images

ইসলাম

হজের সফরে যেসব জিনিসপত্র সংগ্রহে রাখবেন

ধর্ম ডেস্ক

১৭ মে ২০২৩, ০৭:২০ পিএম

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে চলতি বছরের ২৭ জুন (৯ জিলহ্জ) পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ থেকে সরকারিভাবে ২১ মে হজের প্রথম ফ্লাইট শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। সামর্থ্যবান নারী-পুরুষের ওপর জীবনে একবার হজ ফরজ তাই সফরের আগে কোন কোন জিনিস সংগ্রহে থাকা উচিত, তা অধিকাংশ হজযাত্রীর জানা থাকে না। নিচে এ সংক্রান্ত একটা তালিকা দেওয়া হলো—

১) ইহরামের কাপড়: কয়েক সেট ইহরামের কাপড় নেওয়া উত্তম। কমপক্ষে দুই সেট নেওয়া জরুরি। হজের সময় মা-বোনদের স্বাভাবিক কাপড় পরা বৈধ। তবে মুখের পর্দা রক্ষার জন্য মহিলা হাজিদের জন্য কিছু বিশেষ সানক্যাপ পাওয়া যায়, যেগুলোতে যুক্ত বিশেষ পর্দাটি নারী হাজিদের মুখের পর্দা যথাযথভাবে রক্ষা করে, আবার ইহরামেরও কোনো সমস্যা হয় না।

২) সৌদি রিয়াল: কোরবানি ও হজের ব্যক্তিগত খরচের জন্য প্রয়োজনমতো সৌদি রিয়াল সংগ্রহ করে রাখা ভালো, কারণ বিগত বছরগুলোতে যারা হজ করেছেন, তাদের অভিজ্ঞতা হলো—শেষ সময়ে রিয়ালের দাম বেড়ে যায়।

৩) বড় ট্রলি ব্যাগ: হজের সফরে একটা বড় ট্রলি ব্যাগ থাকা প্রয়োজন। তবে অনেক ক্ষেত্রে হজ কাফেলা হাজিদেরকে বাংলাদেশের পতাকা চিহ্নিত ও হজ কাফেলার ঠিকানা সংবলিত ব্যাগ সরবরাহ করে। তাই মোয়াল্লেমকে না জানিয়ে বড় ব্যাগ কিনলে অপচয় হবে।

৪) সহজে বহনযোগ্য ব্যাগ: সহজেই বহন করা যায় এমন একটি ছোট হালকা চামড়া বা কাপড়ের ব্যাগ নিয়ে যাওয়া ভালো। এই ব্যাগটি যাত্রাপথে বিশেষ করে হজের মূল সফরে (৮ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ) বিশেষ দরকার হবে। কারণ ওই সময় বড় ব্যাগ হাজিদের কাছে রাখা সম্ভব হয় না। তাই সেই দিনগুলোতে একান্ত প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো সঙ্গে রাখতে ছোট ব্যাগটি খুব উপকারে আসবে।

৫) হজ গাইড: নির্ভরযোগ্য কোনো আলেমের লিখিত হজের মাসয়ালা-মাসায়েল সংক্রান্ত বই।

৬) প্রয়োজনীয় ওষুধ: হজে যাওয়ার আগে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র সঙ্গে নিয়ে যাওয়া উচিত। কারণ সৌদি আরবে ওষুধের দাম তুলনামূলক বেশি।

৭) একান্ত ব্যক্তিগত জিনিসপত্র: ছোট আয়না, চিরুনি, কাঁচি, রেজর, ব্লেড, সুই-সুতা, নাইলনের দড়ি ইত্যাদি। তবে নেওয়ার সময় অবশ্য হাতব্যাগে রাখা যাবে না। বরং এগুলো বড় ব্যাগে রাখা উচিত। ধাতব পদার্থ ও দড়ি হ্যান্ডব্যাগে বহনে বিমানের নিষেধাজ্ঞা আছে। ব্যাগ গোছানোর সময় নাইলনের দড়ির অর্ধেকটা বাইরে রাখতে হবে, যাতে তা দিয়ে বড় ব্যাগটা যাত্রার পূর্বে ভালো করে বাঁধা যায়।

 ৮) হালকা ওজনের আয়রন মেশিন : মক্কা-মদিনায় কাপড় ইস্তিরি করা খুব ব্যয়বহুল। তাই সমমনা পাঁচ-ছয়জন মিলে একটি হালকা আয়রন সঙ্গে নিলে বেশ উপকার হবে। একইভাবে কয়েকজন মিলে একটি মাল্টিপ্লাগ নিয়ে গেলেও বেশ উপকার পাওয়া যায়। তাই বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।

৯) প্রসাধনী জাতীয় জিনিসপত্র: সাবান দুটি, সাবানের গুঁড়া ৫০০ গ্রাম, নীলের ছোট কৌটা একটি, ব্যবহারের তেল পরিমাণমতো, পেট্রোলিয়াম জেলি মাঝারি সাইজের একটি, টয়লেট পেপার তিনটি, টুথপেস্ট একটি, ব্রাশ ও মেসওয়াক দুটি, ছোট তালা-চাবি এক সেট।

১০) দুই ফিতার জুতা: ইহরাম অবস্থায় পুরুষদের পরার জন্য দুই ফিতার স্যান্ডেল বা জুতা দুই জোড়া। হালাল অবস্থায় পুরুষদের পরার জন্য শু বা চামড়ার জুতা এক জোড়া। মা-বোনদের জুতায় কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তারা দুই-তিন জোড়া আরামদায়ক জুতা সঙ্গে নিতে পারেন।

১১) জুতার ব্যাগ: মসজিদে জুতা বহনের জন্য কাপড়ের ছোট ব্যাগ দুটি।

১২) পাথর বহনের ব্যাগ: এটা না হলেও চলে, তবে ইচ্ছা করলে এটাও সংগ্রহে রাখতে পারেন।

১৩) শুকনা খাবার: সুবিধার জন্য অল্প চিড়া ও গুড়, দুই-তিন প্যাকেট বিস্কুটও সঙ্গে রাখা যেতে পারে। যাত্রাপথে বিশেষ করে আরাফাত ও মিনায় খাবার পৌঁছতে বিলম্ব হলে এগুলো কাজে আসবে। কারণ গত হজে এসব জায়গায় দোকানের অনুমতি দেওয়া হয়নি।

১৪) ব্যক্তিগত ক্রোকারিজ সামগ্রী: চা-কফি পানে অভ্যস্ত ব্যক্তিরা কফির উপকরণ সঙ্গে নেবেন। সেই সঙ্গে মেলামাইনের থালা একটা, গ্লাস একটি, মগ একটি, চা চামচ একটি, ফল কাটার ছোট চাকু একটি। কোমর বেল্ট, টাকার ব্যাগ, গলায় ঝোলানো ব্যাগ—এগুলো বিভিন্ন সংস্থা প্রচার ও সওয়াবের নিয়তে হাদিয়া দিয়ে থাকে। তাই এগুলো আগে কেনার দরকার নেই।

১৫) তাওয়াফ তাসবিহ: তাওয়াফের সময় নির্ভুল হিসাব রাখার জন্য একটি তাওয়াফ তাসবিহ সংগ্রহে রাখা যেতে পারে।

১৬) সৌদি আরবের সিম: অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও সৌদি এয়ারপোর্টে বিভিন্ন কম্পানি মোবাইলের সৌদি সিম ফ্রি উপহার দেয়। না পেলে মোবাইল সিম মক্কা-মদিনায় কিনতে পাওয়া যায়। আর সিমের রিচার্জ কার্ড সেখানকার মুদি দোকান বা ‘বাকালা’গুলোতে সহজে পাওয়া যায়। অনেক সময় সিম বিক্রেতারা রিচার্জ কার্ড না রাখায় হাজিরা বিড়ম্বনায় পড়ে যান।  

তবে হজের সফরে পুণ্যভূমিতে একান্ত বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া মোবাইলে কথা না বলাই উত্তম। এতে পবিত্র কাবায় মনঃসংযোগ বিঘ্নিত হয় এবং কোনো খারাপ সংবাদ পেলে মন উতলা হতে পারে। বিশেষ করে ইহরাম অবস্থায় এ ব্যাপারে খুবই সতর্ক থাকা দরকার।

১৭) গামছা ও হাওয়ার বালিশ: এ ছাড়া প্রয়োজনীয় তোয়ালে বা গামছা, একটি চাদর, একটি কাঁথা, একটি ছোট বাতাসের বালিশ নেওয়া যেতে পারে। এগুলো মুজদালিফায় কাজে আসতে পারে।

১৮) অন্যান্য কাপড়: পুরুষরা হজে হালাল অবস্থায় পরার জন্য কমপক্ষে তিনটি পাঞ্জাবি, দুটি পায়জামা, দুটি লুঙ্গি, দুটি গেঞ্জি বা ফতুয়া সঙ্গে নেওয়া যেতে পারেন। মহিলারা সব সময় পরার জন্য কমপক্ষে চার সেট সালোয়ার-কামিজ, স্কার্ফ ও দুটি বোরকা, হাতমোজা এবং মোজা সঙ্গে নিতে পারেন।

এগুলো আগে থেকে থাকলে নতুন করে কেনার দরকার হবে না। এছাড়া কাউন্টিং তাসবিহ, মেসওয়াক ইত্যাদি সাধারণত মানুষের কাছে থাকে, যদি না থাকে তাহলে এগুলো সংগ্রহ করা যেতে পারে।

১৯) আতর: হালাল অবস্থায় ব্যবহারের জন্য পছন্দমতো আতর সংগ্রহ করা যেতে পারে।

উল্লিখিত উপকরণগুলো বায়তুল মোকাররম ও হাজি ক্যাম্প এলাকায় সহজে পাওয়া যেতে পারে। তাছাড়া বিভিন্ন অনলাইন শপে এখন প্রয়োজনীয় উপকরণগুলো একসঙ্গে পাওয়া যায়। শুধু গুগলে বা ফেসবুকে ‘ইহরাম প্যাকেজ’, ‘হজ প্যাকেজ’ বা ‘হজের উপকরণ’ ইত্যাদি লিখে সার্চ দিলে সহজেই পাওয়া যেতে পারে। প্রডাক্ট লিস্ট, স্থায়ী অফিস ইত্যাদির তথ্য সংগ্রহের পর তাদের সঙ্গে কথা বলে বিশ্বস্ত মনে হলে তাদের থেকেও সংগ্রহ করা যেতে পারে।

আল্লাহ তাআলা হজযাত্রীদের সকল প্রয়োজন পূরণ করে দিন, সবাইকে সুস্থতা দান করুন এবং তাঁর মেহমানদের তিনি কবুল করে নিন। আমিন।

হজের সময়, হজে যাওয়ার প্রস্তুতি, হজ্জের প্রয়োজনীয় জিনিস, হাজীদের ব্যাগ, হজ্জে যাওয়ার প্রস্তুতি, ইহরামের কাপড়ের দাম, ইহরামের কাপড় কোথায় পাওয়া যায়, ইহরামের কাপড়ের সাইজ, মহিলাদের ইহরামের কাপড়, ইহরামের কাপড়ের দাম, এহরামের কাপড় কতটুকু, ইহরাম বাধার আগে গোসল করা কি, ইহরাম বাধা কি ফরজ, মহিলাদের হজ্জের নিয়ম