ধর্ম ডেস্ক
২৯ জানুয়ারি ২০২৩, ০৪:২৫ পিএম
হজের ইতিহাস অতি প্রাচীন এবং এর প্রতিটি কাজ ঐতিহাসিক স্মৃতি বিজড়িত ও তাৎপর্যপূর্ণ। হজরত আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.) জান্নাত থেকে পৃথিবীতে আসার পর পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। একে অপরকে খুঁজতে থাকেন। অবশেষে আরাফাতের ময়দানে পরস্পর মিলিত হন। তারই কৃতজ্ঞতাস্বরূপ বনী আদম প্রতি বছর আরাফাতের প্রান্তরে উপস্থিত হন। রোনাজারি, কান্নাকাটির মাধ্যমে হৃদয় ও মন দিয়ে মহান প্রভুকে উপলব্ধি করার চেষ্টা করেন।
পরে হজরত ইবরাহিম (আ.) ও বিবি হাজেরা এবং তাঁদের সন্তান হজরত ইসমাইল (আ.)-এর মাধ্যমে প্রচলন হয় সাফা-মারওয়া সাঈ, মিনায় শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ এবং কোরবানি আদায় করার আমল। ইসমাইল (আ.)-এর মৃত্যুর পর পবিত্র কাবা বিভিন্ন জাতি-উপজাতির দখলে চলে যায় এবং তারা একে মূর্তিপূজার জন্য ব্যবহার করতে থাকে এবং এ সময় উপত্যকা এলাকায় মৌসুমি বন্যার কবলে পড়ে কাবা ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। অতঃপর ৬৩০ সালে মুহাম্মদ (স.) কাবাকে আবাদ করে পুনরায় আল্লাহর নামে উৎসর্গ করেন।
এভাবে হজরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত সর্বযুগের আল্লাহপ্রেমিক, আল্লাহর জন্য নিবেদিতপ্রাণ নবী-রাসুলগণসহ আল্লাহর নেককার, সত্যপ্রাণ ও মাকবুল বান্দাগণের পরম ব্যকুলতার সঙ্গে আল্লাহর ঘরে হাজিরা দেওয়ার মাধ্যমে রচিত হয়েছে হজ ও জিয়ারতের প্রেমময় বিধান। (সূত্র: মারেফুল কোরআন)
সুতরাং রাসুলুল্লাহ (স.)-এর আগমনের বহু আগে থেকে মক্কায় কাবাঘর ও পবিত্র হজ পালন জারি ছিল। তবে সব নবী-রাসুলের হজ করার ব্যাপারে স্পষ্ট বর্ণনা পাওয়া যায় না। যদিও ঐতিহাসিক সূত্র থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে সব নবী-রাসুল হজ করেছেন। রাসুল (স.) বলেন, রাওহা উপত্যকা দিয়ে ৭০ জন নবী পশমি কাপড় পরে হজ করতে গিয়েছিলেন এবং মসজিদে খায়ফে ৭০ জন নবী সালাত আদায় করেছিলেন। (বায়হাকি: ৯৮৩৭; মুসতাদরাক হাকেম: ৪১৬৯)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসুল (স.) বলেন, মসজিদে খায়ফে ৭০ জন নবী সালাত আদায় করেছেন। মুসা (আ.) তাঁদের অন্যতম। আমি যেন তাঁর দিকে তাকিয়ে আছি। তাঁর গায়ে দুটি পশমি চাদর জড়ানো। তিনি দুই গুচ্ছ লাগামবিশিষ্ট উটের ওপর ইহরাম বেঁধে বসে আছেন। (তাবরানি কাবির: ১২২৮৩)
হাদিসের কিতাবের বর্ণনা ছাড়াও মুসলিম ইতিহাসবিদদের লেখায় এ তথ্য পাওয়া যায় যে অনেক নবী পবিত্র হজ পালন করেছেন। ইবনে ইসহাক, হায়তামি ও ইবনে কাসির (রহ.)সহ বেশির ভাগ বিদ্বান মনে করেন, হুদ ও সালেহ (আ.) ছাড়া সব নবী-রাসুল হজ করেছেন। (সিরাতে ইবনে ইসহাক, পৃষ্ঠা ৯৫; আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া: ২/২৯৯)
এমনকি ঈসা (আ.) পৃথিবীতে আসার পর হজ করার কথা হাদিসে উল্লেখিত হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘সেই সত্তার কসম যাঁর হাতে আমার প্রাণ! মরিয়মপুত্র ঈসা অবশ্যই রাওহা উপত্যকায় হজ অথবা ওমরা অথবা উভয়ের তালবিয়া পাঠ করবেন।’ (মুসলিম: ১২৫২)
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে নবী-রাসুলদের স্মৃতি বিজড়িত পবিত্র কাবাঘর জেয়ারত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।