images

ইসলাম

আকাশপথে ইফতারের সময় নির্ধারণ হয় কীভাবে?

ধর্ম ডেস্ক

২৯ মার্চ ২০২৩, ০২:১১ পিএম

রমজানের রোজা ইসলামের অন্যতম রোকন এবং ফরজ ইবাদত। সাবালক ও শারীরিক-মানসিক সুস্থ মুসলমানদের জন্য এই বিধান। রমজানের রোজার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। হাদিসে কুদসিতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘মানুষের প্রতিটি কাজ তার নিজের জন্য, কিন্তু রোজা এর ব্যতিক্রম। রোজা শুধু আমার জন্য, আমিই এর প্রতিদান দেব।’ (মুসলিম: ২৭৬০)

‘যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে রমজানের একটি রোজা ভঙ্গ করবে, সে আজীবন সেই রোজার (ক্ষতিপূরণ) আদায় করতে পারবে না।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ৯৮৭৮)

সূর্যাস্তের পর রোজা ভাঙ্গার উদ্দেশ্যে কিছু খাওয়াকে ইফতার বলে। ইফতার করা সুন্নাত। খেজুর দ্বারা ইফতার করা মোস্তাহাব। খেজুর না পেলে পানি দ্বারা ইফতার শুরু করা উত্তম।

প্রশ্ন হলো—বিমানে ইফতারের সময় নির্ধারণ হয় কীভাবে? এর উত্তরে ফতোয়ার কিতাবে এসেছে— আকাশপথে বা বিমানের যাত্রীরা নিজেরা যখন সূর্যাস্ত হতে দেখবে তখনই ইফতার করবে। বিদেশের আকাশে থেকে নিজ দেশের সময় অনুযায়ী ইফতার করা যাবে না এবং যে এলাকার আকাশের উপর বিমান আছে সেখানের স্থলভাগের হিসেবেও নয়। এক্ষেত্রে যদি রোজা ২০-২২ ঘণ্টারও হয়ে যায় তবুও সূর্যাস্ত না দেখে ইফতার করার বিধান নেই। তবে হ্যাঁ, কোনো ব্যক্তি যদি উক্ত অবস্থায় রোজা পুরা করতে গেলে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার প্রবল আশঙ্কা থাকে তাহলে সে রোজা ভেঙে ফেলতে পারবে এবং পরে এ রোজা কাজা করে নেবে।

সফর অবস্থায় যদি সুবহে সাদিক শুরু হয় বা রাতের শেষভাগে সফরে থাকলে শুরু থেকেই রোজা না রাখার সুযোগ রয়েছে। পরবর্তীতে সেই রোজার কাজা করে নিতে হবে।

(বাদায়েউস সানায়ে: ২/২২৫; খিজানাতুল আকমাল: ১/৩২৭; তাবয়িনুল হাকায়েক: ২/১৬৫; রদ্দুল মুহতার: ২/৪২০; আলমাবসুত, সারাখসি: ৩/৯১)

এ সংক্রান্ত আরও কিছু মাসয়ালা 
-বিমানে ভ্রমণকারী ভূমিতে থাকা অবস্থায় সূর্যাস্তের সময় অনুযায়ী ইফতার করল, এরপর বিমান আকাশে ওড়ার পর সূর্য দেখা গেল, এক্ষেত্রে তাকে পানাহার থেকে বিরত হতে হবে না, কেননা তার রোজা শরিয়তসম্মতভাবে পূর্ণ হয়েছে। (শরহে উমদাতুল ফিকহ: ৫৬৪)

-নিজ দেশে ইফতার করার পর ওই দিন থাকতেই কেউ যদি অন্য দেশে পৌঁছে যায় এবং সেই দেশে দিবাভাগ বিরাজ করে, তবে পানাহার থেকে বিরত থাকার প্রয়োজন নেই এবং রোজা পূর্ণ হয়েছে বলে ধরা হবে। (প্রাগুক্ত)

-রোজা রেখে বিমানে পশ্চিম দিকে সফরের কারণে যদি দিন দীর্ঘায়িত হয় তাহলে তার রোজাও দীর্ঘায়িত হবে। পক্ষান্তরে যদি রোজা রেখে বিমানে পূর্বদিকে সফরের কারণে দিন ছোট হয়ে যায় তাহলে যখন সুর্য ডুবে যাবে তখনই সে ইফতার করে নিবে। (আহসানুল ফতোয়া: ৪/৭০-৭১, জাদিদ ফিকহি মাসায়িল: ১/১৭৮)

-আকাশপথের যাত্রীরা ইফতার করার জন্য চালাকি করে এমন স্তরে নিচে নামা জায়েজ নেই; যে স্তর থেকে সূর্য দেখা যায় না। যেহেতু এটি ছলচাতুরি। কিন্তু যদি উড্ডয়নের স্বার্থে নামেন এবং সূর্যের গোলকটি লুকিয়ে যায় তাহলে ইফতার করতে পারবেন। (শাইখ বিন বাযের মৌখিক ফতোয়া, দেখুন: ‘রোজার সত্তরটি মাসয়ালা’)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রোজার সকল বিধি-বিধান জানার, বুঝার ও মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।