images

ইসলাম

ধনী হওয়ার আমল

ধর্ম ডেস্ক

৩১ মার্চ ২০২২, ১২:৪৯ পিএম

সবাই চায় তার জীবনে প্রাচুর্য আসুক। কিছু মানুষ তো অর্থনৈতিক দুশ্চিন্তায় এমন অস্থির যে, বর্ণনা করারও শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু, ভুলে গেলে চলবে না— সকল সৃষ্টির জীবিকার দায়িত্ব মহান আল্লাহ নিজেই নিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন—

‘আর আমি তো বলেছি, তোমরা তোমাদের প্রভুর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয় তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত করবেন এবং তিনি তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দ্বারা সমৃদ্ধ করবেন।’ (সুরা নুহ: ১০-১২)

উল্লেখিত আয়াত থেকে বোঝা যায়, ইস্তেগফারের মাধ্যমে যেমন আখিরাতের মুক্তি পাওয়া যায়, তেমনি দুনিয়াতেও এর সুফল অপরিসীম। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন—

‘যে ব্যক্তি নিজের জন্য ‘ইস্তেগফার’ (ক্ষমা প্রার্থনা) আবশ্যক করে নেবে, আল্লাহ তাকে সব দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দেবেন, সব সংকীর্ণতা থেকে উদ্ধার করবেন এবং তাকে এমনভাবে জীবিকার ব্যবস্থা করবেন যা তার চিন্তার বাইরে।’ (সুনানে নাসায়ি: ৩৮১৯)

অন্য হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি বেশি বেশি ইস্তেগফার করবে, আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।’ (মুস্তাদরাকে হাকেম: ৭৬৭৭)

একটি কথা মনে রাখতে হবে, যতই ধনী হোন বা জীবন প্রাচুর্যময় হোক অল্পতে তুষ্ট থাকার গুণ অর্জন করতে না পারলে কোনো স্বাদই পাবেন না। মূলত আসল কল্যাণ ও সফলতা নিহিত অল্পে তুষ্টিতে। বিলাসিতা, উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও অতিভোগে শান্তি নেই। বরং সীমাতিরিক্ত বিলাসী জীবন মুমিনের অন্তর থেকে আল্লাহভীতি দূর করে দেয়। ইবাদতের আগ্রহ নষ্ট করে ফেলে। মানুষকে চরম হতাশাগ্রস্ত করে তোলে।

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইসলামের দিকে হেদায়েতপ্রাপ্ত হয়েছে, যাকে প্রয়োজন মাফিক রিজিক প্রদান করা হয়েছে এবং যে তাতেই পরিতুষ্ট থাকে, সে-ই সফলকাম হয়েছে। (ইবনে মাজাহ: ৪১৩৮)

তাই অল্পে তুষ্ট হওয়ার মানসিক শক্তি বৃদ্ধি করতে হবে। যেকোনো দুঃখ-কষ্ট ও অভাব-অনটনে মনোবল অটুট রাখতে হবে। সবসময় হৃদয়ে প্রশস্ততা অনুভব করার অভ্যাস করতে হবে। কেননা ধনাঢ্যতা ও দারিদ্র্যতা মানুষের মনের ওপর নির্ভর করে। তাই রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, প্রকৃত ধনী আত্মার ধনী। (বুখারি: ৬৪৪৬)

উপরোক্ত হাদিসের একটি শিক্ষা হচ্ছে, আল্লাহ যা দিয়েছেন, তাতে সন্তুষ্ট থাকতে পারলেই আসল শান্তি মিলবে। সম্পদশালী না হয়েও সম্পদশালীর সুখ অর্জিত হবে। এরপর আল্লাহ তাআলাও সেই বান্দাকে বাড়িয়ে দেওয়া শুরু করবেন। মহান আল্লাহ এ প্রসঙ্গে বলেন—

‘যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় করো, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের বাড়িয়ে দেবো...।’ (সুরা ইবরাহিম: ৭)

আল্লাহ তাআলা চাইলে সবাইকে সম্পদশালী করতে পারতেন। কিন্তু কেন করেননি—তার উত্তর তিনি পবিত্র কোরআনে বলে দিয়েছেন। ১) যাতে একে অন্যের সহযোগিতা করতে পারে, উপকৃত হতে পারে ২) অহংকারের পরীক্ষা, অহংকারী হতে না দেওয়া ও বিপর্যয়রোধে ৩) অধিকার আদায় করা ও সবরের পরীক্ষা ৪) মুমিনদের পরকাল সমৃদ্ধ করা এবং বেঈমানদের দুনিয়ায় দিয়ে দেওয়া ৫) মানবসমাজ টিকিয়ে রাখার স্বার্থে, কারণ অবাধ্য ধনী সম্প্রদায়কেই আল্লাহ বিভিন্ন সময় ধ্বংস করেছেন। (দেখুন: যুখরুফ: ৩২; কাসাস: ৭৬; শুরা: ২৭; ত্বহা: ১৩১; বনি ইসরাইল: ১৬, ১৮, ১৯)

অতএব, মুমিনের উচিত দুনিয়ার ধন-সম্পদকে বেশি প্রাধান্য না দিয়ে পরকালীন সমৃদ্ধিকে প্রাধান্য দেওয়া। তবে, দুনিয়ায় যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু যেন আল্লাহ দান করেন, সেই দোয়া করতে হবে। প্রয়োজন অপূরণ থাকলেও ঈমানের বিশুদ্ধ চর্চায় আঘাত লাগে এবং ঋণ অবস্থায় মৃত্যু হতে পারে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বর্ণিত হাদিস থেকে জানা যায়, প্রিয়নবী (স.) এরকম একটি দোয়া পড়তেন, যেখানে সামর্থ্য বা সচ্ছলতা চাওয়া হয়েছে। দোয়াটি হলো—

اَللَّهُمَّ اِنِّى أَسْألُكَ الْهُدَى وَالتُّقَى وَالْعَفَافَ وَالْغِنَى ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল হুদা; ওয়াত তুক্বা; ওয়াল আফাফা; ওয়াল গেনা’ অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে হেদায়েত কামনা করি এবং আপনার ভয় তথা তাকওয়া কামনা করি এবং আপনার কাছে সতীত্ব তথা নৈতিক পবিত্রতা কামনা করি এবং সম্পদ তথা সামর্থ্য বা সচ্ছলতা কামনা করি। (মুসলিম: ২৭২১; তিরমিজি: ৩৪৮৯; ইবনে মাজাহ: ৩৮৩২; মুসনাদে আহমদ: ৩৬৮৪, ৩৮৯৪)

তাই আমরাও উল্লেখিত দোয়াটির ওপর আমল করতে পারি। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দুনিয়া ও আখেরাত উভয়জাহানে কল্যাণ দান করুন। আমিন।