images

ইসলাম

‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর ওজন

ধর্ম ডেস্ক

২৬ এপ্রিল ২০২৩, ০৮:০৭ পিএম

‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ তিন শব্দের একটি ছোট্ট বাক্য। আল্লাহর কাছে এই ছোট্ট বাক্যটির মর্যাদা আসমান-জমিনের চেয়েও বেশি। হাদিসে এই বাক্যটিকে সর্বশ্রেষ্ঠ জিকির বলা হয়েছে। জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে বলতে শুনেছি, সর্বশ্রেষ্ঠ জিকির হলো-لا إله إلا الله ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’আর সর্বোত্তম দোয়া হলো- الْحَمْدُ للهِ আল-হামদুলিল্লাহ। (মেশকাত: ২৩০৬; তিরমিজি: ৩৩৮৩; ইবনে মাজাহ: ৩৮০০; মুসতাদরাকে হাকিম: ১৮৩৪)

এই কালেমার ওজন সম্পর্কে মুসতাদরাকে হাকেমের বর্ণনায় আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, মুসা (আ.) একবার আল্লাহর কাছে আরজ করেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাকে এমন একটি দোয়া শিখিয়ে দিন, যার মাধ্যমে আমি আপনার জিকির করব এবং আপনার কাছে প্রার্থনা করব। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বললেন- হে মুসা! তুমি (শুধু) বলো- لا إله إلا الله ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’, হজরত মুসা (আ.) বললেন, হে আল্লাহ! আপনার সব বান্দাই তো এই জিকির করে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন (আবারও) বললেন, তুমি বলো- لا إله إلا الله‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’হজরত মুসা (আ.) বললেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই’কিন্তু আমি চাইছি আমাকে বিশেষ একটি দোয়া শিখিয়ে দেবেন; যা কেবল আমার জন্য হবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বললেন, হে মুসা! আমি ছাড়া সাত আসমান, সাত জমিন ও তার মাঝে যা রয়েছে সবকিছু যদি এক পাল্লায় থাকে আর (শুধু) لا إله إلا الله ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ অন্য পাল্লায় থাকে, তাহলে لا إله إلا الله ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-এর পাল্লা ভারি হবে।' (মুসতাদরাকে হাকেম)

আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, আমরা রাসুলুল্লাহ (স.)-এর কাছে বসে ছিলাম। তখন বনভূমি থেকে সিজান রঙের (এক প্রকার মাছ) জুব্বা পরিহিত এক ব্যক্তি এসে নবী (স.)-এর মাথার কাছে দাঁড়াল এবং বলল, তোমাদের সাথি প্রত্যেক আরোহীকে অবদমিত করেছে বা আরোহীদের অবদমিত করার সংকল্প করেছে এবং প্রত্যেক রাখালকে সমুন্নত করেছে।

রাসুলুল্লাহ (স.) তার জুব্বার হাতা ধরে বলেন, আমি কি তোমাকে নির্বোধের পোশাক পরিহিত দেখছি না? অতঃপর তিনি বলেন, আল্লাহর নবী নুহ-এর ইন্তেকালের সময় উপস্থিত হলে তিনি তাঁর পুত্রকে বলেন, আমি তোমাকে একটি উপদেশ দিচ্ছি। আমি তোমাকে দুটি বিষয়ের আদেশ দিচ্ছি এবং দুটি বিষয় নিষেধ করছি। আমি তোমাকে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-এর নির্দেশ দিচ্ছি। কেননা সাত আসমান ও সাত জমিনকে যদি এক পাল্লায় তোলা হয় এবং অপর পাল্লায় ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ তোলা হয়, তবে সেই তাওহিদের পাল্লাই ভারী হবে। সাত আসমান ও সাত জমিন যদি একটি জটিল গ্রন্থির রূপ ধারণ করে, তবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ ও ‘সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহি’ তা চুরমার করে দেবে। কেননা তা প্রত্যেক বস্তুর নামাজ এবং সবাই এর বদৌলতে রিজিক লাভ করে থাকে। আর আমি তোমাকে বারণ করছি শিরক ও অহংকারে লিপ্ত হতে।

আমি বললাম অথবা বলা হলো, হে আল্লাহর রাসুল! শিরক তো আমরা বুঝলাম, তবে অহংকার কী? আমাদের মধ্যকার কারো যদি কারুকাজখচিত চাদর থাকে, আর তা পরিধান করে? তিনি বলেন, না। সে আবার বলল, যদি আমাদের কারো সুন্দর ফিতাযুক্ত সুন্দর একজোড়া জুতা থাকে? তিনি বলেন, না। সে পুনরায় বলল, যদি আমাদের কারো আরোহণের একটি জন্তুযান থাকে? তিনি বলেন, না। সে বলল, যদি আমাদের কারো বন্ধু-বান্ধব থাকে এবং তারা তার সঙ্গে ওঠাবসাও করে? তিনি বলেন, না। সে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! তাহলে অহংকার কী? তিনি বলেন, সত্য থেকে বিমুখ থাকা এবং মানুষকে হেয় জ্ঞান করা। (আল-আদাবুল মুফরাদ: ৫৫০)

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে বিশুদ্ধ মনে আল্লাহর একত্ববাদের ঘোষণা দেওয়ার তাওফিক দিন। বেশি বেশি কালেমার জিকির করার তাওফিক দান করুন। আমিন।