images

ইসলাম

মসিবত যেভাবে জান্নাতের ওসিলা

ধর্ম ডেস্ক

৩১ মার্চ ২০২২, ০৫:০৫ পিএম

মুমিন, মুনাফিক, বেদ্বীন—কেউই মসিবত বা বিপদাপদের ঊর্ধ্বে নয়। সম্পদের ক্ষতি, প্রিয়জনকে হারানো, মান-সম্মান হারানো ও অসুস্থতাসহ নানা মসিবতের শিকার হতে হয় প্রত্যেক মানুষকেই। কিন্তু কিছু মানুষের বিপদ হয়ে যায় রহমতস্বরূপ। কঠিন বিপদের দিনে কাজে আসবে তার মসিবতলো। ওসব ভাগ্যবান মুমিন তারাই, যারা কঠিন বিপদে ধৈর্য ধরেন এবং আল্লাহর ফায়সালার ওপর সন্তুষ্ট থাকেন।

রাসুলুল্লাহ (স.) আরো ইরশাদ করেছেন, ‘যখন আল্লাহ তাআলা কোনো মুসলিম বান্দাকে তার শারীরিক কষ্ট বা রোগ দিয়ে পরীক্ষা করেন, তখন আল্লাহ বলেন—

তার সৎকাজগুলো লেখো, যে কাজগুলো সে (সুস্থ অবস্থায়) করত; অতঃপর তিনি যদি তাকে রোগমুক্ত করেন, তাহলে তিনি (রহমতের পানি দিয়ে) ধুয়ে তাকে পবিত্র করে দেন; আর যদি তাকে মৃত্যুর মাধ্যমে উঠিয়ে নেন, তিনি তাকে ক্ষমা করে দেন এবং তার প্রতি রহম করেন।’(আহমদ: ৩/১৪৮, ২৩৮, ২৫৮)

এখানে মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে ধৈর্যধারণ। বিপদাপদ তখনই রহমত হয়ে ধরা দেবে, যখন সবর করা হবে। আল্লাহ বলেন, ‘আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব সামান্য ভয় ও ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফসলের ক্ষতি দিয়ে। আর আপনি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দিন। যাদের ওপর কোনো মসিবত আসলে বলে, ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ নিশ্চয় আমরা আল্লাহর, আর আমরা অবশ্যই তার কাছেই ফিরে যাব।’ (সুরা বাকারা: ১৫৫-১৫৬)

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন,

إِنَّ عِظَمَ الجَزَاءِ مَعَ عِظَمِ البَلاَءِ، وَإِنَّ اللَّهَ إِذَا أَحَبَّ قَوْمًا ابْتَلاَهُمْ، فَمَنْ رَضِيَ فَلَهُ الرِّضَا، وَمَنْ سَخِطَ فَلَهُ السَّخَطُ.

‘সত্যি, বড় পুরস্কার তো বড় বিপদের সঙ্গেই রয়েছে। আর আল্লাহ যখন কোনো সম্প্রদায়কে ভালোবাসেন, তখন অবশ্যই তাদের পরীক্ষায় ফেলেন। তখন যে সন্তুষ্ট থাকে তার জন্যেই তাঁর সন্তুষ্টি, আর যে অসন্তুষ্ট হয়ে পড়ে, তার প্রতি তাঁরও অসন্তুষ্টি। (জামে তিরমিজি: ২৩৯৬)

বস্তুত আল্লাহ তাআলা যাকে যত বেশি ভালোবাসেন, তাকে ততবেশি মসিবত দিয়ে পরীক্ষা করেন। হজরত ইবরাহিম (আ.)-কে খুব ভালোবাসতেন বলেই কঠিন সব পরীক্ষার সম্মুখীন করেছিলেন। হাদিসে এসেছে—

‘মানুষের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন মসিবতের শিকার হয়েছেন নবীগণ; অতঃপর ক্রমানুসারে পরবর্তী ধাপের সৎব্যক্তিগণ, ব্যক্তি পরীক্ষা বা কষ্টের সম্মুখীন হবে তার দ্বীনদারী অনুসারে; সুতরাং সে যদি তার দ্বীনের ব্যাপারে দৃঢ়তার সাথে অটল থাকে, তাহলে তার বিপদ-আপদও কঠোর থেকে কঠোরতর হবে; আর যদি সে তার দ্বীনের ব্যাপারে আপোষকামী হয়, তাহলে সে পরীক্ষা বা কষ্টের সম্মুখীন হবে তার দ্বীনদারী অনুসারে; সুতরাং বান্দা মসিবতে আক্রান্ত হতেই থাকবে, যতক্ষণ না তা তাকে জমিনের উপরে গুনাহবিহীন অবস্থায় চলাফেরা করাতে পারবে।’ (তিরমিজি: ২৩৯৮; ইবনে মাজাহ: ৪০২৩; দারেমি: ২/৩২০; ইবনে হিব্বান: ২৯৮,২৯৯; আহমদ: ১/১৭২, ১৭৪, ১৮০)

ধৈর্যশীল মুমিনদের একটি অভ্যাস হচ্ছে, ছোট-বড় সকল বিপদে তাদের মুখ থেকে উচ্চারিত হয় ‘ইন্নালিল্লাহ’। প্রিয়নবী (স.)-ই তাঁর প্রিয় উম্মতকে ‘ইন্নালিল্লাহ’ পড়তে শিখিয়েছেন। ‘যখন তোমাদের কারও জুতার ফিতা ছিঁড়ে যায়, তখনও তোমরা ‘ইন্নালিল্লাহ’ পড়ো। কেননা এটিও একটা বিপদ।’ (শুয়াবুল ঈমান, বায়হাকী: ৯২৪৪; মুসনাদে বাযযার: ৩৪৭৫)

পবিত্র কোরআনের ভাষায়ও ধৈর্যশীলদের পরিচায়ক এটিই। ‘যারা যেকোনো বিপদে আক্রান্ত হলে বলে ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন—সন্দেহ নেই, আমরা আল্লাহরই, আর আমরা তো তাঁর কাছেই ফিরে যাব।’ (সুরা বাকারা: ১৫৬)

‘তাদের ওপরই রয়েছে তাদের প্রভুর পক্ষ থেকে শান্তি ও অনুগ্রহ, আর তারাই কেবল সঠিক পথপ্রাপ্ত।’ (সুরা বাকারা: ১৫৭)

দুনিয়াতে যত মসিবত, এরমধ্যে প্রিয়জন হারানোই সম্ভবত সবচেয়ে কঠিন। প্রিয়জন হতে পারে সন্তান, হতে পারে মা-বাবা কিংবা অন্য কেউ। এ কঠিন বিপদে যারা সওয়াবের আশায় সবর করবেন, তাদের পুরস্কার ঘোষণায় স্বয়ং রাব্বুল আলামিন বলেন—

مَا لِعَبْدِي الْمُؤْمِنِ عِنْدِي جَزَاءٌ إِذَا قَبَضْتُ صَفِيَّهُ مِنْ أَهْلِ الدُّنْيَا ثُمَّ احْتَسَبَهُ إِلاَّ الْجَنَّةُ.

‘আমি যখন আমার মুমিন বান্দার কোনো আপনজনকে মৃত্যু দিই, আর সে সবর করে, তখন আমার কাছে তার একমাত্র প্রতিদান হলো জান্নাত। (সহিহ বুখারি: ৬৪২৪)

তাই বিপদ যেমনই হোক, যত বড়ই হোক, মুমিনের উচিত আল্লাহ পাকের ফয়সালা মেনে নিয়ে ধৈর্যধারণ করা। চরম বিপদের মধ্যেও الحمد لله علي كل حال (সকল অবস্থায় আল্লাহর প্রশংসা) বলা।

আবার, এমন যেন না হয় যে, সবরের ফজিলত যেহেতু বেশি, তাই আল্লাহর কাছে বিপদ চেয়ে বসলাম। এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে হাদিস শরিফে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন—

‘হে লোকসকল! তোমরা শত্রুর মুখে পড়ার কামনা করো না। বরং আল্লাহর কাছে আফিয়াত ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করো। তবে যখন তোমরা শত্রুর মুখোমুখি হয়ে পড়বে তখন সবর করো।’ (সহিহ বুখারি: ২৯৬৫)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বিপদে ধৈর্যধারণ করার এবং দুনিয়া ও আখেরাতে ধৈর্যের পরিপূর্ণ বিনিময় দান করুন। আমিন।