ধর্ম ডেস্ক
২৪ এপ্রিল ২০২৩, ০১:৫৯ পিএম
পবিত্র রমজানে যারা সিয়াম সাধনা করেছেন, তাদের জন্য শুভ সংবাদ হলো- শাওয়াল মাসে ছয়টি নফল রোজা রাখলেই মিলবে সারাবছর রোজা রাখার সওয়াব। এ ছয়টি রোজা রাখা মোস্তাহাব। এর ফজিলত বিশুদ্ধ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। হজরত আবু আইয়ুব আনসারি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসের ফরজ রোজাগুলো রাখল, অতঃপর শাওয়াল মাসে আরও ছয়টি রোজা রাখল, সে যেন সারাবছর ধরেই রোজা রাখল। (সহিহ মুসলিম: ১১৬৪)
এই ছয়টি রোজা শাওয়াল মাসের যেকোনো দিন থেকে শুরু করা যায়। এর কোনো নির্দিষ্ট তারিখ নেই, বরং শাওয়ালের প্রথম দিন ঈদুল ফিতরের দিনটি বাদ দিয়ে শাওয়ালের যেসব দিনে খুশি, সেসব দিনে ছয়টি রোজা রাখলেই হাদিসে বর্ণিত ফজিলত পাওয়া যাবে।
শাওয়ালের ৬ রোজা রাখার নিয়ম
হাদিসে প্রিয়নবী (স.) শাওয়াল মাসের প্রথম দিকে, মধ্যভাগে বা শেষাংশে নির্দিষ্ট করে রোজা রাখার কথা বলেননি। আবার রোজা ছয়টি লাগাতার রাখার নির্দেশনাও দেননি। তাই বিজ্ঞ ফিকহবিদ ও আলেমদের অভিমত হলো— ঈদের দিনটি বাদ দিয়ে শাওয়াল মাসের যেকোনো ছয়দিনে রোজা রাখলেই উল্লিখিত সওয়াব লাভ করা যাবে। সুতরাং ধারাবাহিকভাবে রাখার ক্ষেত্রে যখন থেকে খুশি শুরু করা যাবে, আবার বিরতি দিয়ে দিয়ে ছয়টি রোজা পূরণ করতে পারলেও হাদিসে বর্ণিত সওয়াব পাওয়া যাবে।
মনে রাখতে হবে, শাওয়ালের ৬ রোজায় বছরজুড়ে রোজা রাখার ফজিলত ওই ব্যক্তির জন্যই কার্যকর হবে, যে ব্যক্তি রমজান মাসজুড়ে ফরজ রোজা আদায় করেছেন, একইসঙ্গে শাওয়ালের রোজাও পালন করেন।
শাওয়ালের ৬ রোজা কাজা রোজার আগে নাকি পরে?
যাদের ভাংতি রোজা আছে, অসুস্থতা কিংবা নারীদের হায়েজ-নেফাসের কারণে রমজানের রোজা অপূর্ণ থাকে, তাদের জন্য নিয়ম ও করণীয় হলো—‘শাওয়াল মাসে তাদের ভাংতি রোজাগুলো আগে পূর্ণ করে নেবে। তারপর তারা শাওয়ালের ৬ রোজা পালন করবে। কেননা ‘..যার ওপর কাজা রয়ে গেছে সে রোজা পুর্ণ করেছে বলে গণ্য হবে না যতক্ষণ ওই রোজাগুলোর কাজা আদায় না করে।’ (আল মুগনি: ৪৪০) সুতরাং আগে রমজানের রোজা পূর্ণ করবে, তারপর শাওয়ালের ৬ রোজা রাখবে—তবেই সারাবছর রোজা রাখার সওয়াব মিলবে।
অনেকের রমজানের কাজা পূরণ করতে সারামাস লেগে যেতে পারে (যেমন নেফাসগ্রস্ত নারী যদি পুরো রমজানে একটি রোজাও না রাখতে পারেন), তাদেরকে পুরো শাওয়াল মাসে কাজা রোজা রাখতে হবে। তারা জিলকদ মাসে শাওয়ালের ৬ রোজা রাখতে পারবে এবং শাওয়ালের বিশেষ ফজিলতও পাবে। কেননা সে শরিয়তসম্মত ওজরের কারণে বাধ্য হয়ে এই বিলম্ব করেছে। (ফতোয়া সমগ্র ১৯/২০, ফতোয়া নং-৪০৮২ ও ৭৮৬৩)
তবে, আরেকদল আলেমের মতে, কাজা রোজার সংখ্যা বেশি হয়ে গেলে আগে শাওয়ালের ৬ রোজা রাখা উত্তম। কেননা শাওয়াল শেষ হয়ে গেলে অন্যমাসে এই ৬ রোজার ফজিলত নেই। কিন্তু কাজা রোজা বছরের যেকোনো সময় রাখলেই আদায় হয়ে যায়। তাছাড়া, শাওয়াল মাসের ৬ রোজার ফজিলত ওজরের কারণে অন্যমাসে পাওয়া যাবে—এমন কিছু হাদিসে নেই। তাই তাদের মতে, বিশেষ ফজিলত লাভের জন্য আগে শাওয়ালের ৬ রাজা রাখা উত্তম।
আমাদের পরামর্শ হলো— আমাদের মধ্যে যাদের ৫-১০টা বা ১০-১৫টা রোজা কাজা হয়ে গেছে, তারা আগে রমজানের কাজা রোজা রাখব এরপর শাওয়ালের ৬ রোজা রাখব। যেকোনোভাবে শাওয়ালের ৬ রোজা যেন আমাদের ছেড়ে দিতে না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখব। কেননা হাদিসে শাওয়াল মাসটির উল্লেখ রয়েছে। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রমজানের পরের মাস শাওয়ালে ৬ রোজা রাখার তাওফিক দান করুন। নবীজির সুন্নতের অনুসারী হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।