পূরণ করা জায়েজ নয়। (হেদায়া: ৪/৬৩৮)

মৃতের নামে কোরবানি দিতে গিয়ে যদি তিনভাগের একভাগের চেয়ে বেশি সম্পদ ব্যবহার করতে হয়, তাহলে ওয়ারিসদের কাছ থেকে এর অনুমোদন নিতে হবে। অনুমোদন ছাড়া তাদের সম্পদ ব্যয় করা যাবে না। কারণ, এক তৃতীয়াংশের বেশি সম্পদ ওয়ারিসদের হক। কোনো নাবালেগ ওয়ারিস থাকলে তার অংশ থেকে নেওয়া যাবে না। 

মৃত ব্যক্তির ত্যাজ্য সম্পদ না থাকলে কোরবানি দেওয়া ওয়াজিব নয়। ওয়ারিসের সম্পদ থেকে দিলে— তা নফল হিসেবে গণ্য হবে এবং সেটার গোশত নিজেরা খেতে পারবেন। আয়শা (রা.) ও আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (স.) কোরবানির ইচ্ছা করলে দুটি মোটাতাজা, মাংশল, শিংযুক্ত, ধুসর বর্ণের ও খাসীকৃত মেষ ক্রয় করতেন। অতঃপর এর একটি উম্মতের যারা আল্লাহর তাওহিদের ও তার নবুওয়ত প্রচারের সাক্ষ্য দেয়, তাদের পক্ষ থেকে এবং অপরটি মুহাম্মদ (স.) ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে কোরবানি করতেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ: ৩১২২)

(সূত্র: রদ্দুল মুহতার: ৯/৪৭১; ফতোয়া তাতারখানিয়া: ১৭/৪৪৪; রদ্দুল মুহতার: ৯/৪৭২; মুসনাদে আহমদ: ১/১০৭, হাদিস: ৮৪৫; মুসনাদে আহমদ: ১/১০৭, হাদিস: ৮৪৫; ইলাউস সুনান ১৭/২৬৮; কাজি খান: ৩/৩৫৩; আল-বাহরুর রায়েক: ৩/১০৫; খুলাসাতুল ফতোয়া: ৪/৩২২; আলমুহিতুল বুরহানি: ৮/৪৭৩)

কোরবানির মাসায়েল, কোরবানির মাসয়ালা, কোরবানির গোশত সদকা, অসিয়ত কোরবানি, ওসিয়ত কোরবানির গোশত