images

ইসলাম

ইসলাম পরিপূর্ণ দীন, বিদআত পরিত্যাজ্য

ধর্ম ডেস্ক

১৮ অক্টোবর ২০২২, ১১:৫৪ এএম

ইসলাম পরিপূর্ণ জীবন বিধান। এটি এমন দীন, যাতে কোনো অপূর্ণতা নেই, বক্রতা নেই। এই দীন পূর্ণতার সর্বোচ্চ শিখরে উপনীত। এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলা নিজেই ঘোষণা করেছেন—‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং তোমাদের ওপর আমার নেয়ামত সম্পূর্ণ করলাম, আর তোমাদের জন্য ইসলামকে দীন হিসেবে পছন্দ করলাম।’ (সুরা মায়েদা: ৩)

কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য- যুগে যুগে দীনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টায় করা হয়েছে। তারা কারা? তারা হচ্ছেন ওসব লোক, যারা দীনে নতুন কিছু সংযোজন করে। এক কথায় যারা বিদআতে জড়িত। অথচ দীনের মধ্যে কোরআন সুন্নাহর বাইরে কোনো সংযোজনই গ্রহণযোগ্য নয়, বরং তা প্রত্যাখ্যাত।

 উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমাদের এ দীনে (ইসলাম ধর্মে) নতুন কিছু সৃষ্টি করে, যা তার মধ্যে নেই তা প্রত্যাখ্যানযোগ্য।’ (সহিহ বুখারি: ২৬৯৭)

হাদিসটি শরিয়তে নব আবিষ্কৃত বিষয় তথা বিদআত প্রতিরোধের মূল ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত। এই হাদিসের আলোকেই বিদআত প্রত্যাখ্যানের মূলনীতি গ্রহণ করা হয়েছে। ইমাম নববি (রহ.) বলেন, ‘হাদিসটি মুখস্থ করা, পাপাচার রোধে ব্যবহার করা এবং তা দ্বারা যুক্তি-প্রমাণ পেশ করা উচিত।’ (মুখতাসার নাইলিল আওতার: ১/২৭৫)

শায়খ আলবানি (রহ.) বলেন, ‘..হাদিসটি বিদআত ও নবপ্রবর্তিত বিষয়াদি বাতিল ও প্রত্যাখ্যান করার সুস্পষ্ট দলিল।’ (আদদিবাজু আলাল মুসলিম: ৪/৩২১)

সৎ নিয়তে বা ভালো উদ্দেশ্যেও দীনে নতুন কিছু প্রবর্তন করা হারাম। যে ব্যক্তি তা করবে, সে আমলের দায় তাকেই বহন করতে হবে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই সর্বোত্তম বাণী আল্লাহর কিতাব। আর সর্বোত্তম আদর্শ মুহাম্মদ (স.)-এর আদর্শ। সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হলো, (দীনের মধ্যে) নব-উদ্ভাবিত বিষয়। (দীনের মধ্যে) নব-উদ্ভাবিত সবকিছুই বিদআত। প্রত্যেক বিদআত ভ্রষ্টতা, আর প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম।’ (মুসলিম: ১৫৩৫; নাসায়ি: ১৫৬০)

শরিয়তে কোনো কিছু নতুনভাবে শুরু করার অর্থই হলো- এক কথা প্রমাণ করা যে, ইসলাম অপূর্ণ রয়ে গেছে; তাই পূর্ণ করতে নতুন কিছু যোগ করতে হচ্ছে। নাউজুবিল্লাহ! অথচ কোরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা দীন পরিপূর্ণ করার ঘোষণা দিয়েছেন।

আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, ‘এ উম্মতের ওপর আল্লাহর সবচেয়ে বড় অনুগ্রহ হলো আল্লাহ তাদের দীন পরিপূর্ণ করেছেন। সুতরাং তারা দীনের ব্যাপারে অন্য কিছুর মুখাপেক্ষী নয়।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির: ৩/৩৪)

আবু জর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (স.) আমাদের এ অবস্থায় রেখে গেছেন যে, কোনো পাখি শূন্যে ডানা মেলে উড়লেও তিনি আমাদের সে বিষয়ে জ্ঞানমূলক আলোচনা করতেন।’ (জামিউল আহাদিস: ৪১৬৬৭)

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যেসব স্থায়ী জিনিস জান্নাতের নিকটবর্তী করবে এবং জাহান্নাম থেকে দূরে রাখবে তা তোমাদের জন্য স্পষ্ট করা হয়েছে।’ (সুনানে তিবরানি: ১৬৪৭)

আল্লামা ইবনে মাজিশুন (রহ.) বলেন, আমি মালিক (রহ.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে নতুন কিছু শুরু করে এবং তার মধ্যে মঙ্গল দেখে, সে মুহাম্মদ (স.)-এর ওপর এ ধারণা করল যে তিনি তাঁর রিসালাতের দায়িত্ব বিশ্বস্ততার সঙ্গে পালন করেননি। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম।’ সুতরাং সে সময় যেসব বিষয় দীনের অন্তর্ভুক্ত ছিল না, তা আজও দীনের অন্তর্ভুক্ত হবে না।’ (ফাতহুল কুবিল মাতিন: ১/৮৬)

বিদআতে জড়িত ব্যক্তি কেয়ামতের দিন চরমভাবে লাঞ্ছিত হবে। সেদিন রাসুল (স.) বিদআতি লোকদের হাউজে কাউসারের পানি পান করাবেন না। তিনি তাদের বলবেন, ‘যারা আমার দীনের পরিবর্তন করেছ, তারা দূর হও, দূর হও।’ (বুখারি: ৬৬৪৩)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দীনের মধ্যে নতুন কিছু আবিষ্কার করা থেকে দূরে রাখুন। কোরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।