ধর্ম ডেস্ক
১২ মার্চ ২০২৩, ০১:৫৮ পিএম
শেষ যুগে গান-বাজনা, মাদক, অশ্লীলতা ও পাপাচার ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাবে। তখন কিছু লোককে বিভিন্ন শাস্তি দিয়ে পাকড়াও করা হবে বলে সতর্ক করেছেন মহানবী (স.)। মানুষের চেহারা বিকৃতি সেই শাস্তিগুলোর একটি। হাদিসে এসেছে- গান, বাদ্যযন্ত্র, মদপানের প্রসার ঘটলে আল্লাহ তাআলা এই উম্মতের কিছু লোককে ভূমিধস, চেহারা পরিবর্তন ও উপর থেকে নিক্ষেপ করার শাস্তি দেবেন।
রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, فِي هَذِهِ الْأُمَّةِ خَسْفٌ وَمَسْخٌ وَقَذْفٌ فَقَالَ رَجُلٌ مِنَ الْمُسْلِمِينَ يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَتَى ذَاكَ قَالَ إِذَا ظَهَرَتِ الْقَيْنَاتُ وَالْمَعَازِفُ وَشُرِبَتِ الْخُمُورُ অর্থ: ‘এই উম্মতের মধ্যে ভূমিধস, চেহারা বিকৃতি এবং উপর থেকে নিক্ষেপ করে ধ্বংস করার শাস্তি আসবে। এক সাহাবি জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! কখন এরূপ হবে? নবী (স.) বললেন, যখন ব্যাপক হারে গায়িকা, বাদ্যযন্ত্র এবং মদ্যপানের প্রসার ঘটবে।’ (তিরমিজি, কিতাবুল ফিতান, সহিহুল জামে আস-সাগির: ৪১১৯)
গান-বাজনা ও মদপান নিয়ে কঠিন কথা বলা আছে ইসলামে। গান ও বাদ্যযন্ত্রের প্রতি আগ্রহী ব্যক্তির শাস্তি খুব অপমানজনক। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘একশ্রেণির লোক আছে, যারা অজ্ঞতাবশত খেল-তামাশার বস্তু ক্রয় করে বান্দাকে আল্লাহর পথ থেকে গাফেল করার জন্য।’ (সুরা লুকমান: ৬) রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘অবশ্যই আমার পরে এমন কিছু লোক আসবে যারা জেনা, রেশম, নেশাদার দ্রব্য ও গান-বাজনা বাদ্যযন্ত্রকে হালাল মনে করবে।’ (বুখারি: ৫৫৯০) আবু ওমামা (রা.) বলেন, রাসুল (স.) বলেছেন, ‘তোমরা গায়িকা নর্তকীদের বিক্রয় করো না, তাদের ক্রয় করো না, তাদের গান-বাজনা ও বাদ্যযন্ত্র শিখিয়ে দিও না, তাদের উপার্জন হারাম।’ (ইবনে মাজাহ, মেশকাত: ২৭৮০) হাদিসে আরও এসেছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা মদ, জুয়া ও সব ধরনের বাদ্যযন্ত্র হারাম করেছেন।’ (বায়হাকি, মেশকাত: ৪৫০৩; বাংলা ৮ম খণ্ড: ৪৩০৪)
কোরআন ও হাদিসে কঠিন নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও মাদকদ্রব্য ও গান-বাজনায় আসক্ত হয়ে পড়বে কিছু মানুষ। তাদের কারণে ভূমিধস, চেহারা বিকৃতির শাস্তি নেমে আসবে। আমরা জানি, ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশে অনেক ভূমিধসের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। চেহারা বিকৃতির ঘটনা বা উপর থেকে নিক্ষেপ করার শাস্তি হয়ত এখনও সংঘটিত হয়নি। তবে নিশ্চিত এসব শাস্তিও নেমে আসবে। কেননা নবীজির ভবিষ্যদ্বাণী সত্য।
নবী (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘আখেরি জামানায় কোনো কোনো জাতিকে মাটির নিচে দাবিয়ে দেওয়া হবে, কোনো জাতিকে উপরে উঠিয়ে নিক্ষেপ করে ধ্বংস করা হবে, আবার কারো চেহারা পরিবর্তন করে শুকর ও বানরে পরিণত করা হবে। নবী (স.)-কে জিজ্ঞেস করা হলো— কখন এরূপ করা হবে? তিনি বললেন, ‘যখন গান-বাজনা এবং গায়িকার সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।’ (ইবনে মাজাহ, সহিহুল জামে আস-সাগির: ২১৬) বলা হচ্ছে, বানর ও শুকরে পরিণত হবে উম্মতের কিছু মানুষ। অতীতেও এই শাস্তির উদাহরণ রয়েছে। বনী ইসরাইলের এক শ্রেণির লোক আল্লাহর নির্দেশকে অমান্য করেছিল। আল্লাহ তাআলা শাস্তি হিসেবে তাদের চেহারা পরিবর্তন করে শুকর ও বানরে পরিবর্তন করে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। সুরা মায়েদার ৬০ নম্বর আয়াতে এই ঘটনার উল্লেখ রয়েছে।
মূলত এধরণের শাস্তি কঠিন আজাবের পূর্ব সংকেত মাত্র। যাতে লোকেরা শিক্ষা গ্রহণ করে ও তাদের প্রভুর দিকে প্রত্যাবর্তন করে এবং এটাও বিশ্বাস করে যে, কেয়ামত অতি নিকটবর্তী। আল্লাহ বলেন, ‘মানুষের কৃতকর্মের জন্য জলে-স্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে যার ফলে তাদেরকে কোনো কর্মের শাস্তি আস্বাদন করানো হয়, যাতে তারা সৎপথে ফিরে আসে।’ (সুরা রূম: ৪১) আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সময় থাকতে সাবধান হওয়ার তাওফিক দান করুন। শরিয়তের বিপরীত কাজ করা থেকে হেফাজত করুন। কোরআন সুন্নাহর নির্দেশনা অনুযায়ী জীবন পরিচালনার তাওফিক দান করুন। আমিন।