images

ইসলাম

যেসব মিথ্যা নিয়ে মানুষ অসতর্ক

ধর্ম ডেস্ক

১৬ অক্টোবর ২০২২, ০৩:০৯ পিএম

মিথ্যা বলা কবিরা গুনাহ। মিথ্যুক আল্লাহর অভিশাপপ্রাপ্ত। পবিত্র কোরআনে মুবাহালাসংক্রান্ত আয়াতে এসেছে, ‘অতঃপর আমরা সবাই (আল্লাহর কাছে) এ মর্মে প্রার্থনা করি যে মিথ্যুকদের ওপর আল্লাহর লানত পতিত হোক’ (সুরা আলে ইমরান: ৬১)। মহান আল্লাহ আরও বলেন, ‘(অনুমানভিত্তিক) মিথ্যাচারীরা ধ্বংস হোক।’ (সুরা জারিয়াত: ১০)

মিথ্যা বলতে থাকলে একসময় চরম মিথ্যুকের তালিকায় নাম উঠে যায়। ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) ইরশাদ করেন, ‘...কোনো ব্যক্তি সবসময় মিথ্যা কথা এবং মিথ্যার অনুসন্ধানী হলে সে শেষ পর্যন্ত আল্লাহর কাছে মিথ্যাবাদীরূপে পরিগণিত হয়।’ (মুসলিম: ২৬০৭)

এমন কিছু মিথ্যা রয়েছে, যাকে সমাজের মানুষ মিথ্যাই মনে করে না। যেমন—

১) যাচাই-বাছাই ছাড়া কোনো কথা বলা হলে সেটি ইসলাম অনুযায়ী মিথ্যা কথা। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘কারো মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে- সে যা শোনে তাই প্রচার করতে থাকে। (সুনানে আবু দাউদ: ৪৯৯২)

২) গণমাধ্যমে অসত্য বা অর্ধ-সত্য প্রচার। এটিও মিথ্যার অন্তর্ভুক্ত। মেরাজের রাতে রাসুল (স.)-কে বিভিন্ন অপরাধীদের শাস্তি দেখানো হয়—এক লোক বসা, পাশে আরেকজন দাঁড়ানো। তার হাতে লোহার পেরেক। লোহার পেরেক দিয়ে এই লোক পাশের লোকটির চোয়ালে আঘাত করে এবং পেরেকটি তার চোয়ালে ঢুকিয়ে ঘাড় পর্যন্ত নিয়ে যায়। তারপর একইভাবে অপর চোয়ালে আঘাত করে। ততক্ষণে আগের চোয়াল স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে এবং সে আবার আঘাত করতে থাকে। এ ব্যক্তি সম্পর্কে বলা হয়—সে ছিল মিথ্যাবাদী। মিথ্যা বলত এবং তা প্রচার করত। ফলে তার বলা মিথ্যা প্রচার হতে হতে দিগদিগন্তে ছড়িয়ে পড়ত। (সহিহ বুখারি: ১৩৮৬)

৩) মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা কসম খেয়ে কোনো মুসলমানের হক বিনষ্ট করল, আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম অবধারিত করে দেবেন এবং জান্নাত তার ওপর হারাম করে দেবেন।’ (সহিহ মুসলিম: ১৩৭)

৪) ব্যবসায় মিথ্যা। অর্থাৎ মিথ্যা বলে গ্রাহককে প্রলুব্ধ করা। হাদিসে এসেছে, ‘এটা অনেক বড় খেয়ানত যে তুমি তোমার ভাইকে কোনো কথা বলছ, সে এটাকে সত্য বলে বিশ্বাস করছে অথচ তুমি এতে মিথ্যাবাদী।’ (সুনানে আবু দাউদ: ৪৯৭১)

৫) মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেওয়া। মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেওয়া মুনাফেকির নিদর্শন। হাদিসে এসেছে, ‘মুনাফিকের নিদর্শন তিনটি; কথা বললে মিথ্যা বলে। ওয়াদা করে ভঙ্গ করে এবং আমানত রাখা হলে খেয়ানত করে।’ (সহিহ মুসলিম: ৫৯)

৬) শিশুদের সঙ্গে মিথ্যা। বাচ্চাদের মন ভোলানো বা তাদের কান্না থামানোর জন্য তাদের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি ও প্রলোভন দেওয়া মিথ্যার নামান্তর। মহানবী (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো শিশুকে বলল, এসো তোমাকে (এটা-সেটা) দেব। তারপর দিল না; এটিও একটি মিথ্যা।’ (মুসনাদে আহমদ: ৯৮৩৬)

৭) ঠাট্টার ছলে মিথ্যা। নবী করিম (স.) বলেন, ‘ধ্বংস তার জন্য, যে মানুষকে হাসানোর জন্য কথা বলার সময় মিথ্যা বলে! ধ্বংস তার জন্য! ধ্বংস তার জন্য!’ আবু দাউদ: ৪৯৯০)

৮) স্বপ্ন দেখেছে বলে মিথ্যা। অনেকের মধ্যে মিথ্যা স্বপ্ন বর্ণনা করার প্রবণতা আছে। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো স্বপ্ন দেখেছে বলে দাবি করল, অথচ সে তা দেখেনি, তাহলে তাকে দুটি জব একত্রে জোড়া দিতে বাধ্য করা হবে অথচ সে তা কখনোই করতে পারবে না।’ (বুখারি: ৭০৪২; তিরমিজি: ২২৮৩)

৯) অহেতুক ধারণা করার মাধ্যমে মিথ্যা। অহেতুক অনুমান করাও মিথ্যা কথার অন্তর্ভুক্ত। তাই অযথা কাউকে কোনো ব্যাপারে কুধারণা পোষণ করা যাবে না। হাদিসে এসেছে, ‘ধারণা-অনুমান সম্পর্কে তোমরা সাবধান হও। কারণ অলীক ধারণা পোষণ সবচেয়ে বড় মিথ্যা...। (সহিহ বুখারি: ৬০৬৬)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে উপরোক্ত মিথ্যা থেকে সাবধান হওয়ার তাওফিক দান করুন। সব সবসময় সত্য কথা বলার তাওফিক দান করুন। আমিন।