ধর্ম ডেস্ক
০৬ মার্চ ২০২৩, ০৪:৩৩ পিএম
রমজানের রোজা ফরজ এবং ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের একটি। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, তোমাদের মধ্যে যে এই মাসে উপস্থিত হবে, সে যেন রোজা রাখে। (সুরা বাকারা: ১৮৫)। রমজানের রোজা এতটাই ফজিলতপূর্ণ যে মহান আল্লাহ এর পুরস্কার নিজ হাতে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। (সহিহ মুসলিম: ১১৫১/১৬৪; মুসনাদে আহমদ: ৯৭১৪; ইবনে মাজাহ: ১৬৩৮)
‘যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে রমজানের একটি রোজা ভঙ্গ করবে, সে আজীবন সেই রোজার (ক্ষতিপূরণ) আদায় করতে পারবে না।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ৯৮৭৮) শুধু তা-ই নয়, রোজার মাধ্যমে মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের পাপমুক্ত করেন।
হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে নেকির প্রত্যাশায় রমজানে রোজা পালন করবে, তার অতীতের গুনাহগুলো মাফ করে দেওয়া হয়।’ (সহিহ বুখারি: ৩৮)
পবিত্র রমজানে রোজা রাখা ছাড়াও এমন কিছু আমল আছে যেগুলোর ফজিলত অনেক বেশি। নিচে রমজানে সর্বোত্তম করণীয় বা নেক আমল সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
নামাজ
আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের অন্যতম মাধ্যম হলো, সময়মতো নামাজ আদায় করা। রাসুলুল্লাহ (স.)-কে জিজ্ঞেস করা হলো— কোন আমল আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়? তিনি বললেন, ‘যথাসময়ে নামাজ আদায় করা। পুনরায় জিজ্ঞেস করা হলো, অতঃপর কোনটি? আল্লাহর রাসুল (স.) বললেন, অতঃপর জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ (আল্লাহর পথে জিহাদ)..।’ (বুখারি: ৫২৭)
রাসুলুল্লাহ (স.) আরও ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি এই মাসে একটি নফল কাজ করবে, সে যেন অন্য মাসের একটি ফরজ আদায় করল। আর যে ব্যক্তি এ মাসে একটি ফরজ আদায় করবে, সে যেন অন্য মাসের ৭০টি ফরজ সম্পাদন করল।’ (মেশকাতুল মাসাবিহ: ১৯৬৫)
তাই পবিত্র রমজানে বেশি বেশি নফল নামাজ পড়া উচিত। এই মাসে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা সহজসাধ্য। তাহাজ্জুদ মহান আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয় একটি আমল। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ পড়বে। এটা তোমার অতিরিক্ত দায়িত্ব (নফল)। অচিরেই তোমার রব তোমাকে প্রশংসিত স্থানে প্রতিষ্ঠিত করবেন।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ৭৯)
অন্যত্র এসেছে, ‘(আর আল্লাহর প্রিয় বান্দা তারা) যারা তাদের রবের দরবারে সেজদা করে এবং দাঁড়িয়ে থেকেই রাত কাটিয়ে দেয়।’ (সুরা ফুরকান: ৬৪)
অতএব পবিত্র মাহে রমজানে রাত জেগে নফল নামাজ পড়ার মাধ্যমে আমরা মহান আল্লাহর প্রিয় হতে পারি।
কোরআন তেলাওয়াত
পবিত্র রমজান কোরআন নাজিলের মাস। যেহেতু এটি কোরআনের মাস, তাই এ মাসে আমরা বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করা বিশেষ ফজিলতের ও গুরুত্বপূর্ণ আমল। মহানবী (স.) পবিত্র রমজানে কোরআন পাঠের প্রতি অধিক গুরুত্ব দিতেন।
বিভিন্ন হাদিসের বর্ণনা মতে পাওয়া যায়, জিবরাইল (আ.) রমজানের প্রতি রাতে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন এবং কোরআন শিক্ষা দিতেন। (নাসায়ি: ২০৯৫)
তাছাড়া যারা অধিক কোরআন তেলাওয়াত করে পবিত্র কোরআন কেয়ামতের দিন তাদের সুপারিশ করবে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘তোমরা কোরআন পাঠ করো। কারণ কেয়ামতের দিন তার পাঠকারীর জন্য সে সুপারিশকারী হিসেবে আসবে। তোমরা দুটি উজ্জ্বল সুরা অর্থাৎ সুরা আল বাকারা এবং সুরা আলে ইমরান পড়ো। কেয়ামতের দিন এ দুটি সুরা এমনভাবে আসবে যেন তা দুই খণ্ড মেঘ অথবা দুটি ছায়াদানকারী অথবা দুই ঝাঁক উড়ন্ত পাখি যা তার পাঠকারীর পক্ষ হয়ে কথা বলবে। আর তোমরা সুরা আল বাকারা পাঠ করো। এ সুরাটিকে গ্রহণ করা বারাকাতের কাজ এবং পরিত্যাগ করা পরিতাপের কাজ..।’ (মুসলিম: ১৭৫৯)
তাছাড়া মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতকারীদের জন্য জান্নাতে রেখেছেন বিশেষ সম্মাননা। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, (কেয়ামতে) কোরআন অধ্যয়নকারীকে বলা হবে, কোরআন পাঠ করতে করতে ওপরে উঠতে থাকো। তুমি দুনিয়াতে যেভাবে ধীরেসুস্থে পাঠ করতে সেভাবে পাঠ করো। কেননা তোমার তিলাওয়াতের শেষ আয়াতেই (জান্নাতে) তোমার বাসস্থান হবে। (আবু দাউদ: ১৪৬৪)। তাই আমাদের সবার উচিত পবিত্র এই মাসে যত বেশি সম্ভব কোরআন তেলাওয়াত করা।
জিকির
জিকির মানে হলো, আল্লাহকে স্মরণ করা। যেকোনো ইবাদতের মাধ্যমে মহান আল্লাহকে স্মরণ করাই জিকির শব্দের উদ্দেশ্য। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমি আল্লাহ, আমি ছাড়া কোনো (সত্য) উপাস্য নেই; সুতরাং আমার ইবাদত করো এবং আমার স্মরণার্থে নামাজ কায়েম করো’। (সুরা তাহা: ১৪)
জিকিরকারীদের ফজিলত সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও নারী, তাদের জন্য আল্লাহ মাগফিরাত ও মহান প্রতিদান প্রস্তুত রেখেছেন।’ (সুরা আহজাব: ৩৫)
আবু দারদা (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘আমি তোমাদের কি তোমাদের অধিক উত্তম কাজ প্রসঙ্গে জানাব না, যা তোমাদের মনিবের কাছে সবচেয়ে পবিত্র, তোমাদের সম্মানের দিক থেকে সবচেয়ে উঁচু, স্বর্ণ ও রৌপ্য দান-খয়রাত করার চেয়েও বেশি ভালো এবং তোমাদের শত্রুর মোকাবেলায় অবতীর্ণ হয়ে তাদের তোমাদের সংহার করা ও তোমাদের তাদের সংহার করার চাইতেও ভালো? তাঁরা বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেন, আল্লাহ তাআলার জিকির।
মুআজ ইবনে জাবাল (রা.) বলেন, আল্লাহ তাআলার শাস্তি হতে মুক্তি পাওয়ার জন্য আল্লাহ তাআলার জিকিরের তুলনায় অগ্রগণ্য কোনো জিনিস নেই। (তিরমিজি: ৩৩৭৭)
দোয়া
পবিত্র রমজানে দোয়া একটি বিশেষ ইবাদত। যে কোনো প্রয়োজনে, বিপদ-আপদে দোয়ার বিকল্প নেই। আল্লাহর রহমত ও বরকত লাভের জন্যও দোয়া হাতিয়ার। তাছাড়া দোয়া না করা আল্লাহর রাগের কারণ। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের রব (আল্লাহ) বলেন, তোমরা আমার কাছে দোয়া করো, আমি তোমাদের দোয়া কবুল করব। যারা অহংকারবশত আমার ইবাদত থেকে বিমুখ, তারা অবশ্যই লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’ (সুরা মুমিন: ৬০)
এজন্য পবিত্র রমজান মাসে মহান আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করা উচিত। বিশেষ করে ইফতারের সময়। কারণ মহান আল্লাহ ইফতারের সময় বান্দার দোয়া কবুল করেন।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘তিন ধরনের লোকের দোয়া কখনো ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। ১. রোজাদার যখন ইফতার করে, ২. ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া, ৩. মজলুমের দোয়া। মজলুম ব্যক্তির দোয়া আল্লাহ মেঘমালার ওপর উঠিয়ে নেন এবং এ জন্য আসমানের সব দরজা খুলে দেওয়া হয়। আল্লাহ বলেন, আমার ইজ্জতের কসম! আমি তোমাকে অবশ্যই সাহায্য করব, যদিও তা কিছুকাল পরে হয়।’ (তিরমিজি: ৩৫৯৮)
জাকাত
জাকাত ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের একটি। যেহেতু রমজান মাসে প্রতিটি নেক আমলের প্রতিদান বহু গুণে বাড়িয়ে দেওয়া হয়, এজন্যই অধিকাংশ মানুষ এ মাসেই জাকাত প্রদান করে থাকে। প্রিয়নবী (স.)-ও এই মাসেই অধিক জাকাত প্রদান করতেন। শুধু জাকাত নয়, বেশি বেশি দান-সদকাও করতেন।
ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘..জিব্রাইল (আ.) রমজানের প্রতি রাতে তাঁর (নবীজির) সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন। তখন আল্লাহর রাসুল (স.) তাঁকে কোরআন পাঠ করে শোনাতেন। আল্লাহর রাসুল (স.)-এর সঙ্গে যখন জিবরাইল (আ.) দেখা করতেন, তখন তিনি মানুষের কল্যাণের জন্য পাঠানো বাতাসের চেয়েও বেশি দানশীল হয়ে যেতেন।’ (বুখারি: ৩২২০)
তাই যাদের ওপর জাকাত ফরজ, তারা এই মাসে সঠিকভাবে তাঁদের জাকাত আদায় করতে পারেন। মহান আল্লাহ নিশ্চয়ই এর উত্তম প্রতিদান দেবেন।
সদকা
যাদের ওপর জাকাত ফরজ নয়, তারা এই মাসে বেশি বেশি সদকা করতে পারেন। যাদের ওপর জাকাত ফরজ, তারাও জাকাত আদায়ের পর অতিরিক্ত সদকা করতে পারেন। সদকার মাধ্যমে মহান আল্লাহ রিজিকে বরকত এনে দেন। বিপদাপদ দূর করে দেন। মানুষের হায়াতে বরকত হয়, অপমৃত্যু কমে ও অহংকার-অহমিকা থেকে মুক্ত থাকা যায়। (আত্তারগিব ওয়াত তারহিব: ২/৬৫)
আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার ঈদুল আজহা অথবা ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায়ের জন্য আল্লাহর রাসুল (স.) ঈদগাহের দিকে যাচ্ছিলেন। তিনি মহিলাদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বললেন, হে মহিলা সমাজ! তোমরা সদকা করতে থাকো। কারণ আমি দেখেছি, জাহান্নামের অধিবাসীদের মধ্যে তোমরাই বেশি। তারা জিজ্ঞেস করলেন, কী কারণে হে আল্লাহর রাসুল? তিনি বলেন, তোমরা বেশি পরিমাণে অভিশাপ দিয়ে থাকো আর স্বামীর অকৃতজ্ঞ হও। (বুখারি: ৩০৪)
যারা গোপনে দান করবেন মহান আল্লাহ কঠিন কেয়ামতের দিন তাদের আরশের ছায়াতলে স্থান দেবেন। (বুখারি: ৬৬০)
তাছাড়া সদকা রিজিকে বরকত এনে দেয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর কিতাব অধ্যয়ন করে, সালাত কায়েম করে এবং আল্লাহ যে রিজিক দিয়েছেন তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা এমন ব্যবসার আশা করতে পারে যা কখনো ধ্বংস হবে না। যাতে আল্লাহ তাদের কাজের প্রতিফল পরিপূর্ণ দেন এবং তিনি নিজ অনুগ্রহে তাদের আরো বেশি দেন। নিশ্চয়ই তিনি পরম ক্ষমাশীল, অসীম গুণগ্রাহী।’ (সুরা ফাতির: ২৯-৩০) তাই পবিত্র রমজানে বেশি বেশি সদকা করার মাধ্যমে আমরা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করি।
আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা
ইসলামে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। মহান আল্লাহ আত্মীয়স্বজনের অধিকারের ব্যাপারে ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা সতর্ক থাকো রক্তসম্পর্কিত আত্মীয়দের ব্যাপারে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের পর্যবেক্ষক।’ (সুরা নিসা: ১)
আমাদের উচিত পবিত্র মাহে রমজানে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা। তাদের কোনো অভাব অনটন আছে কি না সেই খোঁজ রাখা। বিপদে তাদের পাশে দাঁড়ানো। হয়তো এর অসিলায় মহান আল্লাহ আমাদের জীবনের সব পাপ ক্ষমা করে দেবেন। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহকে ও শেষ দিনে বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার রক্তের সম্পর্ক বজায় রাখে। (বুখারি: ৬১৩৮)। যারা আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখে না, মহান আল্লাহ তাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখবেন না। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘জ্ঞাতিবন্ধন আরশে ঝুলন্ত আছে এবং সে বলছে, যে আমাকে অবিচ্ছিন্ন রাখবে, আল্লাহ তার সম্পর্ক তাঁর সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন রাখবেন। আর যে আমাকে বিচ্ছিন্ন করবে, আল্লাহ তার সম্পর্ক তাঁর সঙ্গে বিচ্ছিন্ন করবেন।’ (রিয়াদুস সালেহিন: ৩২৮)
আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্কের পুরস্কার মহান আল্লাহ দুনিয়াতেও দেন। তা হলো রিজিকের প্রশস্ততা। আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি শুনেছি, আল্লাহর রাসুল (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি পছন্দ করে যে, তার জীবিকা বৃদ্ধি হোক অথবা তাঁর মৃত্যুর পরে সুনাম থাকুক, তবে সে যেন আত্মীয়ের সঙ্গে সদাচরণ করে। (বুখারি: ২০৬৭)
লাইলাতুল কদরের ইবাদত
হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ রাত লাইলাতুল কদর। এটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ একটি রাত। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে। নিশ্চয়ই আমি নাজিল করেছি এই কোরআন মহিমান্বিত রাতে। আর আপনি কি জানেন মহিমান্বিত রাত কী? মহিমান্বিত রাত হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। সেই রাতে প্রতিটি কাজের জন্য ফেরেশতারা ও রুহ তাদের প্রতিপালকের আদেশক্রমে অবতীর্ণ হয়। সেই রাতে শান্তিই শান্তি, ফজর হওয়া পর্যন্ত। (সুরা আল কদর: ১-৫)
রাসুল (স.) রমজানে এই রাতের সন্ধানে থাকতেন। তবে রমজানের শেষ দশকে তিনি ইবাদতের মাত্রা বাড়িয়ে দিতেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, রমজানের শেষ দশক এলে রাসুল (স.) কোমর শক্ত করে বেঁধে নিতেন। এবং রাত জেগে থাকতেন ও পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন। (বুখারি: ২০২৪)
অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, তোমরা শেষ দশকের বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদরের অনুসন্ধান করো। (বুখারি: ২০১৭)
উল্লিখিত হাদিসগুলো দ্বারা বোঝা যায়, পবিত্র মাহে রমজানে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো, লাইলাতুল কদরের সন্ধানে থাকা। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে ঈমানের সাথে সাওয়াবের আশায় রাত জেগে ইবাদত করে, তার পেছনের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করা হবে। আর যে ব্যক্তি ঈমানসহ সওয়াবের আশায় রমজানে রোজা পালন করবে, তারও অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ করা হবে। (বুখারি: ১৯০১)
ইতেকাফ
রমজানের গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত হলো ইতেকাফ। ইতেকাফের মাহাত্ম্য ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে শাহ ওয়ালি উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভি (রহ.) বলেন, ‘মসজিদে ইতেকাফ হচ্ছে হৃদয়ের প্রশান্তি, আত্মার পবিত্রতা ও চিত্তের নিষ্কলুষতা; চিন্তার পরিচ্ছন্নতা ও বিশুদ্ধতা। ফেরেশতাকুলের গুণাবলি অর্জন এবং লাইলাতুল কদরের সৌভাগ্য ও কল্যাণ লাভসহ সব ধরনের ইবাদতের সুযোগ লাভের সর্বোত্তম উপায়। এ জন্য রাসুল (স.) নিজে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ইতিকাফ পালন করেছেন এবং তাঁর বিবিরাসহ সাহাবায়ে কেরামের অনেকেই এই সুন্নতের ওপর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমল করেছেন।’ (হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা: ২/৪২)
রাসুলুল্লাহ (স.)-এর অসংখ্য হাদিস ইতিকাফ সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে। ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (স.) রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন।’ (বুখারি: ২০২৫)
তিনি রমজান মাসের ইতেকাফকে এতটাই গুরুত্ব দিয়েছেন যে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কখনো তা ছাড়েননি। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (স.) রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। তাঁর ওফাত পর্যন্ত এই নিয়মই ছিল। এরপর তাঁর সহধর্মিণীগণও (সে দিনগুলোতে) ইতিকাফ করতেন। (বুখারি: ২০২৬)
রমজানে ওমরা
রমজান মাসের ফজিলতপূর্ণ আমলগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি আমল হলো, রমজান মাসে ওমরা করা। কেননা হজ ওমরা মানুষের দরিদ্রতা ও গুনাহ দূর করে দেয়। রাসুল (স.) বলেছেন, ‘তোমরা ধারাবাহিক হজ ও ওমরা আদায় করতে থাকো। এ দুটি আমল দারিদ্র্য ও গুনাহ বিদূরিত করে দেয়। যেমন, ভাটার আগুনে লোহা ও সোনা-রুপার ময়লা-জং দূরীভূত হয়ে থাকে।’ (তিরমিজি: ৮১০)
তাই সামর্থ্য ও সুযোগ থাকলে আমরা পবিত্র রমজান মাসে ওমরা পালন করতে পারি। এতে করে মহান আল্লাহ আমাদের গুনাহ যেমন ক্ষমা করবেন, তেমনি এর বিনিময়ে আমাদের হজের সওয়াব দান করবেন। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম (স.) এক আনসারি নারীকে বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে হজ করতে তোমার বাধা কিসের?’ ইবনে আব্বাস (রা.) নারীর নাম বলেছিলেন; কিন্তু আমি ভুলে গিয়েছি। ওই নারী বলল, ‘আমাদের একটি পানি বহনকারী উট ছিল; কিন্তু তাতে অমুকের পিতা ও তার পুত্র (অর্থাৎ মহিলার স্বামী ও ছেলে) আরোহণ করে চলে গেছেন। আর আমাদের জন্য রেখে গেছেন পানি বহনকারী আরেকটি উট, যার দ্বারা আমরা পানি বহন করে থাকি।’ নবী (স.) বলেন, ‘আচ্ছা, রমজান এলে তখন ওমরা করে নিও। কেননা রমজানের একটি ওমরা একটি হজের সমতুল্য।’ (বুখারি: ১৭৮২)
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে পবিত্র রমজানে উল্লেখিত আমলগুলোর প্রতি যত্নশীল হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।