images

ইসলাম

শবে বরাতে কবর জিয়ারত উত্তম আমল

ধর্ম ডেস্ক

০৭ মার্চ ২০২৩, ০৪:২৪ পিএম

আজ মঙ্গলবার (৭ মার্চ) পবিত্র শবে বরাত। এদিন দিবাগত রাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মহান রাব্বুল আলামিনের সান্নিধ্য ও ক্ষমালাভের আশায় ইবাদত-বন্দেগি, জিকির, নফল ইবাদত ও কোরআন তেলাওয়াতে মশগুল থাকবেন। ফারসি ‘শব’ শব্দের অর্থ রাত আর ‘বরাত’ শব্দের অর্থ সৌভাগ্য। আরবিতে বলা হয় ‘লাইলাতুল বরাত’, অর্থাৎ সৌভাগ্যের রাত। হিজরি শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতটি শবে বরাত হিসেবে পালন করা হয়।

এই রাতে নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, দোয়া, জিকির, দান-সদকা, তাওবা-ইস্তেগফারের বিশেষ ফজিলত রয়েছে। বিখ্যাত সাহাবি মুয়াজ বিন জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (স.) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলা অর্ধ শাবানের রাতে অর্থাৎ শাবানের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে তাঁর সৃষ্টির দিকে রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন। (সহিহ ইবনে হিব্বান: ৫৬৬৫)

এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘যখন শাবান মাসের অর্ধেকের রজনী আসে (শবে বরাত) তখন তোমরা রাতে নামাজ পড়ো, আর দিনের বেলা রোজা রাখো। নিশ্চয় আল্লাহ এ রাতে সূর্য ডোবার সাথে সাথে পৃথিবীর আসমানে এসে বলেন, কোনো গুনাহ ক্ষমাপ্রার্থী আছে কি আমার কাছে (গুনাহ ক্ষমা চাইবে)? আমি তাকে ক্ষমা করে দিব। কোনো রিজিকপ্রার্থী আছে কি? আমি তাকে রিজিক দিব। কোনো বিপদগ্রস্ত মুক্তি পেতে চায় কি? আমি তাকে বিপদমুক্ত করে দিব। আছে কি এমন, আছে কি তেমন? এমন বলতে থাকেন ফজর পর্যন্ত।’ (ইবনে মাজাহ,: ১৩৮৮, শুয়াবুল ঈমান: ৩৮২২)

আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন—‘একবার রাসুলুল্লাহ (স.) রাতে নামাজে দাঁড়ান এবং এত দীর্ঘ সেজদা করেন যে, আমার ধারণা হলো- তিনি হয়ত মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি তখন উঠে তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম। তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল। যখন তিনি সেজদা থেকে উঠলেন এবং নামাজ শেষ করলেন, তখন আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আয়েশা তোমার কি এই আশঙ্কা হয়েছে যে, আল্লাহর রাসুল তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি উত্তরে বললাম, না- হে আল্লাহর রাসুল। আপনার দীর্ঘ সেজদা থেকে আমার এই আশঙ্কা হয়েছিল, আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কি না। তখন নবী (স.) জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি জানো এটা কোন রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও তার রাসুলই ভালো জানেন। রাসুলুল্লাহ (স.) তখন ইরশাদ করলেন, ‘এটা হলো অর্ধ শাবানের রাত (শবে বরাত)। আল্লাহ তাআলা অর্ধ-শাবানের রাতে তার বান্দার প্রতি মনোযোগ দেন এবং ক্ষমাপ্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন এবং অনুগ্রহপ্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের ছেড়ে দেন তাদের অবস্থাতেই।’ (শুয়াবুল ঈমান, বায়হাকি: ৩/৩৮২-৩৮৩; তাবারানি: ১৯৪)

উল্লেখিত হাদিস থেকে এ রাতের মাহাত্ম্য যেমন জানা যায়, একইভাবে এ রাতের আমল কেমন হওয়া উচিত তাও বোঝা যায়। এই রাতে প্রিয়নবী (স.) এত লম্বা সেজদায় ছিলেন যে আয়েশা (রা.) ভাবলেন যে নবীজি মারাই গেছেন। সুতরাং উম্মত হিসেবে আমরাও এই রাতে দীর্ঘ সেজদার সঙ্গে নফল নামাজ পড়ব ইনশাআল্লাহ।

এছাড়াও শবে বরাতে কবর জিয়ারত একটি উত্তম আমল। এই রাতে রাসুলুল্লাহ (স.) চুপিসারে একাকী জান্নাতুল বাকিতে কবর জিয়ারত করেছেন। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘এক রাতে রাসুল (স.)-কে না পেয়ে খুঁজতে বের হলাম। খুঁজতে খুঁজতে জান্নাতুল বাকিতে গিয়ে তাঁকে দেখতে পেলাম। তিনি বললেন- কি ব্যাপার আয়েশা? তোমার কি মনে হয় আল্লাহ এবং তার রাসুল তোমার উপর কোন অবিচার করবেন? আয়েশা (র.) বললেন, আমার ধারণা হয়েছিল— আপনি অন্য কোনো বিবির ঘরে গিয়েছেন। রাসুলুল্লাহ (স.) তখন বললেন, যখন শাবান মাসের ১৫ তারিখের রাত আসে, তখন আল্লাহ তাআলা এ রাতে প্রথম আসমানে নেমে আসেন। তারপর বনু কালব গোত্রের বকরির পশমের চেয়ে বেশি সংখ্যক বান্দাকে ক্ষমা করে দেন।’ (সুনানে তিরমিজি: ৭৩৯) 

তবে দলবেঁধে কবর জিয়ারত সুন্নাহসমর্থিত নয়। আবার এই আমল শুধু শবে বরাতেই করতে হবে এমনও নয়। যেকোনো সময় মৃত আত্মীয়-স্বজনের কবর জিয়ারত করা যায়। এতে মৃত্যুর কথা স্মরণ হয়। নবীজি বলেছেন, ‘তোমরা কবর জিয়ারত করো। কারণ তা মৃত্যুকে স্মরণ করিয়ে দেয়।’ (মুসলিম: ৯৭৬)

শবে বরাতে মৃত আত্মীয়-স্বজন ও মুসলিম নর-নারীর কবর জিয়ারত করা এবং তাদের মাগফিরাত কামনা করা সম্পর্কে ফতোয়ার কিতাবে এসেছে,  এ রাতে রাসুল (স.) মদিনার প্রাচীন কবরস্থান ‘জান্নাতুল বাকিতে একাকী গিয়েছিলেন; কোনো সাহাবিকে সঙ্গে নিয়ে যাননি। তাঁর অনুকরণার্থে জরুরি মনে না করে একাকী কবরস্থানে যাওয়া যাবে। তবে এ আমলকে আবশ্যকীয় মনে করা যাবে না। আর মাঝেমধ্যে ছেড়েও দিতে হবে। (ইসলাহি খুতুবাত: ৪/২৫৯-২৬০)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সহিহ সুন্নাহ অনুযায়ী নেক আমল করার তাওফিক দান করুন। শিরক-বিদআতের মতো বাড়াবাড়ি থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।