ধর্ম ডেস্ক
২৫ মার্চ ২০২২, ১১:৫২ এএম
জুমাবার মুমিনের কাছে একটি কাঙ্ক্ষিত দিন। এই দিনকে সাপ্তাহিক ঈদ বলা হয়েছে হাদিসে। সৃষ্টিজগতের শুরু থেকে দিনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত। জুমা নামে পবিত্র কুরআনে একটি স্বতন্ত্র সুরা আছে। তাই এই দিনের পবিত্রতা রক্ষা করা সকল মুসলমানের জন্য বাঞ্ছনীয়।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের এমন কিছু ভুল হয়ে যায়, যা মোটেও উচিত নয়। এখানে সেরকম পাঁচটি ভুল নিয়ে আলোচনা করা হলো, যা করতে নিষেধ করা হয়েছে হাদিসে। যেমন—
১) পরিপাটি না হয়ে জুমায় যাওয়া
অনেকে জুমার দিনে পরিচ্ছন্ন হওয়াকে তেমন গুরুত্ব দেন না। অথচ, জুমার নামাজে যাওয়ার আগে গোসল করা জরুরি। হজরত আবু সাইদ খুদ্রি (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি এ মর্মে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহর রাসুল (স.) বলেছেন, ‘জুমার দিন প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্কের জন্য গোসল করা ওয়াজিব (জরুরি)। আর মিসওয়াক করবে এবং সম্ভব হলে সুগন্ধি ব্যবহার করবে।’ (বুখারি: ৮৮০, মুসলিম: ৮৪৬)
তাই সবার উচিত জুমার দিন গোসল করা এবং মিসওয়াক করা। যদি সামর্থ্য থাকে, সুগন্ধি ব্যবহার করা। এছাড়াও ভাল ও পরিচ্ছন্ন জামা পড়ে মসজিদে যাওয়া। রাসুল (সা.) নিজেও এই দিন ভাল ও পরিচ্ছন্ন পোশাক পরতেন।
২) মসজিদে দেরি করে যাওয়া
জুমার দিন একটু আগেভাগে মসজিদে যাওয়া উচিত। জুমার খুতবা শোনাও জরুরি। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন জানাবাত (সহবাস পরবর্তীকালে) গোসলের মতো গোসল করে এবং নামাজের জন্য আগমন করে, সে যেন একটি উট কোরবানি করলো। যে ব্যক্তি দ্বিতীয় পর্যায়ে আগমন করে, সে যেন একটি গাভী কোরবানি করলো। তৃতীয় পর্যায়ে যে আগমন করে, সে যেন একটি শিং-বিশিষ্ট দুম্বা কোরবানি করলো। চতুর্থ পর্যায়ে যে আগমন করলো সে যেন একটি মুরগি কোরবানি করলো। পঞ্চম পর্যায়ে যে আগমন করলো, সে যেন একটি ডিম কোরবানি করলো। (বুখারি: ৮৮১)
তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মসজিদের দিকে রওনা করা জরুরি।
৩) জুমার সময় অন্য কাজ করা
জুমার নামাজের সময় অন্য কাজ করা নিষিদ্ধ। জুমার প্রথম আজান শোনার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসা কিংবা অন্য কাজে বিরতি দেওয়া উচিত। ইয়াহ্ইয়া ইবনু সাইদ (রহ.) থেকে বর্ণিত, আয়েশা (রা.) বলেছেন—
লোকজন নিজেদের কাজকর্ম নিজেরাই করতেন। যখন তারা দুপুরের পরে জুমার জন্য যেতেন, তখন সে অবস্থায়ই চলে যেতেন। তাই তাদের বলা হলো, যদি তোমরা গোসল করে নিতে ভালো হতো..। (বুখারি: ৯০৩; মুসলিম: ৮৪৭)
৪) মনোযোগ দিয়ে খুতবা না শোনা
খুতবা শোনা জুমার নামাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং ঠিকভাবে খুতবা শোনা জরুরি। তবে যদি মুসল্লি বেশি হওয়ার কারণে অথবা অন্য কোনো কারণে খুতবার আওয়াজ না শোনা যায়, তবে নিরব থাকাই নিয়ম। হজরত আবু হুরায়রাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন—
‘যে ব্যক্তি উত্তমভাবে অজু করে জুমার নামাজে এলো, নীরবে মনোযোগ দিয়ে খুতবা শুনলো, তাহলে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত এবং আরও অতিরিক্ত তিন দিনের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। আর যে ব্যক্তি (অহেতুক) কঙ্কর স্পর্শ করলো, সে অনর্থক, বাতিল, ঘৃণিত ও প্রত্যাখ্যানযোগ্য কাজ করলো। (মুসলিম: ১৮৭৩)
প্রসঙ্গত, আরবি ও বাংলা উভয় খুতবাই মনোযোগ দিয়ে শোনা জরুরি।
৫) খুতবার সময় কথা বলা
জুমার খুতবা শোনা শুধু সওয়াবের কাজ না, এটি ওয়াজিব। তাই খুতবার সময় কোনো কথা বলা যাবে না। এমনকি কাউকে চুপ থাকতে বলাও নিষেধ। আবু হুরায়রাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেছেন—
‘জুমার দিন যখন তোমার পাশের মুসল্লিকে চুপ থাকো বলবে, অথচ ইমাম খুতবা দিচ্ছেন, তা হলে তুমি একটি অনর্থক কথা বললে’ (বুখারি: ৯৩৪, মুসলিম: ৮৫১)।
তার মানে হলো, খুতবার সময় মুখ পুরোপুরি বন্ধ রাখা চাই।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জুমার পবিত্রতা রক্ষা করা ও সঠিকভাবে জুমার নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।