images

ইসলাম

করজে হাসানা উত্তম ইবাদত

ধর্ম ডেস্ক

০৮ ডিসেম্বর ২০২২, ০৫:১৬ পিএম

আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভের আশায়, সওয়াবের নিয়তে বিনা শর্তে কাউকে ঋণ দিলে তাকে ‘করজে হাসানা’ বা উত্তম ঋণ বলে। উত্তম ঋণ মূলত সেই ঋণ, যা ঋণগ্রহীতাকে চাপে ফেলে না। অর্থাৎ এই ঋণের মূল পয়েন্টই হচ্ছে ঋণদাতা কোনোভাবেই ঋণগ্রহীতাকে ঋণ আদায় করার জন্য তাগাদা দেবে না। যেমনটি সুরা বাকারায় ইরশাদ হয়েছে— ‘যদি ঋণগ্রহীতা অভাবগ্রস্ত হয়, তবে তার সচ্ছলতা আসা পর্যন্ত সময় দেওয়া উচিত। আর যদি ক্ষমা করে দাও, তবে তা খুবই উত্তম। যদি তোমরা উপলব্ধি কর।’ (সুরা বাকারা: ২৮০)

গ্রহীতাকে ঋণ পরিশোধের জন্য যত বেশি সময় দেওয়া হয়, ততই ঋণদাতার আমলনামায় সওয়াব যোগ হয়। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘নির্দিষ্ট সময়ে পুরো ঋণ শোধ করতে হিমশিম খাচ্ছে—এমন ঋণগ্রস্তকে যে ঋণ পরিশোধ করার জন্য সময় দেয়, ওই ব্যক্তিকে এমন সওয়াব দেওয়া হবে, যেন সে প্রতিদিনই সমপরিমাণ টাকা সদকা করছে। আর ঋণ পরিশোধের সময় চলে যাওয়ার পরও যে ঋণগ্রস্তকে সময় বাড়িয়ে দেয়; তাতে অতিরিক্ত প্রতিটি দিনের জন্য তাকে এমন সাওয়াব দেওয়া হবে, যেন সে প্রতিদিন ধার দেয়া টাকার চেয়ে দ্বিগুণ পরিমাণ টাকা সদকা করছে।’ (মুসনাদে আহমদ)

কোরআন হাদিসে করজে হাসানার পর্যালোচনায় দেখা যায়, সদকা বা দান ইসলামে সৎকর্ম হিসেবে বিবেচিত হলেও এর চেয়েও উত্তম হচ্ছে করজে হাসানা দেওয়া। আর এ কারণে খোদ সৃষ্টিকর্তাই করজে হাসানা চেয়েছেন তাঁর বান্দাদের কাছ থেকে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে— ‘কে আছো, যে আল্লাহকে করজে হাসানা প্রদান করবে? তিনি তাহার জন্য ইহা বহুগুণে বৃদ্ধি করবেন’ (সুরা বাকারা: ২৪৫)। অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘যদি তোমরা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দান করো, তবে তিনি তোমাদের জন্য তা বহুগুণে বৃদ্ধি করবেন এবং তোমাদের ক্ষমা করবেন। আল্লাহ গুণগ্রাহী ও ধৈর্যশীল।’ (সুরা তাগাবুন: ১৭)

আল্লাহ তাআলা করজে হাসানা সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আরও ইরশাদ করেছেন, আমি তোমাদের সঙ্গে আছি; তোমরা যদি সালাত কায়েম করো, জাকাত দাও, আমার রাসুলদের ওপর ঈমান আনো ও সম্মান করো এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ (করজে হাসানা) প্রদান করো, তাহলে তোমাদের পাপ অবশ্যই মোচন করব এবং নিশ্চয়ই তোমাদের দাখিল করব জান্নাতে, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত। এরপরও কেউ কুফরি করলে সে তার সরল পথ হারাবে। (সুরা মায়েদা: ১২)

আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘এক ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করে তার দরজায় একটি লেখা দেখতে পেল যে, সদকার নেকি ১০ গুণ বৃদ্ধি করা হয় এবং ঋণ দানের নেকি ১৮ গুণ বৃদ্ধি করা হয়।’ (সিলসিলা সহিহাহ: ৩৪০৭)

দান বা খয়রাত ফেরত দিতে হয় না কিন্তু করজে হাসানা ফেরত দিতে হয়। এরপরেও প্রায় দ্বিগুণ সওয়াব পাওয়ার কারণ কী? মূলত আল্লাহপাক প্রতিটি মানুষকে স্বাবলম্বী করার ব্যবস্থাপত্র দিয়েছেন। এটি স্বাবলম্বী করারই নিদর্শন। হজরত আবু দারদা (রা.) বলেন, ‘কাউকে দুই দিনার ঋণ দেওয়া আমার কাছে এই দুই দিনার সদকা করার চেয়ে বেশি প্রিয়’  (ইবনে আবি শায়বা: ২২৬৮২)

যদিও অনন্যোপায় হলে তবেই ঋণ নেওয়া উচিত, এর আগে নয়। কেননা রাসুল (স.) ঋণ নেওয়া থেকে নিজেকে যতদূর সম্ভব বিরত রাখতেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুসলমানরা, তালির ওপর তালিযুক্ত ছিন্নবস্ত্র পরিধান করা, ঋণ গ্রহণ অপেক্ষা উত্তম, যদি তা শোধ করার শক্তি না থাকে। (মুসনাদ আহমদ)। রাসুলুল্লাহ (স.) আরও বলেছেন, হে মুসলমানরা ঋণ গ্রহণ থেকে বেঁচে থাকো। কেননা, ঋণ রাত্রীকালে মর্ম বেদনা ও দুঃশ্চিন্তা সৃষ্টি করে এবং দিনের বেলায় অপমান ও লাঞ্চনায় লিপ্ত করে। (বায়হাকি)

এরপরও করজে হাসানা আর্থিক ইবাদতের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ ইবাদত। কোরআনে কারিমে ব্যবহৃত করজে হাসানা (উত্তম ঋণ) দ্বারা উদ্দেশ্য হলো- আল্লাহ তাআলার রাস্তায় খরচ করা, অভাবী, এতিম ও বিধবাদের ব্যয়ভার বহন করা, ঋণী ব্যক্তিদের ঋণ পরিশোধে সাহায্য করা এবং নিজ সন্তানাদি ও পরিবারের ওপর খরচ করা। মোটকথা, মানবকল্যাণের যত দিক আছে সবগুলোই এর অন্তর্ভুক্ত। এমনিভাবে কোনো অভাবী ও চিন্তাগ্রস্থকে এই নিয়তে ঋণ দেওয়া যে, ওই ব্যক্তি যদি স্বীয় সামর্থ্য ও চিন্তার দরূণ ঋণ পরিশোধ করতে না পারে, তবে তার কাছে আর চাওয়া হবে না। এটাও করজে হাসানার অন্তর্ভুক্ত।

ইসলামি আর্থসামাজিক ব্যবস্থায় করজে হাসানার গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই দানশীল নর-নারী, যারা আল্লাহকে উত্তমরূপে ধার দেয়, তাদের দেয়া হবে বহুগুণ। তাদের জন্য রয়েছে সম্মানজনক পুরস্কার।’ (সুরা হাদিদ: ১৮)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে অন্য মুসলমানের বিপদে-আপদে উত্তম ঋণ দেওয়ার মানসিকতা দান করুন। ঋণগ্রহীতাকে ঋণ পরিশোধের তাওফিক দান করুন। আমিন।