ধর্ম ডেস্ক
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০২:০৮ পিএম
ইসলাম দয়া ও ভালোবাসার ধর্ম। ঈমানদার প্রত্যেক মানুষকে এক দেহ আখ্যা দিয়ে রাসুল (স.) বলেন, ‘সব মুসলিম একটি দেহের মতো। যদি তার চোখ অসুস্থ হয়, তাহলে গোটা শরীর অসুস্থ হয়ে যায়। যদি তার মাথা অসুস্থ হয়, তাহলে পুরো শরীর অসুস্থ হয়ে পড়ে।’ (মুসলিম: ৬৭৫৪)। তাই মুমিনদেরকে এতিমের দায়িত্ব নিতে উদ্বুদ্ধ করেছে ইসলাম। কেননা তারা সমাজে অসহায়শ্রেণি। সাধ্যমতো তাদের সাহায্য করা, তাদের পুনর্বাসন করা প্রতিটি মুমিনের দায়িত্ব। কোরআন-হাদিসে তাদের অধিকারের ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। একইসঙ্গে তাদের পুনর্বাসন ও তত্ত্বাবধানের বিশেষ ফজিলত বর্ণিত হয়েছে।
অভাব-অনটন থাকা সত্ত্বেও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যারা অভাবীদের পাশে দাঁড়ায় তাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে উত্তম পুরস্কারের ঘোষণা রয়েছে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ জান্নাতিদের প্রাপ্ত নিয়ামত ও তাদের গুণাবলি সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, ‘তারা আহার্যের প্রতি আসক্তি সত্ত্বেও (আল্লাহর ভালোবাসায়) অভাবী, এতিম ও বন্দিকে আহার্য দান করে। (এবং তারা বলে) শুধু আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই তোমাদের আহার্য দান করি। বিনিময়ে তোমাদের থেকে কোনো প্রতিদান চাই না।’ (সুরা দাহর: ৮-৯)
তাই অভাবের ভয়ে এতিমদের অবহেলা করা অনুচিত। তাদের আলাদা করে দেখা বা বোঝা হিসেবে দেখা মুমিনের জন্য শোভনীয় নয়। আসলে তারা বোঝা নয়। বরং মহান আল্লাহ তাদের বিপদটাকেই আপনার জান্নাতে যাওয়ার সোপান বানিয়ে দিয়েছেন। এতিমের দায়িত্ব গ্রহণকারী পরকালে রাসুল (স.)-এর নৈকট্যলাভে ধন্য হবেন। যে বাড়িতে এতিম থাকার ব্যবস্থা রয়েছে সে বাড়িকে সর্বোত্তম বাড়ি ঘোষণা দিয়েছেন নবীজি (স.)। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, মুসলিমদের ওই বাড়িই সর্বোত্তম, যে বাড়িতে এতিম আছে এবং তার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা হয়। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট ওই বাড়ি, যে বাড়িতে এতিম আছে অথচ তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা হয়। অতঃপর তিনি তাঁর অঙ্গুলির মাধ্যমে বলেন, ‘আমি ও এতিম প্রতিপালনকারী জান্নাতে এমনভাবে অবস্থান করব।’ (ইবনে মাজাহ: ৩৬৭৯)
এতিমকে খাওয়ানো এক নারী সম্পর্কে রাসুল (স.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ এ কাজের কারণে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব করে দিয়েছেন অথবা তাকে এ কারণেই জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়েছেন।’ (মুসলিম: ২৬৩০)
আরেক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি কোনো এতিমকে আপন মা-বাবার সঙ্গে নিজেদের (পারিবারিক) খাবারের আয়োজনে বসায় এবং (তাকে এই পরিমাণ আহার্য দান করে যে) সে পরিতৃপ্ত হয়ে আহার করে, তাহলে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে।’ (মুসনাদে আহমদ: ১৮২৫২) ফওয়ান ইবনে সুলায়ম (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যে লোক বিধবা ও মিসকিনদের ভরণ-পোষণের ব্যাপারে চেষ্টা করে, সে আল্লাহর পথে জিহাদকারীর মতো অথবা সে ওই ব্যক্তির মতো, যে দিনে সিয়াম পালন করে ও রাতে (ইবাদতে) দণ্ডায়মান থাকে। (বুখারি: ৬০০৬)
সমাজে এতিমরা অসহায় হলেও এই দুর্বলশ্রেণির কারণেই সবার ওপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয়। তাদের কারণেই আল্লাহ তাআলা খরা-দুর্ভিক্ষ থেকে আমাদের নিরাপদে রাখেন। আমাদের আয়-রোজগারে বরকত দেন। মহানবী (স.) বলেন, ‘দুর্বল ও অসহায়দের পুনর্বাসনে আমাকে সাহায্য করো। তোমাদের দুর্বল-অসহায়দের কারণেই তোমরা সাহায্য ও রিজিকপ্রাপ্ত হও।’ (আবু দাউদ: ২৫৯৪)
এতিমদের সহায়তা করলে হৃদয়ের প্রশস্ততা ও কোমলতা লাভ হয়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসুল (স.)-এর কাছে তাঁর মনের রুক্ষতার ব্যাপারে অভিযোগ করলেন। তিনি বললেন, ‘যদি তুমি তোমার মন নরম করতে চাও, তাহলে দরিদ্রকে খাওয়াও এবং এতিমের মাথায় হাত বুলিয়ে দাও।’ (মুসনাদে আহমদ: ২/৩৮৭) এতিমকে সান্ত্বনা দিলেও অসংখ্য সওয়াব লাভ হয়। মহানবী (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো ছেলে অথবা মেয়ে এতিমের মাথায় একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে হাত বুলিয়ে দেয়, মাথার যত চুল দিয়ে তার হাতটি অতিক্রম করবে, তার তত সওয়াব অর্জিত হবে..।’ (মুসনাদে আহমদ: ৪৫/২৪৮)
এতিম যদি আত্মীয় হয়, তাহলে তাদের সাহায্য করলে দ্বিগুণ সওয়াব লাভ হবে। মহানবী (স.) বলেছেন, মিসকিনকে দান করলে কেবল দান করার সওয়াব লাভ হয়। আর আত্মীয়-স্বজনকে দান করলে দুটি সওয়াব—দান করার সওয়াব এবং আত্মীয়তার হক আদায় করার সওয়াব।’ (জামে তিরমিজি: ৬৫৮; মুসনাদে আহমদ: ১৬২৩৩) যারা সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও এতিমদের উপেক্ষা করে নিজে ভালো থাকতে চায়, তাদের অভুক্ত রেখে নিজে তৃপ্তিসহকারে খেতে চায়, প্রিয়নবী (স.) তাদের মুমিন বলে স্বীকৃতি দেননি। ইবনে আব্বাস (রা.) ইবনে জুবাইর (রা.)-কে অবহিত করতে বলেন, আমি নবী (স.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি তার প্রতিবেশীকে অভুক্ত রেখে তৃপ্তি সহকারে আহার করে সে মুমিন নয়। (আদাবুল মুফরাদ: ১১১)
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে এতিম, মিসকিন, বিধবাদের সহায়তা ও পুনর্বাসনে সচেষ্ট হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।