images

ইসলাম

কোরআন-হাদিসের আলোকে সুখী হওয়ার ১৫ উপায়

ধর্ম ডেস্ক

১৫ মার্চ ২০২৩, ০৮:৫৪ পিএম

১) কৃতজ্ঞ হোন এবং শুকরিয়া আদায় করুন। যে ব্যক্তি মালিকের অকৃতজ্ঞ, সে কখনও সুখী হতে পারে না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘..যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় করো, তাহলে আমি অবশ্যই তোমাদের বাড়িয়ে দেব, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয়ই আমার আজাব বড় কঠিন।’ (সুরা ইবরাহিম: ৭)

২) দুনিয়ার রঙিন ও বড় আশা ছাড়ুন। কেননা দুনিয়ার পেছনে লালায়িত হওয়ার মধ্যে শান্তি রাখা হয়নি। নবীজি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার সব চিন্তাকে একই চিন্তায় (আখেরাতের চিন্তায়) কেন্দ্রীভূত করেছে, আল্লাহ তার দুনিয়ার চিন্তার জন্য যথেষ্ট। অন্যদিকে যে ব্যক্তি যাবতীয় পার্থিব চিন্তায় নিমগ্ন থাকবে, সে যেকোনো উন্মুক্ত মাঠে ধ্বংস হোক, তাতে আল্লাহর কিছু আসে যায় না। (ইবনে মাজাহ: ২৫৭)

তাছাড়া হায়াতের বিশ্বাস নেই; দীর্ঘ আশা করে লাভ কী? আল্লাহপাক বলেন, ‘কোনো প্রাণীই জানে না, আগামীতে সে কী উপার্জন করবে এবং কেউ জানে না তার মৃত্যু কখন কোথায় হবে।’ (সূরা লোকমান: ৩৪)

৩) অন্তরে শান্তি পাচ্ছেন না? তাহলে জিকির করুন। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা বিশ্বাস করেছে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের অন্তর প্রশান্ত হয়। জেনে রেখো, অন্তর আল্লাহর স্মরণেই প্রশান্তি লাভ করে।’ (সুরা রাদ: ২৮)

৪) জীবনে কষ্ট-ক্লেশের জন্য প্রস্তুত থাকুন। কেননা ‘পরীক্ষা যত কঠিন, পুরষ্কার তত বড়। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে পরীক্ষায় ফেলেন, যাদের তিনি ভালোবাসেন। যেমন হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর কাছ থেকে আল্লাহ তাআলা একের পর এক কঠিন পরীক্ষা নিয়েছেন। আল্লাহর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য তিনি তাঁর প্রাণপ্রিয় সন্তানকে আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করতেও দ্বিধাবোধ করেননি। ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন তারা উভয়ে আনুগত্য প্রকাশ করল এবং ইবরাহিম তার পুত্রকে কাত করে শোয়াল, তখন আমি তাকে ডেকে বললাম, হে ইবরাহিম, তুমি তো স্বপ্নাদেশ সত্যই পালন করলে—এভাবেই আমি সৎকর্মপরায়ণদের পুরস্কৃত করে থাকি।’ (সুরা সাফফাত: ১০৩-১০৫)

৫) কারো ধন্যবাদ আশা করবেন না; নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যান। এতেই শান্তি মিলবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘(তারা বলে) শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আমরা তোমাদেরকে অন্নদান করি, আমরা তোমাদের নিকট হতে প্রতিদান চাই না, কৃতজ্ঞতাও নয়।’ (সুরা আল-ইনসান: ৯)

৬) মানুষ যা আশংকা করে, তার অধিকাংশই ঘটে না—এ কথাটি মনে রাখবেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘সে তো শয়তান। সে তোমাদেরকে তার বন্ধুদের ভয় দেখায়; কাজেই যদি তোমরা মুমিন হও তবে তাদেরকে ভয় করো না, আমাকেই ভয় করো।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৭৫) আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘..যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের প্রতি ঈমান আনে তার কোনো ক্ষতি ও কোনো অন্যায়ের আশঙ্কা থাকবে না।’ (সুরা জ্বিন: ১৩)

৭) আপনার পাপের তুলনায় আল্লাহর দয়া ও ক্ষমা অনেক বেশি—এ কথাটি কখনও ভুলে যাবেন না। সুতরাং ক্ষমা প্রার্থনা করুন। আল্লাহ তাআলা বলছেন, ‘নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক অপরিসীম ক্ষমাশীল।’(সুরা নাজম: ৩২) তওবাকারীদের সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ মরুভূমিতে হারিয়ে যাওয়া উট খুঁজে পেয়ে যতটা খুশি হও, আল্লাহ তাআলা তার বান্দার তাওবাতে এরচেয়েও বেশি খুশি হন।’ (বুখারি: ৬৭০৯)

৮) বিশ্বাস রাখুন—আপনি যদি খাঁটি মুমিন হয়ে থাকেন দিনশেষে আপনিই হবেন বিজয়ী। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তোমরা নিরাশ হয়ো না এবং দুঃখ করো না। যদি তোমরা মুমিন হও; তবেই তোমরা বিজয়ী হবে।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৩৯)

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘মুমিনের বিষয়টি কতইনা চমৎকার! তার জন্য কল্যাণ ছাড়া আর কিছুই নেই। তার জন্য যদি কোনো খুশির ব্যাপার হয় এবং সে কৃতজ্ঞতা আদায় করে তাহলে সেটি তার জন্য কল্যাণকর। আর যদি কোনো দুঃখের বিষয় হয় এবং সে ধৈর্য ধারণ করে, সেটিও তার জন্য কল্যাণকর।’ (সহিহ মুসলিম: ২৯৯৯)

৯) আপনার রিজিক মানুষের হাতে নয়- এই ব্যাপারে নিশ্চিত থাকুন এবং নির্ভয়ে কাজ করে যান। ঈমান রাখুন এই বাক্যে— ‘আর আসমানে রয়েছে তোমাদের রিজিক ও প্রতিশ্রুত সবকিছু।’ (সুরা জারিয়াত: ২২) আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘দুনিয়ায় বিচরণকারী এমন কোনো প্রাণী নেই, যার রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহর ওপর নেই। তাদের স্থায়ী এবং অস্থায়ী অবস্থানস্থল সম্পর্কে তিনি অবহিত। সবকিছুই একটি সুস্পষ্ট কিতাবে লেখা আছে।’ (সুরা হুদ: ৬)

১০) ভালো কাজে ব্যস্ত থাকুন, কেননা অলস সময় নিকৃষ্ট শত্রু। আল্লাহ তাআলা বলছেন, ‘অতএব যখনই অবসর পাও, তখনই (আল্লাহর ইবাদতে) সচেষ্ট হও।’ (সুরা ইনশিরাহ: ৭)

১১) কারো ওপর তীব্র বিরক্তি ও ক্রোধ থাকলে এখনই ঝেড়ে ফেলুন। কেননা তা আপনাকেই বেশি ভোগাবে। এই প্রার্থনা করুন ‘হে আমাদের রব! আমাদেরকে ও আমাদের পূর্ববর্তী ভাইয়েরা যারা ঈমান এনেছে তাদের ক্ষমা করুন, ঈমানদারদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে কোনো বিদ্বেষ রাখবেন না। হে আমাদের রব! নিশ্চয় আপনি দয়ালু পরম করুণাময়’। (সুরা হাশর: ১০)

১২) আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করুন। এটিকে বলা হয় সুখী হওয়ার পরশপাথর। ‘যে মহান আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুল বা ভরসা করে, তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।’ (সুরা তালাক: ৩)
হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন- আমি সেরূপ, যেরূপ বান্দা আমার প্রতি ধারণা রাখে।’ (সহিহ মুসলিম: ২/৩৪১)

১৩) তাকদিরের ওপর পূর্ণ বিশ্বাস রাখুন। দুঃখ-হতাশা, অভাব-অনটন, বিপদ-আপদে তাকদিরের উপর বিশ্বাস থাকলে কোনো মানুষই মানসিক চাপে ভোগে না। তাকদিরের ওপর সবকিছু ছেড়ে দেওয়ায় রয়েছে মানসিক প্রশান্তি। আল্লাহ তাআলা বলেন, ’আল্লাহ তোমাদের কষ্ট দিলে তিনি ছাড়া অন্য কেউ তা মোচন করতে পারে না। আর আল্লাহ যদি তোমার মঙ্গল চান, তাহলে তাঁর অনুগ্রহ পরিবর্তন করারও কেউ নেই।’ (সুরা ইউনুস: ১০৭)
আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘পৃথিবীতে অথবা ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের ওপর যে বিপর্যয় আসে আমি ইহা সংঘটিত করার আগেই ইহা লিপিবদ্ধ থাকে; আল্লাহর পক্ষে ইহা খুবই সহজ।’ (সুরা হাদিদ: ২২)

১৪) নামাজ আদায় করা প্রশান্তিলাভের অন্যতম মাধ্যম। রাসুল (স.) বলতেন, ‘হে বিলাল, (আজানের মাধ্যমে) নামাজ কায়েম করো। আমরা নামাজের মাধ্যমে প্রশান্তি লাভ করো।’ (আবু দাউদ: ৪৯৮৫-৪৯৮৬)

১৫) কোরআন তেলাওয়াত করুন। রাসুল (স.) কোরআন পাঠের মাধ্যমে প্রশান্তি অনুভব করতেন। তিনি এভাবে দোয়া করতেন—اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ أَنْ تَجْعَلَ القُرْآنَ رَبِيعَ قَلْبِي، وَنُورَ صَدْرِي، وَجَلاَءَ حُزْنِي، وَذَهَابَ هَمِّي ‘হে আল্লাহ, তোমার কাছে চাই, যেন তুমি কোরআনকে করে দাও আমার হৃদয়ের বসন্ত (আগ্রহ-ভালোবাসা); আমার বক্ষের জন্য আলো; আমার দুশ্চিন্তার নির্বাসন এবং আমার পেরেশানি দূরকারী। (মুসনাদ আহমদ: ৩৭১২; সিলসিলা সহিহাহ: ১৯৯)

প্রত্যহ জীবনে সুখ লাভের জন্য এগুলো আমাদের সবার প্রয়োজন। বারবার প্রয়োজন। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে হায়াতে তাইয়েবা দান করুন। সুখী জীবন দান করুন। আমিন।