ধর্ম ডেস্ক
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০১:২৯ পিএম
বান্দার আমলই তার জান্নাত ও জাহান্নামের কারণ। নিজ আমলগুণে মানুষ যেমন জান্নাতি হতে পারেন, তেমনি কর্মদোষে হতে পারে জাহান্নামি। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে জাহান্নামের আগুনের উত্তাপের কিছু বিবরণ দেওয়া হয়েছে। বর্ণনা অনুযায়ী, দুনিয়ার আগুন থেকে জাহান্নামের আগুন অনেক বেশি উত্তপ্ত।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এটা তো লেলিহান অগ্নি, যা গায়ের চামড়া খসিয়ে দেবে।’ (সুরা মাআরিজ: ১৫-১৬)। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘তাদের মাথার ওপর ঢেলে দেওয়া হবে ফুটন্ত পানি, যা দিয়ে তাদের চামড়া ও পেটের ভেতর যা আছে তা বিগলিত করা হবে।’ (সুরা হজ: ১৯-২০)। অন্য আয়াতে এসেছে, ‘যারা আমার আয়াত প্রত্যাখ্যান করে, আমি তাদের অগ্নিতে দগ্ধ করবই। যখনই তাদের চামড়া দগ্ধ হবে তখনই এর স্থানে নতুন চামড়া সৃষ্টি করব, যাতে তারা শাস্তি ভোগ করতে পারে।’ (সুরা নিসা: ৫৬)
আরও পড়ুন: জোহরের ৮ রাকাত সুন্নত পড়লে জাহান্নাম হারাম
জাহান্নামের অগ্নিবায়ুর উষ্ণতা এত প্রখর যে জাহান্নামিদের চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিবে। যে আগুন কোরআনের ভাষায় মানুষকে জীবিত থাকতে দেবে না, আবার মরতেও দেবে না। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তুমি কি জান সাকার কী? তা (মানুষকে) অক্ষতও রাখবে না, আবার ছেড়েও দিবে না। মানুষকে দগ্ধ করবে।’ (সুরা মুদ্দাসসির: ২৭-২৯) জাহান্নামে ছায়া রয়েছে। তবে সে ছায়া কাউকে শীতল করবে না। জাহান্নামিরা জাহান্নামের আজাবে অতিষ্ঠ হয়ে সেই ছায়ার দিকে ছুটবে। যখন সেখানে পৌঁছবে তখন বুঝতে পারবে যে এটি কোনো ছায়া দানকারী গাছ নয়, বরং এটি জাহান্নামের কালো ধোঁয়া। সেই ছায়ার বর্ণনা দিতে গিয়ে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা যাকে অস্বীকার করতে, চলো তারই দিকে। চলো তিন শাখা বিশিষ্ট ছায়ার দিকে, যে ছায়া শীতল নয় এবং যে ছায়া অগ্নিশিখা হতে রক্ষা করতে পারে না। তা উৎক্ষেপণ করবে অট্টালিকাতুল্য বৃহৎ স্ফুলিঙ্গ, তা পীতবর্ণ উষ্ট্রশ্রেণি সদৃশ। সেই দিন দুর্ভোগ মিথ্যারোপকারীদের জন্য।’ (সুরা মুরসালাত: ২৯-৩৪)
আল্লাহ তাআলা জাহান্নামের আগুন প্রজ্বলিত রাখার জন্য অত্যন্ত রুক্ষ্ম, নির্দয় এবং কঠোর স্বভাব সম্পন্ন ফেরেশতা নিযুক্ত রয়েছেন। তারা সবসময় আগুন প্রজ্বলিত করছেন এবং করে যাবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যখনই (আগুন) স্তিমিত হয়ে যাওয়ার উপক্রম হবে, তখনই আমরা তাদের জন্য আগুন আরো বৃদ্ধি করে দেব।’ (সুরা বনি ইসরাঈল: ৯৭)
‘আর জাহান্নামের ওপর প্রহরী হিসেবে নিয়োজিত রয়েছে ১৯ ফেরেশতা।’ (সুরা মুদ্দাসসির: ৩০) পৃথিবীতে প্রজ্বলিত আগুন জাহান্নামের আগুনের তুলনায় ৭০ ভাগের এক ভাগ। এ মর্মে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘তোমাদের এই আগুন যা বনি আদম প্রজ্বলিত করে তা জাহান্নামের আগুনের তীব্রতার ৭০ ভাগের এক ভাগ। সাহাবিরা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল (স.)! আল্লাহর কসম! সে আগুন পৃথিবীর মতো হওয়াই তো যথেষ্ট ছিল।
তখন তিনি বললেন, তাকে দুনিয়ার আগুনের চেয়ে ৬৯ গুণ অধিক উত্তাপ সম্পন্ন করা হয়েছে। আর তার প্রত্যেকটি ভাগ দুনিয়ার আগুনের মতো উত্তাপ সম্পন্ন হবে’। (মুসলিম: ৭৩৪৪; তিরমিজি: ২৫৮৯) আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে জাহান্নামের ভয়াবহ আগুন থেকে রক্ষা করুন। জান্নাতে যাওয়ার মতো আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।