images

ইসলাম

অসুখ-বিসুখ নেককার বান্দার জন্য বিশেষ নেয়ামত

ধর্ম ডেস্ক

০৬ ডিসেম্বর ২০২২, ১২:৪৬ পিএম

অসুস্থতা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে নেককার বান্দাদের জন্য বিশেষ নেয়ামত। আল্লাহ তাআলা তাঁর পছন্দের বান্দাদের অসুখ-বিসুখের মাধ্যমে গুনাহ ক্ষমা করেন, সওয়াব বাড়িয়ে দেন, কবর আজাব থেকে পরিত্রাণ দেন। কিছু অসুখে রয়েছে শহিদি মৃত্যুর মর্যাদা। এক কথায় আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় বান্দাদের অসুখ-বিসুখ ও বিপদ-মসিবতের মাধ্যমে জাহান্নাম থেকে নিষ্কৃতি দিয়ে জান্নাতে দাখিল করেন। সুবহানাল্লাহ!

রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, মুমিন বান্দা যখন অসুস্থ হয় এবং আল্লাহ তাআলা তা থেকে তাকে সুস্থও করে দেন এ অসুস্থতা তার পূর্ববর্তী গুনাহের কাফফারা এবং ভবিষ্যতের জন্য উপদেশ হয়। (সুনানে আবু দাউদ: ৩০৮৯)

আরও পড়ুন: শীতে যেসব ইবাদতে জোর দেবেন

উল্লেখিত হাদিস থেকে বোঝা গেল, ঈমানদারের জন্য অসুস্থতার দুটি ফায়দা রয়েছে, ১. এ রোগ তার পূর্ববর্তী গুনাহের কাফফারা হয়। অর্থাৎ অসুস্থতার ওসিলায় তার পূর্ববর্তী গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। ২. এ রোগ তার ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য উপদেশস্বরূপ। অর্থাৎ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া ব্যক্তির মনে এ কথা জাগ্রত হবে, আল্লাহ যা ইচ্ছা করতে পারেন। যেকোনো সময় আমাকে অসুস্থ করতে পারেন। ফলে সে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকবে।

প্রিয়নবী (স.) জ্বরে আক্রান্ত এক ব্যক্তিকে বলেন, ‘সুসংবাদ গ্রহণ করো! কেননা মহান আল্লাহ বলেন, ‘এই (রোগ) আমার আগুন, যা আমি দুনিয়াতে আমার মুমিন বান্দার ওপর চাপিয়ে দেই, যাতে আখেরাতের আগুনের পরিপূরক হয়ে যায়।’ (ইবনে মাজাহ: ৩৪৭০)

আরও পড়ুন: যাদের জন্য জাহান্নাম হারাম

অন্য হাদিসে এসেছে, ‘কেয়ামতের দিন বিপদে পতিত ব্যক্তিদের যখন প্রতিদান দেওয়া হবে, তখন (পৃথিবীর) বিপদমুক্ত মানুষেরা আফসোস করে বলবে, হায়! দুনিয়াতে যদি কাঁচি দ্বারা তাদের শরীরের চামড়া কেটে টুকরো টুকরো করে দেওয়া হতো!’ (তিরমিজি: ২৪০২)

অসুস্থতার এ উপকারিতা শুধু ঈমানদারের জন্য। পক্ষান্তরে মুনাফেকের ব্যাপারে বলা হয়েছে, আর মুনাফেক যখন অসুস্থ হওয়ার পর সুস্থ হয়ে ওঠে তখন তার অবস্থা হয় এমন এক উটের মতো যাকে তার মালিক আটকে রাখল অতঃপর ছেড়ে দিলো। উট জানেই না কী কারণে তাকে বাঁধা হয়েছিল আর কী কারণে ছেড়ে দেয়া হলো। (সুনানে আবু দাউদ: ৩০৮৯)

কখনও রোগ না হওয়া জাহান্নামি হওয়ার লক্ষণ। কারণ যার অসুখ হয় না, ধরে নেওয়া যায় যে আল্লাহ তাকে ভালোবাসেন না। ফলে আখেরাতে সে জাহান্নামি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘একজন গ্রাম্য লোক আগমন করলে নবী (স.) বলেন, তোমার কি কখনো উম্মু মিলদাম (এক ধরনের জ্বর) হয়েছে? লোকটি বলল, উম্মু মিলদাম আবার কী? তিনি বলেন, এটা চামড়া ও গোশতের মধ্যকার তাপমাত্রা (জ্বর)। সে বলল, না। নবী (স.) বলেন, তোমার কি মাথাব্যথা হয়?

আরও পড়ুন: মুমিনের বিপদ-আপদ আল্লাহর ভালোবাসার প্রমাণ!

সে বলল, মাথাব্যথা আবার কী? তিনি বললেন, এক ধরনের বাতাস, যা মাথায় প্রবেশ করে এবং শিরা-উপশিরায় আঘাত হানে। সে বলল, এটা আমার হয় না। এরপর লোকটি যখন উঠে দাঁড়াল, নবী (স.) তখন বলেন, যে ব্যক্তি কোনো জাহান্নামি ব্যক্তিকে দেখে আনন্দবোধ করে, সে যেন এই লোকটাকে দেখে নেয়।’ (আদাবুল মুফরাদ: ৪৯৫)

কিন্তু ঈমানদারের বিষয়টি আল্লাহর কাছে আলাদা। মুমিনের অসুখ-বিসুখ, বিপদ-মসিবত সবকিছুতেই তিনি রেখে দিয়েছেন কল্যাণ আর কল্যাণ। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘মুমিনের বিষয়টি কতইনা চমৎকার! তার জন্য কল্যাণ ছাড়া আর কিছুই নেই। তার জন্য যদি কোনো খুশির ব্যাপার হয় এবং সে কৃতজ্ঞতা আদায় করে তাহলে সেটি তার জন্য কল্যাণকর। আর যদি কোনো দুঃখের বিষয় হয় এবং সে ধৈর্য ধারণ করে, সেটিও তার জন্য কল্যাণকর।’ (সহিহ মুসলিম: ২৯৯৯)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে অসুখ-বিসুখ, বিপদ-মসিবতে সবর করার তাওফিক দান করুন। মৃত্যু-কবর-হাশরের কঠিন বিপদ থেকে নাজাত দান করুন। সর্বোপরি জান্নাতুল ফেরদাউস নসিব করুন। আমিন।