ধর্ম ডেস্ক
০২ জানুয়ারি ২০২৩, ০৪:৫৪ পিএম
স্বপ্নদোষ একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। একে নৈশকালীন নির্গমন, ভেজাস্বপ্ন, নিদ্রারতি, যৌন স্বপ্ন, সিক্ত স্বপ্ন, ঘুমন্ত রাগমোচন বা নৈশপতন নামেও অভিহিত করা হয়। ছেলে বা মেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর স্বপ্নদোষের অভিজ্ঞতা লাভ করে। সাধারণত এটি বয়ঃসন্ধিকালে বা উঠতি বয়সে সবচেয়ে বেশি ঘটে থাকে। তবে কারো ক্ষেত্রে বয়ঃসন্ধিকালের দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পরেও স্বপ্নদোষ হতে পারে।
স্বপ্নদোষ কী
ছেলেদের ক্ষেত্রে বীর্যথলিতে বীর্যের ধারণক্ষমতা পূর্ণ হওয়ার পর নিদ্রারত অবস্থায় অনিচ্ছাকৃতভাবে বীর্যপাত ঘটে দেহে বীর্যের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রিত হয়, একেই স্বপ্নদোষ বলা হয়। নারীদেরও স্বপ্নদোষ হয়। তবে তা পুরুষের মতো নয়। তাদের বীর্যপাত হয় না। তাদের যোনিতে রস জমা হয়। যাকে বলে যোনিরস। যৌনতা বিষয়ক স্বপ্ন দেখার পর তাদের যোনিদেশ অনেকটা ভিজে যায়।
মেয়েদের স্বপ্নদোষ হয়: দলিল
উম্মে সালামা (রা.) বলেন, আবু তালহা (রা.)-এর স্ত্রী উম্মে সুলাইম (রা.) আল্লাহর রাসুল (স.)-এর নিকট এসে আরজ করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহ তাআলা সত্যের বিষয়ে নিঃসঙ্কোচ। (তো আমার জিজ্ঞাসা এই যে,) কোনো নারীর স্বপ্নদোষ হলে কি তার উপর গোসল ফরজ হয়?’ উত্তরে আল্লাহর রাসুল (স.) বললেন, ‘হ্যাঁ। যদি সে পানি (ভেজা) দেখতে পায়।’ (সহিহ বুখারি: ১/৪২) এ হাদিস থেকে বোঝা যায়, ছেলেদের মতো মেয়েদেরও স্বপ্নদোষ হয় এবং তারা ভেজা দেখতে পায়।
আরও পড়ুন: হাদিসের আলোকে ‘নেককার স্ত্রী’ চেনার উপায়
স্বপ্নদোষ হলে কি গুনাহ হবে?
স্বপ্নের সঙ্গে দোষ শব্দটি যুক্ত থাকলেও মূলত এটি দোষ নয় বরং স্বাভাবিক ঘটনা। তাই এতে গুনাহ নেই। আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, তিন ধরণের লোকের ওপর থেকে কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছে—(১) নিদ্রিত ব্যক্তি, যতক্ষণ না জাগ্রত হয়। (২) অসুস্থ (পাগল) ব্যক্তি, যতক্ষণ না আরোগ্য লাভ করে এবং (৩) অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালক, যতক্ষণ না বালেগ হয়। (আবু দাউদ: ৪৩৯৮, ইবনে মাজাহ: ২০৪১)
তবে স্বপ্নদোষের পর বিনা ওজরে অপবিত্র থাকা গুনাহ। তাই দ্রুত গোসল করে পবিত্র হওয়া জরুরি। এমনকি ‘অপবিত্র অবস্থায় এক ওয়াক্ত নামাজের সময় অতিবাহিত হয়ে যাওয়াও মারাত্মক গোনাহের কাজ। এক্ষেত্রে তীব্র লজ্জা কিংবা গোসলের পরিবেশ নাই মনে করা শরিয়তসম্মত ওজর নয়।’ (বাদায়েউস সানায়ে: ১/১৫১)
স্বপ্নদোষ হলে কি রোজা ভেঙে যায়
স্বপ্নদোষের কারণে রোজা ভঙ্গ হয় না। ইসলামের একটি সৌন্দর্য হলো- অনিচ্ছাকৃত বা ভুলবশত কোনো বিষয়ে দোষারোপ করা হয় না। তাই এই ধারণা ঠিক নয় যে, স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভেঙে যাবে। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে নবী কারিম (স.) বলেন, ‘তিনটি জিনিস রোজা ভঙ্গের কারণ নয়— বমি, শিঙ্গা লাগানো ও স্বপ্নদোষ।’ (বায়হাকি: ৪/২৬৪; আদ্দুররুল মুখতার: ২/৩৯৬; মুসনাদে বাজ্জার: ৫২৮৭; মাজমাউজ জাওয়ায়েদ: ৩/১৭০; জামে তিরমিজি: ৭১৯)
আরও পড়ুন: থুথু গিলে ফেলাসহ ৩০ কারণে রোজা ভাঙে না
তবে, স্বপ্নদোষ হলে গোসল ফরজ হবে। এ বিধান নারীদের জন্যও প্রযোজ্য। স্বপ্নদোষ মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। তাই স্বপ্নদোষের কারণে রোজা ভঙ্গ হবে না। (ফতওয়ায়ে শামি, খণ্ড-০২, পৃষ্ঠা-৩৬৬)
ছেলেরা স্বপ্নদোষ হলে প্রাপ্তবয়স্ক গণ্য হয়
সাধারণত ছেলেদের নামাজ ফরজ হয় প্রথম স্বপ্নদোষ হওয়ার পর থেকে। আর মেয়েদের প্রথম মাসিকের পর থেকে। যদি ১৫ বছর পুরো হওয়ার পরও উক্ত আলামত দেখা না যায় তবে চান্দ্রবছর হিসেবে ১৫ বছর পূর্ণ হওয়ার দিন থেকে ছেলে-মেয়ে উভয়ে বালেগ তথা প্রাপ্ত বয়স্ক বলে গণ্য হবে। (আলবাহরুর রায়েক: ৮/৮৪-৮৫; ফতোয়ায়ে তাতারখানিয়া: ২/৪৫৪, ১৬/২৮০; আদ্দুররুল মুখতার: ২/৭৬, ৬/১৫৩; ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/১২১)
স্বপ্নে যৌনতা সম্পর্কে দেখলেই অপবিত্র হয় না
কেউ যৌনতা সম্পর্কে স্বপ্ন দেখে ততক্ষণ অপবিত্র বলে সাব্যস্ত হবে না, যতক্ষণ না সে নিজে শরীরে বা কাপড়ে নাপাকির চিহ্ন দেখবে না। তাই তার ওপর গোসলও ফরজ হবে না। অর্থাৎ শুধু স্বপ্নের কারণে তাকে গোসল করতে হবে না। (ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/১৫; এমদাদুল ফতোয়া: ১/২১)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শরিয়তের সকল বিধি-বিধান, মাসয়ালা-মাসায়েল জানার, বুঝার ও যথাযথ আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।