images

ইসলাম

তওবা কবুল হয় না যাদের

ধর্ম ডেস্ক

১৯ মার্চ ২০২২, ০১:০৫ পিএম

যত বড় গুনাহই সংঘটিত হোক, হতাশ হওয়ার কিছু নেই। কারণ, আল্লাহর ক্ষমা, মহানুভবতা ও অনুগ্রহ তার চেয়েও বড়। স্বয়ং আল্লাহ তাআলা তাঁর গুনাহগার বান্দাদের ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘তোমরা ক্ষমা প্রার্থনা করো আল্লাহর কাছে; আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’(সুরা মুজ্জাম্মিল: ২০)। ‘তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ, আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ো না; নিশ্চয় আল্লাহ সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।’(সুরা যুমার: ৫৩)

এমনকি শিরকের মতো ভয়াবহ গুনাহেরও ক্ষমা পাওয়ার সম্ভাবনা আছে, যদি খালেস দিলে তওবা করার মাধ্যমে শিরক থেকে ফিরে আসা যায়। এ বিষয়ে কোরআনের আয়াত—

‘আর মহান হজের দিনে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের পক্ষ থেকে লোকদের প্রতি ঘোষণা দেয়া হচ্ছে যে, আল্লাহ মোশরেকদের থেকে দায়িত্বমুক্ত এবং তাঁর রাসুলও। অবশ্য যদি তোমরা তওবা করো, তবে তা তোমাদের জন্যও কল্যাণকর, আর যদি মুখ ফেরাও, তবে জেনে রেখো, আল্লাহকে তোমরা পরাভূত করতে পারবে না। আর কাফেরদেরকে মর্মান্তিক শাস্তির সুসংবাদ দাও। (সুরা তওবা: ৩)

উল্লেখিত আয়াতসমূহ থেকে সহজে অনুমেয় যে, পাপ কাজ থেকে অনুতপ্ত হয়ে তওবা করলে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। আর ‘গুনাহ থেকে তওবাকারী ওই ব্যক্তির মতো, যার কোনো গুনাহই নেই’ (সুনানে তিরমিজি, ইবনে মাজাহ: ৪২৫০)। এরপরও কিছু তওবা বা কারো কারো তওবা কবুল করা হয় না। যেমন—

১) মৃত্যুর সময় কেউ তওবা করলে, সে তওবার মূল্য নেই, তা কোনো কাজে আসবে না। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলার ঘোষণা—

‘আর (আজীবন) যারা মন্দ কাজ করে, তাদের জন্য তওবা নয়; আর তাদের কারো মৃত্যু উপস্থিত হলে সে বলে- ‘আমি এখন তওবা করছি।’আর তাদের জন্যও তওবা নয়; যারা অবিশ্বাসী অবস্থায় মারা যায়। এরাই তো তারা, যাদের জন্য আমি কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করেছি।’(সুরা নিসা: ১৮)

ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, এই আয়াত এবং একই সুরার ৪৮ নং আয়াত থেকে বোঝা যায় যে, কাফের অবস্থায় যারা মারা যাবে, তাদেরকে আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করবেন না। পক্ষান্তরে যাদের তাওহিদ ঠিক আছে, তাদেরকে তিনি তার ইচ্ছার উপর রেখেছেন। তাদেরকে তিনি ক্ষমা থেকে নিরাশ করেননি। (তাবারি)

সুরা নিসার ৪৮ নম্বর আয়াতটি হলো ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সঙ্গে শরিক করাকে ক্ষমা করেন না। তিনি ক্ষমা করেন অন্যান্য পাপ, যার জন্য তিনি চান। আর যে আল্লাহর সঙ্গে শরিক করে, সে অবশ্যই মহাপাপ রচনা করে।’

২) সুরা ইমরানে আল্লাহ তাআলা আরেক শ্রেণির বান্দার তওবা কবুল করবেন না জানিয়ে বলেন—

নিশ্চয়ই যারা বিশ্বাস করার পর অবিশ্বাস করে এবং যাদের অবিশ্বাস-প্রবৃত্তি বৃদ্ধি পেতে থাকে; তাদের তওবা কখনো কবুল করা হয় না। এরাই তো পথভ্রষ্ট।’(সুরা ইমরান: ৯০)

কাতাদা বলেন, তারা হচ্ছে আল্লাহর দুশমন ইহুদি সম্প্রদায়। তারা ইঞ্জিল ও ঈসা (আ.)-এর সঙ্গে কুফরি করেছে। তারপর তারা মুহাম্মদ (স.) ও কোরআনের সঙ্গে কুফরি করছে। (তাবারি)

সুতরাং তাদের জন্যই অপেক্ষা করছে ভয়াবহ পরিণতি। তাদের তওবা কবুল হওয়ার নয়। আবুল আলীয়া বলেন, তাদের তওবা কবুল না হওয়ার কারণ হচ্ছে, তারা কিছু গুনাহ হতে তওবা করলেও মূল গুনাহ (কুফরি) থেকে তওবা করে না। সুতরাং তাদের তওবা কীভাবে কবুল হবে? (ইবন আবী হাতেম)

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ আরও বলেন, ‘যারা ঈমান আনে ও পরে কুফরি করে এবং আবার ঈমান আনে, আবার কুফরি করে।’অতঃপর তাদের কুফরি বৃদ্ধি পায়, আল্লাহ তাদেরকে কিছুতেই ক্ষমা করবেন না এবং তাদেরকে কোনো পথে পরিচালিত করবেন না।’(সুরা নিসা: ১৩৭)

৩) একটি সময় আসবে, যখন আল্লাহ তাআলা কারো তওবাই কবুল করবেন না। সময়টি হচ্ছে পশ্চিমাকাশে সূর্যোদয়ের পর। এটি কেয়ামতের একটি বড় আলামত। রাসুলুল্লাহ (স.) এ প্রসঙ্গে ইরশাদ করেন—

‘আল্লাহ তাআলা রাতে নিজহাত প্রসারিত করেন, যেন দিনে পাপকারী তওবা করে; এবং দিনে তার হাত সম্প্রসারিত করেন; যেন রাতে পাপকারী তওবা করে। যে পর্যন্ত পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয় না হবে, সে পর্যন্ত এই রীতি চালু থাকবে।’(সহিহ মুসলিম: ৩১/২৭৫৯)

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, মৃত্যুর সময় আসার আগে সুস্থ থাকতেই তওবা করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসা। পরকালের চিরস্থায়ী জীবনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সময় থাকতে তওবা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।