images

ইসলাম

মানুষের সম্মান রক্ষার ফজিলত

ধর্ম ডেস্ক

০১ জানুয়ারি ২০২৩, ০৪:২৫ পিএম

আল্লাহ মানুষকে সম্মানিত করে সৃষ্টি করেছেন। তাকে অসম্মান বা মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করার অধিকার কারো নেই। পবিত্র কোরআনে একজন মানুষের জীবনকে সমগ্র মানবজাতির জীবনের সঙ্গে তুলনা করে বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি মানুষ হত্যা বা পৃথিবীতে ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর দায় ছাড়া কোনো মানুষকে হত্যা করল, সে যেন সব মানুষকে হত্যা করল। যে কোনো একজন মানুষের জীবন রক্ষা করল, সে যেন সব মানুষের জীবন রক্ষা করল।’ (সুরা মায়েদা: ৩২)

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, আল্লাহর কাছে পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার চেয়ে একজন মুসলিমের খুন হওয়া গুরুতর।’ (সুনানে তিরমিজি: ১৩৯৫)

পবিত্র কোরআনে মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণায় আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি মানবজাতিকে সম্মানিত করেছি, তাকে কর্তৃত্ব দিয়েছি স্থলে ও জলে, তাদেরকে দিয়েছি উত্তম জীবিকা এবং তাদের শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি আমার সৃষ্টিজগতের অনেকের ওপর।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ৭০)

শুধু ইহজীবনে নয়; মৃত্যুর পরও মানুষের মর্যাদা রক্ষার নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘তোমরা যখন তোমাদের কোনো ভাইকে কাফন পরিধান করাও তখন সুন্দরভাবে পরিধান করাবে।’ (সহিহ মুসলিম: ৯৪৩)

আরো ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা মৃতদের গালি দিয়ো না। কেননা তারা তাদের কৃতকর্মের প্রতিদান পেয়ে গেছে।’ (সহিহ বুখারি: ৬৫১৬)

রাসুলুল্লাহ (স.)-ও ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে মানুষকে সম্মান দিয়েছেন। হাদিসে এসেছে, ‘রাসুলুল্লাহ (স.)-এর পাশ দিয়ে একটি লাশ নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন। তাঁকে বলা হলো, লাশটি একজন ইহুদির। রাসুল (স.) বললেন, সে কি মানুষ নয়?’ (সহিহ মুসলিম: ৯৬১)

তাই মানুষের সম্মান রক্ষা করা ইসলামে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং এর ফজিলত অসীম। জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পাওয়ার বড় উপায়। আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (স.) বলেন, ‘যে তার ভাইয়ের সম্মান তার অনুপস্থিতিতে রক্ষা করে, আল্লাহ কেয়ামতের দিন তার মুখমণ্ডল আগুন থেকে রক্ষা করবেন।’ (সুনানে তিরমিজি: ১৯৩১)

মহানবী (স.) সকল মুমিন নারী-পুরুষের জন্য ক্ষমা, বরকত ও কল্যাণের দোয়া করতেন। কারণ এ বিষয়ে মহান আল্লাহ আয়াত নাজিল করে বলেছেন, (হে রাসুল! আপনি) ক্ষমা প্রার্থনা করুন, আপনার নিজের জন্য এবং মুমিন পুরুষ ও নারীদের জন্য।' (সুরা মুহাম্মদ: ১৯)

ইসলামে ভাইয়ের কল্যাণকামী হওয়া একটি মহান গুণ। ভাইয়ের জন্য দোয়া করার ফজিলত প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যখন কোনো মুসলিম তার ভাইয়ের জন্য তার পশ্চাতে দোয়া করে, তখন তার (মাথার কাছে নিযুক্ত) একজন ফেরেশতা তাঁকে লক্ষ্য করে বলে, তোমার জন্যও এমনই হোক’। (সহিহ মুসলিম: ২৭৩২)

অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘কোনো মুসলিম তার ভাইয়ের অবর্তমানে তার জন্য নেক দোয়া করলে তা কবুল হয়। তার মাথার কাছে একজন ফেরেশতা নিয়োজিত থাকে, যখনই সে তার ভাইয়ের জন্য দোয়া করে, তখনই ওই ফেরেশতা বলেন, ‘আমিন! তোমার জন্যও এমনই হোক’। (সহিহ মুসলিম: ২৭৩২)

যারা মানুষের ক্ষতি করে না, মান-সম্মান রক্ষা করে, মানুষের উপকার করে, তারা আল্লাহর পছন্দের বান্দা। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে মানুষের জন্য সবচেয়ে বেশি উপকারী, সেই আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বেশি প্রিয়।’ (আততারগিব: ২৬২৩)

পৃথিবীর জীবন ও বাস্তবতার কারণে ইসলাম দাসপ্রথাকে পুরোপুরি নিষিদ্ধ করেনি। তবে দাসপ্রথার প্রতি নিরুৎসাহ করেছে। নানা প্রতিকূলতার কারণে কেউ দাসত্বের শিকার হলেও তার সঙ্গে দাসসুলভ আচরণ করতে নিষেধ করেছে। বরং মানুষ হিসেবে তার সম্মান, মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিত করতে বলেছে। প্রকৃতপক্ষে মানুষ আল্লাহর দাস এবং মানুষের সেবক। এ জন্য ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলতেন, ‘তোমরা কখন মানুষকে দাস বানিয়ে ফেললে, অথচ তারা স্বাধীন হিসেবে জন্মগ্রহণ করেছে।’ (আল ইরহাবুদ-দুওয়ালি, পৃষ্ঠা-১৯৫)

অতএব, ইসলামে কারো সম্মানহানীর সুযোগ নেই। উপরন্তু সুধারণা পোষণ করতে বলা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন তারা এটা শুনল, তখন মুমিন পুরুষ এবং মুমিন নারীরা আপন লোকদের সম্পর্কে কেন ভালো ধারণা করল না এবং বলল না, এটা তো নির্জলা অপবাদ।’ (সুরা নুর: ১২)

এই আয়াতে ইফকের ঘটনায় মানুষের নানা কথার বিপরীতে আয়েশা (রা.)-এর চারিত্রিক পবিত্রতা ঘোষণা করা হয়েছে। অন্যের ব্যাপারে উত্তম ধারণার প্রতি তাকিদ দিয়ে হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে— ‘সুন্দর ধারণা সুন্দর ইবাদতের অংশ।’ (আবু দাউদ: ৪৯৯৩)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার, কল্যাণকামী হওয়ার, মানুষকে দয়া করার, উপকার করার এবং মান-সম্মান রক্ষা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।