images

ইসলাম

গিবতের গুনাহ থেকে মুক্তি পেতে এই ৫টি কাজ করুন

ধর্ম ডেস্ক

০৮ মে ২০২৩, ০৬:১৮ পিএম

গিবত বা পরনিন্দা ঘৃণিত অভ্যাস। সাধারণ মানুষ দূরের কথা, অনেক দীনদার-পরহেজগারও এ ব্যাধিতে আক্রান্ত। ‘গিবত হলো তোমার ভাই সম্পর্কে এমন কিছু আলোচনা করা, যা সে অপছন্দ করে।’ (মুসলিম: ৬৪৮৭)

ইসলামের দৃষ্টিতে যে ব্যক্তি গিবত শোনে সেও গিবতের পাপের অংশীদার হয়ে যায়। তাই যেই আসরে গিবত হয়, সেই আসর বর্জন করা জরুরি। হাদিস শরিফে আছে, যখন কেউ আপনার সঙ্গে বসে অন্যের গিবত করে তখন তাকে থামতে বলুন, আল্লাহর হুকুমের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে সাবধান করুন। আর তাতেও যদি কাজ না হয় তবে সেখান থেকে সরে আসুন। কোনোভাবেই গিবত শোনা যাবে না। আল্লাহ বলছেন, ‘সৎকর্ম ও খোদাভীতিতে একে অন্যের সাহায্য করো। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না। আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা।’ (সুরা মায়েদা: ২)

মনে রাখতে হবে, পবিত্র কোরআনে গিবতের ভয়াবহতা সম্পর্কে যে কঠিন শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে; অন্য কোনো গুনাহের ক্ষেত্রে ততটা রুক্ষভাষা ব্যবহার করা হয়নি। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে ‘তোমরা গুপ্তচরবৃত্তি করো না, পরস্পর গিবত করো না। তোমাদের মধ্যে কেউ কি মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়াকে পছন্দ করো? অবশ্যই তোমরা তা পছন্দ করবে না।’ (সুরা হুজরাত: ১২) 

প্রিয়নবী (স.) ইরশাদ করেন, ‘যখন আমাকে মেরাজে নেওয়া হলো, সেসময় এমন কিছু মানুষের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলাম, যাদের নখ ছিল তামার, যা দিয়ে তারা নিজেদের মুখমণ্ডল ও বক্ষদেশ খামচে ক্ষত-বিক্ষত করছিল। আমি প্রশ্ন করলাম, এরা কারা? (হে জিবরাইল!) তিনি বললেন, এরা ওইসব লোক যারা মানুষের গোশত ভক্ষণ করত অর্থাৎ গিবত করত ও তাদের সম্ভ্রম লুটে বেড়াত।’ (রিয়াজুস সালেহিন: ১৫৩৪)

নিচে গিবতকারীর জন্য কিছু করণীয় তুলে ধরা হলো যেগুলো আমল করলে গিবতের ভয়াবহ পরিণাম থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।

১) তাওবা-ইস্তেগফার করা
কারো গিবত করে ফেললে প্রথমেই যে কাজটি করতে হবে সেটি হলো কায়মনোবাক্যে আল্লাহর কাছে তাওবা-ইস্তেগফার করা। গুনাহের জন্য লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়ে নিজেকে ভর্ৎসনার মাধ্যমে সেই ইস্তেগফার করতে হবে এবং ভবিষ্যতে যেন এমন গুনাহ না হয় সেজন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হতে হবে। এটি হলো গিবতের ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রথম পদক্ষেপ। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘কিন্তু যারা তাওবা করে এবং নিজেদের সংশোধন করে আর সত্যকে সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করে, এরাই তারা যাদের তাওবা আমি কবুল করি, আমি অতিশয় তাওবা গ্রহণকারী, পরম দয়ালু।’ (সুরা বাকারা: ১৬০)

২) যদি সম্ভব হয় ক্ষমা চেয়ে নেওয়া
যার গিবত করেছেন যদি তার কাছে যাওয়ার সুযোগ থাকে তাহলে তার কাছে গিয়ে তার হক নষ্ট করার কারণে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে। তবে যদি এতে সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে কিংবা আরও বেশি ভুল বুঝার আশঙ্কা থাকে তাহলে অনেক আলেমের মতে মাফ চাইতে না যাওয়াই উত্তম। কিন্তু যেকোনো উপায়ে মাফ চেয়ে নেওয়াই সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য মত। কেননা গিবত করার মাধ্যমে বান্দার হক নষ্ট হয়। আর বান্দার হক নষ্ট করার কারণে কেয়ামতের ময়দানে আটকা পড়তে হবে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের ওপর জুলুম করেছে সে যেন আজই মাফ চেয়ে নেয়, তার ভাইয়ের জন্য তার কাছ থেকে নেকি কর্তন করে নেওয়ার আগে। কেননা সেখানে (হাশরের ময়দানে) কোনো দিনার বা দিরহাম পাওয়া যাবে না। তার কাছে যদি নেকি না থাকে তবে তার (মজলুম) ভাইয়ের গুনাহ এনে তার উপর চাপিয়ে দেওয়া হবে।’ (বুখারি: ৬৫৩৪)

৩) ওই ব্যক্তির জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা
হাদিসে এসেছে, কেউ যদি কোনো মুসলিম ভাইয়ের জন্য অগোচরে দোয়া করে তাহলে তার জন্য ফেরেশতারাও দোয়া করেন। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যখন কোনো মুসলিম তার ভাইয়ের জন্য তার পশ্চাতে দোয়া করে, তখন তার (মাথার কাছে নিযুক্ত) একজন ফেরেশতা তাঁকে লক্ষ্য করে বলে, তোমার জন্যও এমনই হোক’। (সহিহ মুসলিম: ২৭৩২) সুতরাং যার গিবত করেছেন তার জন্য যদি দোয়া করেন আল্লাহর ফেরেশতারা আপনার গুনাহ মাফের জন্যও আল্লাহর কাছে দোয়া করবেন। তাছাড়া এমন দোয়াকে গিবতের কাফফারা বলা হয়েছে হাদিসে। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, গিবতের কাফফারা হলো তুমি যার গিবত করেছ, তার জন্য মাগফিরাতের দোয়া করবে। তুমি এভাবে বলবে, 'হে আল্লাহ! তুমি আমার ও তার গুনাহ মাফ করে দাও।’ (বায়হাকি)। যদিও হাদিসটিকে জয়িফ বলেছেন আলেমরা, তবুও এই হাদিসের ওপর আমল করতে কোনো অসুবিধা নেই। কেননা অন্যান্য হাদিসের সঙ্গে এটি সাংঘর্ষিক নয়।

৪) মজলিস শেষ করে দোয়া পাঠ করা
যেই মজলিসে গিবত করা হয়েছে সেই মজলিস থেকে উঠার সময় বিশেষ দোয়া পাঠ করা। এতে করে হাদিস অনুযায়ী, মজলিসের ভুল-ভ্রান্তি ক্ষমা করে দেওয়া হবে। দোয়াটি হলো— سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوبُ إِلَيْكَ ‘সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা আশহাদু আন লা ইলাহা ইল্লা আনতা আসতাগফিরুকা ওয়া আতুবু ইলাইক।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আমি আপনার সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা করছি। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আপনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। আমি আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং আপনার কাছে তাওবা করছি।’ (তিরমিজি: ৩৪৩৩)

সুতরাং দোয়াটি পাঠ করার মাধ্যমে মজলিসের গুনাহ থেকে অনেকটা নিষ্কৃতি পাওয়া যাবে ইনশা আল্লাহ। 

৫) মজলিসে ওই ব্যক্তির প্রশংসা করা
মজলিসে যে ব্যক্তির গিবত করা হয়েছে তার কোনো প্রশংসা করা হলে সেটি গিবতের গুনাহ থেকে ক্ষমা পাওয়ার কারণ হতে পারে। তাই ইবনে তাইমিয়া ও ইমাম নববি (রহ)-এর মতো প্রসিদ্ধ আলেমদের পরামর্শ হলো—যেই মজলিসে গিবত করা হয়েছে ওই মজলিসেই একই ব্যক্তির গুণকীর্তন করা উচিত, যাতে গিবতের গুনাহের অনেকটা ক্ষতিপূরণ হয়ে যায়। পবিত্র কোরআনে এসেছে, اِنَّ الۡحَسَنٰتِ یُذۡهِبۡنَ السَّیِّاٰتِ ‘নিশ্চয়ই ভালো কাজ খারাপ কাজের ক্ষতিপূরণ হয়’ (সুরা হুদ: ১১৪)। কাজেই কারো গিবত হয়ে থাকলে তার গুণগুলোর উল্লেখ করাও উত্তম।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কারো গিবত করে ফেললে উল্লেখিত আমলগুলো করার তাওফিক দান করুন। আমিন।