ধর্ম ডেস্ক
১৬ জানুয়ারি ২০২৩, ০৪:৪৪ পিএম
খোলা জায়গায় বিবস্ত্র হওয়া নাজায়েজ—বিষয়টি প্রায় সবার জানা থাকলেও আড়ালে এভাবে গোসল করা সম্পর্কে জানতে চান অনেকে। এ বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি হলো- লোকচক্ষুর আড়ালে থাকলেও প্রয়োজন ছাড়া বিবস্ত্র হয়ে গোসল করা উচিত নয়। এটি মন্দ অভ্যাস। তাই কারো মধ্যে এই অভ্যাস থাকলে তা পরিহার করা উচিত।
হাদিসে এসেছে, ইয়ালা ইবনু মুররা (রা.) বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ (স.) খোলা স্থানে এক ব্যক্তিকে গোসল করতে দেখলেন। তিনি এই দৃশ্য দেখে মসজিদের মিম্বারে উঠলেন, আল্লাহর প্রশংসা করলেন, অতঃপর বললেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ লজ্জাশীল ও পর্দাকারী। তিনি লজ্জা ও পর্দা করাকে ভালোবাসেন। অতএব যখন তোমাদের কেউ গোসল করে, তখন সে যেন পর্দা করে।’ (আবু দাউদ, মেশকাত: ৪৪৭)
আরও পড়ুন: পুরুষদের পর্দা কীভাবে করতে হয়?
মুয়াবিয়া বিন হাইদা (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘তুমি তোমার স্ত্রী ছাড়া অন্যদের কাছ থেকে তোমার লজ্জাস্থান সর্বদা হেফাজত করো (অর্থাৎ ঢেকে রাখো)।’ আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল! যদি কোনো ব্যক্তি কোথাও একাকি থাকে! (তখনও কি তা ঢেকে রাখতে হবে?)।’ তিনি বলেন, ‘অবশ্যই, কেননা আল্লাহকে অধিক লজ্জা করা উচিত।’ (তিরমিজি: ২৭৬৯) হাদিসে আল্লাহকে লজ্জা পাওয়ার কথা বলা হয়েছে। লজ্জা আসলে মুমিনের গুণ। আমাদের শ্রেষ্ঠ আদর্শ রাসুলুল্লাহ (স.) অধিক লাজুক ছিলেন। যখন তিনি লজ্জা পেতেন, ফুটন্ত গোলাপের মতো লাল হয়ে যেতেন। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, রাসুল (স.) গৃহবাসিনী পর্দানশিন কুমারীদের চেয়েও বেশি লজ্জাশীল ছিলেন। অন্য রেওয়ায়েতে আছে, যখন রাসুল (স.) কোনো কিছু অপছন্দ করতেন, তা চেহারায় বোঝা যেত। (বুখারি: ৩৫৬২)
তাই লোকচক্ষুর আড়ালে হলেও বিবস্ত্র না হওয়াই উত্তম; যদিও আড়ালে হলে এর অবকাশ আছে। মনে রাখা দরকার যে, আমাদের সঙ্গে থাকা ফেরেশতা কিরামান কাতিবীনকেও সম্মান করা মুমিনের জন্য জরুরি বিষয়।
আরও পড়ুন: ১১ শ্রেণির মানুষের জন্য ফেরেশতারা দোয়া করেন
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, তোমরা নগ্নতা হতে বেঁচে থাকো। কেননা তোমাদের এমন সঙ্গী আছেন (কিরামান-কাতিবিন) যারা পেশাব-পায়খানা ও স্বামী-স্ত্রীর সহবাসের সময় ছাড়া অন্যকোনো সময় তোমাদের থেকে আলাদা হন না। সুতরাং তাদের লজ্জা করো এবং সম্মান করো। (তিরমিজি) তাই লুঙ্গি ইত্যাদি বেঁধে এবং মেয়েরা নিচে পায়জামা বা ওড়নাসদৃশ ও বুকে গামছাসদৃশ কিছু রেখে গোসল করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন আলেমরা। আরেকটি বিষয় মনে রাখা উচিত যে গোপনাঙ্গের উন্মোচন পাপাচারের সহায়ক। আর পাপাচার বা নগ্নতার বিস্তারে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে সতর্ক করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা পছন্দ করে যে, ঈমানদারদের মধ্যে ব্যভিচার প্রসার লাভ করুক, তাদের জন্যে ইহকাল ও পরকালে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে। আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না। (সুরা নুর: ১৯)
প্রসঙ্গত, অজু বা গোসল হওয়া-না হওয়ার সঙ্গে বিবস্ত্র হওয়ার সম্পর্ক নেই। পরিপূর্ণভাবে ধৌত হয়ে গেলে বিবস্ত্র থাকলেও অজু ও গোসল হয়ে যাবে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে প্রত্যেক বিষয়ে সুন্নাহর অনুসরণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।