images

ইসলাম

ঋতুবর্তীসহ ৬ শ্রেণির মানুষের রোজা না রাখার অনুমতি

ধর্ম ডেস্ক

২৪ মার্চ ২০২২, ০৬:১৬ পিএম

রমজানের রোজা প্রাপ্তবয়স্ক ও শারীরিক-মানসিকভাবে সুস্থ প্রত্যেক মুসলমানের ওপর ফরজ হলেও কিছু মানুষকে রোজা না রাখার অনুমতি দিয়েছে ইসলাম। শারীরিক ও পারিপার্শ্বিক অবস্থাভেদে তাদেরকে এ সুযোগ দেওয়া হয়েছে। নিচে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

১) মুসাফির

অস্বাভাবিক কষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকলে মুসাফিরের জন্য রোজা না রাখার সুযোগ রয়েছে। এ অবস্থায় রোজা না রেখে পরে কাজা করবেন। 

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে, সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান; তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না।’ (সুরা বাকারা: ১৮৫)

তবে, অস্বাভাবিক কষ্ট না হলে রোজা রাখাই উত্তম। আবার সফররত অবস্থায় রোজা রাখা শুরু করলে তা আর ভাঙা জায়েজ হবে না। কিন্তু যদি পিপাসার কারণে প্রাণনাশের আশঙ্কা হয়, তাহলে রোজা ভাঙতে পারবে, পরে তা কাজা আদায় করবে। (ফতোয়া তাতারখানিয়া: ৩/৪০৩; রদ্দুল মুখতার: ২/৪৩১)

২) অসুস্থ

রোজা রাখার কারণে কোনো জটিল রোগ সৃষ্টি বা পুরাতন রোগ বৃদ্ধির প্রবল ধারণা হলে, তার জন্য রোজা না রাখার অনুমতি আছে। সুস্থ হওয়ার পর কাজা করে নেবেন। (সুরা বাকারা: ১৮৪)

এমনকি রোজা ভেঙে দেওয়ারও অবকাশ আছে, যদি রোগ দীর্ঘ ও প্রবল হওয়ার আশঙ্কা হয়। আশঙ্কা সুস্পষ্ট না হলে একজন অভিজ্ঞ ও দ্বীনদার চিকিৎসকের মতামতের প্রয়োজন হবে। (আল মুহিতুল বুরহানি: ৩/৩৫৯; আদ্দুররুল মুখতার: ২/৪২২)

৩) দুর্বল ব্যক্তি

বার্ধক্যজনিত কারণে রোজা রাখতে অক্ষম ব্যক্তির রোজা না রাখার অনুমতি রয়েছে ইসলামে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন—

আর যাদের রোজা রাখা অত্যন্ত কষ্টকর, তারা ফিদিয়া বা একজন মিসকিনকে খাবার প্রদান করবে। (সুরা বাকারা: ১৮৪; আলমুহিতুল বুরহানি:৩/৩৬১; ফতোয়া হিন্দিয়া: ১/২০৭)

কেউ চাইলে নগদ টাকাও ফিদিয়া দিতে পারে। প্রত্যেক রোজার জন্য ফিদিয়ার ন্যূনতম পরিমাণ হলো, সদকায়ে ফিতরের সমান। (আল ইনায়া: ২/২৭৩)

৪) গর্ভবতী

রোজা রাখার কারণে গর্ভবতী মহিলা নিজের কিংবা সন্তানের প্রাণহানি বা মারাত্মক স্বাস্থ্যহানির প্রবল আশঙ্কা করলে, তার জন্য রোজা ভঙ্গ করা জায়েজ। পরে এ রোজা কাজা করে নেবে। (আলমুহিতুল বুরহানি: ৩/৩৫৯; আদ্দুররুল মুখতার: ২/৪২২)

৫) দুগ্ধদানকারী মা

দুগ্ধদানকারী মা রোজা রাখলে যদি সন্তান দুধ না পাওয়ার আশঙ্কা থাকে এবং ওই সন্তান যদি অন্য খাবারে অভ্যস্ত না হয়, এতে সন্তানের মারাত্মক স্বাস্থ্যহানি বা মৃত্যুর আশঙ্কা থাকলে তিনি রোজা ভাঙতে পারবেন এবং পরে কাজা আদায় করে নেবেন।

হাদিসে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ তাআলা মুসাফিরের জন্য রোজার হুকুম শিথিল করেছেন এবং নামাজ কমিয়ে দিয়েছেন। আর গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারিনীর জন্যও রোজার হুকুম শিথিল করেছেন। (জামে তিরমিজি: ১/১৫২; আলমুহিতুল বুরহানি: ৩/৩৫৯; আদ্দুররুল মুখতার: ২/৪২২)

৬) ঋতুবর্তী নারী

মাসিক ঋতুস্রাব ও সন্তান প্রসবের স্রাবের সময় রোজা রাখা জায়েজ নেই। এ অবস্থায় নামাজ ও রোজা কোনোটাই আদায় করা জায়েজ হবে না (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)। তবে, ওই দিনগুলোর রোজার কাজা দিতে হবে।

উল্লেখ্য, অসুস্থতা, বার্ধক্য ইত্যাদি কারণে কেউ রমজানের রোজা রাখতে সক্ষম না হলে— সে পানাহার করতে পারবে। তবে রোজাদারদের অগোচরে পানাহার করা উচিত। একইভাবে মুসাফির যদি দিনের বেলা সফর থেকে ফিরে আসে, অবশিষ্ট দিন পানাহার থেকে বিরত থাকবে (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা: ৬/২২১)। মহিলার পিরিয়ড বন্ধ হলেও অবশিষ্ট দিন পানাহার থেকে সে বিরত থাকবে। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা: ৬/২২০; মুসান্নাফ আবদুর রাজ্জাক: ৪/১৭০)

আল্লাহ তাআলা বান্দার জন্য যেভাবে রোজার বিধানকে সহজ করেছেন, মুসলিম উম্মাহকেও তাঁর নির্দেশ পালনে যথাযথ দায়িত্বশীল হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।