images

ইসলাম

টাকার লেনদেন ছাড়া কার্ড খেলা কি জায়েজ?

ধর্ম ডেস্ক

২২ মে ২০২৩, ০৬:৪৭ পিএম

আল্লাহ তাআলা মানুষকে শুধুমাত্র তাঁর ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছেন। নামাজ-রোজা কিংবা জিকির-আজকারের মতো ইবাদত সবসময় করা সম্ভব নয়, সেজন্য কিছু বিধান আরোপ করেছেন, যাতে মানুষের সকল কার্যকলাপ ইবাদতে পরিণত হয়ে যায়। এক্ষেত্রে নিয়ত ও সুন্নাহর অনুসরণ জরুরি বিষয়। বিধানের বাইরে গিয়ে যা-ই করা হোকনা কেন, সওয়াব পাওয়া যাবে না।

খেলাধুলার উদ্দেশ্য যদিও শুধুই বিনোদন তবুও খেলাতে যদি শরীরচর্চা অথবা মেধা বিকাশের মাধ্যমে থাকে, ওসব খেলায় শরিয়তের নিষেধাজ্ঞা নেই। আবার যেসব খেলায় দুনিয়া-আখেরাতে কোনো কল্যাণ নেই, স্বাস্থ্যগত উপকারও নেই, শুধুই অনর্থক সময় নষ্ট হয়, সেসব খেলা ইসলামে জায়েজ নেই। 

যেমন ক্যারম বোর্ড খেলায় কোনো ধরণের উপকারিতা না থাকায় তা নাজায়েজ। (আল বাহরুর রায়েক: ৮/১৮৯, ফতোয়ায়ে শামি: ৬/৩৯৫)

সাপ, বেজি, বানর ইত্যাদির খেলা দেখা, দেখানো এবং বিনিময় দেওয়া-নেওয়া জায়েজ নেই। (ফতোয়ায়ে শামি: ৬/৩৪৯, আহসানুল ফতোয়া: ৮/২০৭)

প্রশ্নে উল্লেখিত কার্ড খেলার ব্যাপারে আলেমদের বক্তব্য হলো—তা নাজায়েজ এবং মুসলমানদের জন্য শোভনীয় নয়। কেননা তা অনর্থক খেলাধুলার অন্তর্ভুক্ত।

এ সম্পর্কে দেওবন্দের ফতোয়ায় বলা হয়, ‘যদি তাস খেলা জুয়ার মতো টাকার লেনদেন করে খেলা হয় তাহলে তা হারাম হওয়ার বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আর যদি বাজি না ধরেও খেলা হয় তবুও হারাম। কেননা এটা অনর্থক খেলাধুলার অন্তর্ভুক্ত। আর মুসলমানদের জন্য অনর্থক খেলাধুলায় সময় ব্যয় করা হারাম ও নাজায়েজ।’ (ফতোয়া: ৬৫১-৪৪৬/বি = ০৭/১৪৪২, প্রশ্নোত্তর নম্বর: ৬০৩১০৫)

একইভাবে দাবা খেলাও হানাফি মাজহাবমতে জায়েজ নেই। (ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ৫/৩৫২)

খেলা বৈধ হওয়ার কিছু মূলনীতি রয়েছে। যেমন- ১) আল্লাহর স্মরণ ও শরিয়তের মৌলিক বিধিবিধান পালনে বাধা না থাকা ২) আকিদা বা বিশ্বাসগত ত্রুটি-বিচ্যুতি না থাকা ২) জুয়া, বাজি ও শিরকের উপকরণ না থাকা ৩) অধিক সময় ব্যয় না করা ৪)  প্রসিদ্ধি বা সুনাম কুড়ানোর চেষ্টা না থাকা ৫) খেলাকে পেশা বানানো যাবে না ৬) জীবনের ঝুঁকি না থাকা ৭) পর্দার বিধান ও শালীনতা বজায় রাখা।

আলেমদের মতে, এসব মূলনীতিগুলো মেনে যেসব খেলাধুলায় চিত্তবিনোদন সম্ভব, সেগুলো জায়েজ। আরো অনেক নিত্যনতুন খেলা রয়েছে বা আসছে, যেগুলোর প্রকৃতি ও ধরন বিস্তারিত জেনে হুকুম প্রদান করতে হবে। সুতরাং যেকোনো নতুন খেলা সম্পর্কে বিজ্ঞ আলেম থেকে জেনে নিতে হবে। 

মূলত দুনিয়া-আখেরাতে কোনো কল্যাণ নেই—এমন কাজে জড়ানো মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়। কোরআনে সফল মুমিনদের সাতটি বৈশিষ্ট্যের বর্ণনায় দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বলা হয়েছে— ‘যারা অনর্থক কথাবার্তা থেকে বিরত থাকে।’ (সুরা মুমিনুন: ৩)

শুধু তাই নয়, কেউ যখন তাদের সঙ্গে অনর্থক কথাবার্তায় লিপ্ত হতে চায় তখন মুমিন ব্যক্তির আচরণ হবে- অত্যন্ত ভদ্রভাবে তাকে এড়িয়ে চলা। এ সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে—“তারা যখন অবাঞ্ছিত কথাবার্তা শোনে, তখন তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বলে—আমাদের জন্যে আমাদের কাজ এবং তোমাদের জন্যে তোমাদের কাজ। তোমাদের প্রতি সালাম। আমরা অজ্ঞদের সঙ্গে জড়িত হতে চাই না।” (সুরা কাসাস: ৫৫)

সুতরাং সত্যিকারের মুমিন হতে হলে অনর্থক কাজ থেকে বেঁচে থাকা জরুরি। বেহুদা কাজ-কর্ম, গল্প-গুজব জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করারও বড় একটি কারণ। জাহান্নামিরা নিজেদের মুখেই সেটি স্বীকার করবে। “জাহান্নামিদের জিজ্ঞেস করা হবে, কোন অপরাধে তোমরা জাহান্নামে প্রবেশ করেছ? তখন তারা বলবে— আমরা নামাজ পড়তাম না, মিসকিনদের খাদ্য দিতাম না, অনর্থক গল্প-গুজবকারীদের সঙ্গে গল্প-গুজব করতাম এবং কেয়ামত দিবসকে অবিশ্বাস করতাম।’ (সুরা মুদদাসসির: ৪২-৪৬)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শরিয়তের অনুমোদন নেই—এমন খেলা থেকে সতর্ক হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ইসলামে কেরাম খেলা দাবা খেলা কার্ড খেলা, মোবাইলে লুডু খেলা কি হারাম, দাবা খেলা কি হারাম, দাবা খেলা সম্পর্কে হাদিস, লুডু খেলা কেন হারাম, রোজা রেখে লুডু খেলা যাবে কি, মার্বেল খেলা কি হারাম, কেরাম বোর্ড খেলার বিধান কি, তাস খেলা কি হারাম