images

ইসলাম

আল্লাহর প্রশংসায় গোটা সৃষ্টিজগত, তাসবিহ দিয়ে শুরু ৭ সুরা 

ধর্ম ডেস্ক

১৮ অক্টোবর ২০২২, ০৩:৫৬ পিএম

আল্লাহর প্রশংসা বাক্যই হলো তাসবিহ। আসমান-জমিনের সবকিছুই আল্লাহর তাসবিহ পাঠ করে। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘সাত আকাশ, পৃথিবী ও এগুলোর মধ্যে যা কিছু আছে, সব কিছুই তাঁর (আল্লাহর) পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে। আর এমন কিছু নেই, যা তাঁর প্রশংসা, পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে না। কিন্তু তোমরা তাদের পবিত্রতা ও মহিমাকীর্তন বুঝতে পারো না। অবশ্যই তিনি সহিষ্ণু, ক্ষমাশীল।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ৪৪)

ইমাম কুরতুবি (রহ.)-সহ একদল তাফসিরবিদের মতে, সৃষ্টিগতভাবে জগতের প্রতিটি অণু-পরমাণুকে তাসবিহ পাঠকারী বানিয়েছেন মহান আল্লাহ। কিন্তু সাধারণ মানুষ তা অনুধাবন করতে পারে না। তা মানুষের বোধশক্তি ও অনুভূতির ঊর্ধ্বে। ইমাম কুরতুবি (রহ.) তাঁর বক্তব্যের পক্ষে কোরআন থেকে উদ্ধৃতি দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে দাউদ (আ.) সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে, ‘আমি (আল্লাহ) নিয়োজিত করেছি পর্বতকে, যাতে তারা সকাল-সন্ধ্যায় তার সঙ্গে আমার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে। এবং সমবেত বিহঙ্গকুলকেও। সবাই ছিল তার অনুগত।’ (সুরা সাদ: ১৮-১৯)

আকাশ-বাতাসও আল্লাহর গুণকীর্তণ করে। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তুমি কি দেখনি যে আসমান ও জমিনে যারা আছে তারা এবং সারিবদ্ধ হয়ে উড়ন্ত পাখিরা আল্লাহর তাসবিহ পাঠ করে? প্রত্যেকেই তাঁর সালাত ও তাসবিহ জানে। তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবগত’ (সুরা নুর: ৪১)। বজ্র সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর বজ্র তার সপ্রশংস তাসবিহ পাঠ করে।’ (সুরা রাদ : ১৩)

ফেরেশতাদের তাসবিহ পাঠ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর ফেরেশতারা তাদের রবের প্রশংসায় তাসবিহ পাঠ করে এবং পৃথিবীতে যারা আছে তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে; জেনে রেখো, আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা শুরা: ৫)

পাহাড়-পর্বত সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আমি পর্বতমালা ও পাখিদের দাউদের অধীন করে দিয়েছিলাম, তারা দাউদের সঙ্গে আমার তাসবিহ পাঠ করত। আর এসব আমিই করছিলাম।’ (সুরা আম্বিয়া: ৭৯)

বস্তুর ছায়া সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে, ‘তারা কি আল্লাহর সৃজিত বস্তু দেখে না, যার ছায়া আল্লাহর প্রতি বিনীতভাবে সেজদাবনত হয়ে ডান ও বাম দিকে ঢলে পড়ে।’ (সুরা নাহল: ৪৮)

পিঁপড়ারাও জিকির করে। এ সম্পর্কে আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, একটি পিঁপড়া নবীকুলের কোনো নবীকে কামড়ে দিলে তিনি পিঁপড়ার বাসা সম্পর্কে বিশেষ হুকুম দিলেন, ফলে তা জ্বালিয়ে দেওয়া হলো। তখন আল্লাহ তাআলা তাঁর কাছে এই মর্মে ওহি পাঠালেন যে একটি (মাত্র) পিঁপড়া তোমাকে কামড়ে দিল, তাতে কিনা তুমি উম্মত ও সৃষ্টিকুলের এমন একটি দলকে জ্বালিয়ে দিলে, যারা তাসবিহ পাঠ করছিল? (মুসলিম: ৫৬৫৪)

এসব বর্ণনা থেকে স্পষ্টভাবে জানা যায় যে আসমান-জমিন গোটা পৃথিবী মহান আল্লাহর তাসবিহ পাঠ করে। আল্লাহর জিকির প্রকৃত মুমিনের অন্তরে সুখ ও প্রশান্তিলাভের এক অনন্য মহৌষধ। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যারা বিশ্বাস করেছে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের হৃদয় প্রশান্ত হয়। জেনে রাখ, আল্লাহর স্মরণের মাধ্যমে অন্তর প্রশান্তি লাভ করে। (সুরা রাদ: ২৮)

আর যারা জিকির করে না, তারা হাদিসের ভাষায় মৃত। আবু মুসা আশয়ারি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যারা আল্লাহর জিকির করে এবং যারা আল্লাহর জিকির করে না, তাদের দৃষ্টান্ত জীবিত ও মৃত ব্যক্তির মতো।’ (সহিহ বুখারি: ৬৪০৭)

উল্লেখিত হাদিসে মহানবী (সা.) আল্লাহর স্মরণবিমুখ মানুষকে মৃত ব্যক্তির সঙ্গে তুলনা করেছেন। পবিত্র কোরআনে এমন ব্যক্তি সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আমার স্মরণে বিমুখ থাকবে, অবশ্যই তার জীবনযাপন হবে সংকুচিত। আর তাকে কেয়ামতের দিন উঠাব অন্ধ করে।’ (সুরা ত্বহা: ১২৪)

জিকিরের গুরুত্বের প্রমাণ পাওয়া যায় পবিত্র কোরআনের আগা-গোড়ায়। মহান আল্লাহ ৭টি সুরা শুরুই করেছেন তাসবিহ দিয়ে। যা তাসবিহের গুরুত্ব ও মর্যাদার বড় প্রমাণ। সুরাগুলোকে বলা হয় মুসাব্বিহাত। এই ৭ সুরার প্রত্যেকটির প্রথম আয়াত অর্থসহ নিচে দেওয়া হলো—

১) সুরা ইসরা বা বনি ইসরাইল: سُبۡحٰنَ الَّذِیۡۤ اَسۡرٰی بِعَبۡدِهٖ لَیۡلًا مِّنَ الۡمَسۡجِدِ الۡحَرَامِ اِلَی الۡمَسۡجِدِ الۡاَقۡصَا الَّذِیۡ بٰرَکۡنَا حَوۡلَهٗ لِنُرِیَهٗ مِنۡ اٰیٰتِنَا ؕ اِنَّهٗ هُوَ السَّمِیۡعُ الۡبَصِیۡرُ ‘পবিত্র ও মহিমময় তিনি, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতারাতি ভ্রমণ করিয়েছেন (মক্কার) মাসজিদুল হারাম হতে (ফিলিস্তিনের) মাসজিদুল আকসায়, যার পরিবেশকে আমি করেছি বরকতময়, যাতে আমি তাকে আমার কিছু নিদর্শন দেখাই; নিশ্চয় তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।’ 

২) সুরা হাদিদ: سَبَّحَ لِلّٰهِ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ۚ وَ هُوَ الۡعَزِیۡزُ الۡحَکِیۡمُ ‘আসমানসমূহ ও জমিনে যা কিছু আছে, সবই আল্লাহর তাসবিহ পাঠ করে। আর তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ 

৩) সুরা সফ: سَبَّحَ لِلّٰهِ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَ مَا فِی الۡاَرۡضِ ۚ وَ هُوَ الۡعَزِیۡزُ الۡحَکِیۡمُ ‘আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবকিছুই আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ 

৪) সুরা হাশর:  سَبَّحَ لِلّٰهِ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَ مَا فِی الۡاَرۡضِ ۚ وَ هُوَ الۡعَزِیۡزُ الۡحَکِیۡمُ ‘আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ 

৫) সুরা জুমা: یُسَبِّحُ لِلّٰهِ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَ مَا فِی الۡاَرۡضِ الۡمَلِکِ الۡقُدُّوۡسِ الۡعَزِیۡزِ الۡحَکِیۡمِ ‘আসমানসমূহে এবং জমিনে যা আছে সবই পবিত্রতা ঘোষণা করে আল্লাহর। যিনি বাদশাহ, মহাপবিত্র, মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ 

৬) সুরা তাগাবুন:  یُسَبِّحُ لِلّٰهِ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَ مَا فِی الۡاَرۡضِ ۚ لَهُ الۡمُلۡکُ وَ لَهُ الۡحَمۡدُ ۫ وَ هُوَ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ قَدِیۡرٌ ‘আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবাই তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে, সার্বভৌমত্ব তাঁরই এবং প্রশংসা তাঁরই; তিনি সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।’

৭) সুরা আলা: سَبِّحِ اسۡمَ رَبِّکَ الۡاَعۡلَی ‘আপনি আপনার সুমহান রবের নামের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করুন।’ 

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জিকিরের গুরুত্ব অনুধাবন করার এবং সবসময় আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণার মাধ্যমে জীবন অতিবাহিত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।