ধর্ম ডেস্ক
২৭ এপ্রিল ২০২৩, ০৩:৫৫ পিএম
বয়সের ভারে ন্যুয়ে পড়েছেন আব্দুল কাদির বখশ। ৮২ বছরের এই বৃদ্ধ ডিম-লাকড়ি বিক্রি করে, ছাগল চরিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। কঠিন দারিদ্রের মধ্যেও মনে পুষে রাখা ছিল পবিত্র কাবা ও রওজা শরিফ দেখার স্বপ্ন। মোটেও হাল ছাড়েননি তিনি। এক এক করে অর্থ জমিয়েছেন দীর্ঘ ১৫ বছর। অবশেষে তাঁর স্বপ্ন পূরণ হলো। ওমরা পালন করে তিনি মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলেন। পাকিস্তানের বেলুচিস্তানের এই বৃদ্ধ জানান, বেলুচি ছাড়া অন্য ভাষা তিনি জানেন না, কিন্তু মহান রব তাঁর সব প্রার্থনা কবুল করেছেন।
গত রমজান মাসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। তাতে একজন বৃদ্ধকে পবিত্র মসজিদে নববিতে লাঠি হাতে একাকী ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। সাদা জুব্বা পরা এই বৃদ্ধের দৃষ্টিশক্তিও বেশ ক্ষীণ। তার হাঁটার ধরন থেকে মনে হচ্ছিল তিনি কাউকে হারিয়েছেন বা কিছু খুঁজে ফিরছেন। ভাইরাল ভিডিওটি কয়েক মিলিয়ন ভিউ হয়। তাঁর সাদাসিধে চলাফেরা ও সরল ব্যবহার নজর কাড়ে সবার। এমনকি সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমানের উপদেষ্টা তুর্কি আল-শেখ তাঁর খোঁজ চেয়ে টুইট করেন।
এদিকে কোনো ধরনের মুঠোফোন না থাকায় সেই ভিডিও সম্পর্কে একদম বেখবর সেই বৃদ্ধ। ওমরা শেষ করে গত শনিবার (২২ এপ্রিল) নিজ গ্রাম গোথ হাজি রহিম গ্রামে ফিরে যান। গাছের পাতা ও ঘাস দিয়ে তৈরি ঝুপড়িতে তাঁকে অভিনন্দন জানান পরিচিতজনরা। পরদিন আরব নিউজের সংবাদকর্মীর আলাপে প্রথমবার এ বিষয়ে জানতে পারেন তিনি।
বৃদ্ধ আবদুল কাদির বখশ বলেন, ‘আমার পাঁচ সন্তান রয়েছে। ডিম ও লাকড়ি বিক্রি করে জীবন চালাতে হত। আমাদের বসবাসের কোনো ঘর নেই; আমরা থাকি ঝুপড়িতে। অভাব-অনটনে আমাদের দিন পার হয়। আমার মদিনায় যাওয়ার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু এর জন্য আমার কোনো অর্থকড়ি ছিল না। আমি আল্লাহর কাছে সাহায্যের জন্য দোয়া করেছি। এরপর ছাগল পালন করে অর্থ সঞ্চয় করি এবং পাসপোর্ট করে ওমরা ভিসার আবেদন করি।
আবদুল কাদির বখশ আরও বলেন, ‘প্রথমবার মক্কা দেখে আমার খুশির সীমা ছিল না। আমি মনে করি আমার সব উদ্বেগ চলে গেছে। আমার অন্তর সন্তুষ্ট। আমার কোনো অভাব নেই। কারণ মক্কা ও মহানবী (স.)-এর রওজা জিয়ারতের বাসনা মঞ্জুর হয়েছে।’
মহানবী (স.)-এর রওজা শরিফে দোয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি সেখানে গিয়ে দোয়া করেছি, হে আল্লাহ, আপনি আমাকে পথ দেখিয়েছেন এবং আমাকে এখানে নিয়ে এসেছেন।’ সেখানেই কেউ একজন তার ভিডিও করে শেয়ার করে যা পরবর্তীতে ভাইরাল হয়ে যায়। মদিনা থেকে মক্কায় গিয়ে তিনি ওমরা কার্যক্রম সম্পন্ন করেন। পবিত্র কাবা প্রাঙ্গণের দোয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘হে আল্লাহ, আমি এই জায়গা চিনি না। তাই আপনি আমার পথপ্রদর্শক। আমাকে আপনি সঠিক পথে পরিচালিত করুন।’
তিনি জানান, তাঁর সব দোয়া কবুল করা হয়েছে। ওমরা থেকে ফেরার পর আবদুল কাদির বখশ ভবিষ্যতে হজ পালনের জন্য অর্থ সঞ্চয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কারণ হজ করাই তাঁর সবচেয়ে বড় ইচ্ছা।
সূত্র: আরব নিউজ