images

ইসলাম

দুই অঙ্গের সঠিক ব্যবহারে জান্নাতের নিশ্চয়তা

ধর্ম ডেস্ক

১৬ মার্চ ২০২২, ০৪:৪৪ পিএম

কেউ নিজের দুটি অঙ্গ হেফাজতের দায়িত্ব নিলে তার জান্নাতের জিম্মাদার হবেন বিশ্বনবী (স.)। অঙ্গ দুটি হচ্ছে জিহ্বা ও লজ্জাস্থান। অর্থাৎ গোপনাঙ্গ ও মুখের সঠিক ব্যবহার বা নিয়ন্ত্রণের উপর নির্ভর করছে উম্মতের জান্নাত। বর্ণনাটি হাদিসে এসেছে এভাবে— 

‘যে ব্যক্তি নিজের দুই চোয়ালের মধ্যস্থ অঙ্গ এবং দুই রানের মধ্যস্থ অঙ্গ হেফাজত করবে, আমি তার জান্নাতের জিম্মাদার।’ (সহিহ বুখারি: ৬৪৭৪)  

হাদিসের গভীরতা খেয়াল করুন। কেউ জিহ্বা ও লজ্জাস্থানের সঠিক ব্যবহার করলে তাকে জান্নাতে পাঠানোর দায়িত্ব রাসুলুল্লাহ (স.)-এর। এর তাৎপর্য কী? কারণ হলো- জিহ্বা যদিও একটি মাংসপিণ্ডের নাম, কিন্তু কর্মপরিধি ব্যাপক। এটিকে বলা হয় হৃদয়ের দরজা। হৃদয়ের সংবাদ সরবরাহ করা হয় জিহ্বার মাধ্যমে। এটি মানুষকে সম্মানের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে আবার ধ্বংসের অতলেও ডুবাতে পারে। সৎকাজের আদেশ, মন্দের নিষেধ, কোরআন-হাদিস-ফিকহ অধ্যায়ন, দ্বীনের দাওয়াত— সবগুলো জিহ্বার ভালো কাজ। তিরস্কার, নিন্দা, তোষামোদ, মুনাফেকি, পরনিন্দা, মিথ্যা সাক্ষ্য, আল্লাহর রাসুলকে গালি দেওয়া—এসব জিহ্বার মন্দ কাজ।

একইভাবে লজ্জাস্থানের মাধ্যমে সমকামিতা, হারাম বিয়ে, বিয়েবহির্ভূত ও বিকৃত যৌনাচার এবং ধর্ষণের মতো কঠিন পাপগুলো সংঘটিত হয়। এছাড়াও নারী-নির্যাতন, বেহায়াপনা ও অশ্লীল নাচ-গান-অঙ্গভঙ্গি—সব লজ্জাস্থানকে ঘিরেই। অথচ জৈবিক চাহিদা সহজাত। বিয়ের মাধ্যমে এই চাহিদাকে নিবৃত করার সুযোগ দিয়েছে ইসলাম। কিন্তু সীমালঙ্ঘন করা বা পশুসূলভ যৌনাচারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। যেসব যৌনতার মাধ্যমে মানুষের চিন্তাধারা বিকৃত হতে পারে, যার দ্বারা কুপ্রবৃত্তি লাগামহীন হতে পারে, যার কারণে জৈবিক উন্মাদনা বাড়তে পারে এবং যা সমাজের মধ্যে কোনো না কোনোভাবে নগ্নতা ও অশ্লীলতা ছড়ানোর জন্য দায়ী, ইসলাম এসব কিছুর পথ গোড়াতেই বন্ধ করে দিয়েছে। আর এ ধরণের মানুষের জান্নাতের জিম্মাদারি নেননি রাসুলুল্লাহ (স.), নিয়েছেন সঠিক ব্যবহারকারীদের।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে বলতে শুনেছেন, নিশ্চয়ই যে বান্দা পরিণাম চিন্তা ছাড়া এমন কথা বলে, যে কথার কারণে সে ঢুকে যাবে জাহান্নামের এমন গভীরে, যার দূরত্ব পূর্ব (পশ্চিম) এর দূরত্বের চেয়েও বেশি। (বুখারি: ৬৪৭৭)

অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (স.)-কে প্রশ্ন করা হলো, কোন কর্মটি সবচেয়ে বেশি পরিমাণ মানুষকে জান্নাতে নিয়ে যাবে? তিনি বলেন, আল্লাহভীতি, সদাচার ও উত্তম চরিত্র। আবার তাঁকে প্রশ্ন করা হলো, কোন কাজটি সবচেয়ে বেশি পরিমাণ মানুষকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে? তিনি বলেন, মুখ ও লজ্জাস্থান। (তিরমিজি: ২০০৪)

তাই মুমিনদের লক্ষ্য থাকে জান্নাতের। আর জান্নাতের জিম্মাদার যদি হন বিশ্বনবী (স.), উম্মতের জন্য এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর হতে পারে না। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্যই পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘হে নবী! আপনি মুসলমানদের বলে দিন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে এবং নিজেদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। এটা তাদের জন্য পবিত্রতার মাধ্যম। নিশ্চয় আল্লাহ সব কিছু জানেন যা কতিপয় লোক করে থাকে।’ (সুরা আন নূর: ৩০)

পবিত্র কোরআনের নির্দেশনা ও প্রিয়নবী (স.)-এর শিক্ষার প্রভাবে নবী যুগের লোকেরা (সম্মানিত সাহাবীরা) ছিলেন নিষ্কলুষ চরিত্রের অধিকারী। জিহ্বার পবিত্রতা রক্ষা এবং জৈবিক চাহিদা নিয়ন্ত্রণে পৃথিবীতে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন তাঁরা। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তাঁদের অনুসরণে উল্লিখিত অঙ্গ দুটির ব্যবহারে শরিয়তের সীমায় আবদ্ধ থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।