ধর্ম ডেস্ক
১৬ অক্টোবর ২০২২, ১১:৩৬ এএম
নেক আমল পরকালীন জীবনের মূলধন। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম। আখেরাতে সফলতার জন্য কবুলযোগ্য নেক আমলের বিকল্প নেই। কিন্তু জীবন চলার পথে ইচ্ছা ও অনিচ্ছায় এমন কিছু গুনাহ সংঘটিত হয়, যা খাঁটি ও কবুল হওয়া আমলগুলোও নষ্ট করে দেয়। তাই সেসব আমল নষ্টকারী গুনাহ থেকে সবসময় সতর্ক থাকতে হবে। এখানে নেক আমল নষ্টকারী ৬টি গুনাহ নিয়ে আলোচনা করা হলো।
১) শিরক
এক আল্লাহর সঙ্গে অন্য কাউকে শরিক করলে জীবনের সব আমল নষ্ট হয়ে যায়। আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, ‘আপনার প্রতি ও আপনার পূর্ববর্তীদের প্রতি এই মর্মে ওহি পাঠানো হয়েছে যে যদি আল্লাহর সঙ্গে শরিক স্থির করেন, তাহলে আপনার কর্ম নিষ্ফল হবে এবং আপনি ক্ষতিগ্রস্তদের একজন হবেন।’ (সুরা জুমার: ৬৫)
২) রিয়া বা লোক দেখানো আমল
যারা যশ-খ্যাতির জন্য বা লোক দেখানো মনোভাব নিয়ে নেক আমল করে, তাদের জীবনের সব নেক আমল বিনষ্ট করে দেওয়া হবে। আল্লাহ বলেন, ‘যে কেউ দুনিয়ার জীবন ও তার শোভা কামনা করে, দুনিয়াতে আমরা তাদের কাজের পূর্ণ ফল দান করি এবং সেখানে তাদের কম দেওয়া হবে না। তাদের জন্য আখেরাতে আগুন ছাড়া অন্য কিছুই নেই এবং তারা যা করেছিল পরকালে তা নিষ্ফল হবে। আর তারা যা করত তা ছিল নিরর্থক।’ (সুরা হুদ: ১৫, ১৬)
৩) দান করে খোঁটা দেওয়া
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনরা, দানের কথা বলে বেড়িয়ে এবং কষ্ট দিয়ে তোমরা তোমাদের দানকে ওই ব্যক্তির মতো নিষ্ফল করো না, যে নিজের সম্পদ লোক দেখানোর জন্য ব্যয় করে থাকে এবং আল্লাহ ও আখিরাতে ঈমান রাখে না। ফলে তার উপমা হলো এমন একটি মসৃণ পাথর, যার ওপর কিছু মাটি থাকে, তারপর প্রবল বৃষ্টিপাত সেটাকে পরিষ্কার করে দেয়। যা তারা উপার্জন করেছে তার কিছুই তারা তাদের কাজে লাগানোর ক্ষমতা রাখে না। আর আল্লাহ কাফির সম্প্রদায়কে হেদায়াত করেন না।’ (সুরা বাকারা: ২৬৪)
৪) কাউকে ‘আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করবেন না’ বলা
কাউকে ক্ষমা করা বা না করার অধিকার একমাত্র পরাক্রমশালী আল্লাহ তাআলার। তাই ‘আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করবেন না’ এ জাতীয় কথা বলা অমার্জনীয় অপরাধ। জুনদুব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেছেন, ‘এক ব্যক্তি বলল, আল্লাহর শপথ! আল্লাহ অমুক লোককে মাফ করবেন না। আর আল্লাহ তাআলা বলেন, সে লোক কে! যে শপথ খেয়ে বলে যে আমি অমুককে মাফ করব না? আমি তাকে মাফ করে দিলাম এবং তোমার আমল নষ্ট করে দিলাম।’ (সহিহ মুসলিম: ৬৫৭৫)
৫) ইচ্ছাকৃত আসরের নামাজ ছেড়ে দেওয়া
প্রকৃত মুমিন কোনো নামাজ ছাড়তে পারে না। এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে আল্লাহ তাআলা আসরের নামাজের ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা নামাজের প্রতি যত্নবান হবে, বিশেষত মধ্যবর্তী (আসরের) নামাজের প্রতি। এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যে তোমরা দাঁড়াবে বিনীতভাবে।’ (সুরা বাকারা: ২৩৮)
বুরাইদা (রা.) বলেন, নবী (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আসরের নামাজ ছেড়ে দেয় তার আমল বিনষ্ট হয়ে যায়।’ (সহিহ বুখারি: ৫৫৩)
৬) কথা-কাজে আল্লাহর রাসুলকে কষ্ট দেওয়া
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ঈমানদাররা, তোমরা নবীর কণ্ঠস্বরের ওপর নিজেদের কণ্ঠস্বর উঁচু করো না এবং নিজেদের মধ্যে যেভাবে উচ্চৈঃস্বরে কথা বলো তার সঙ্গে সেরূপ উচ্চৈঃস্বরে কথা বলো না; এ আশঙ্কায় যে তোমাদের সব কাজ বিনষ্ট হয়ে যাবে অথচ তোমরা উপলব্ধিও করতে পারবে না।’ (সুরা হুজরাত: ২)
যারা রাসুল (স.)-এর মজলিসে ওঠাবসা ও যাতায়াত করত, তাদের এ আদব-কায়দা ও শিষ্টাচার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা, তোমরা আল্লাহ ও রাসুলের আনুগত্য করো, আর তোমরা তোমাদের আমল বিনষ্ট করো না।’ (সুরা মুহাম্মদ: ৩৩)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বেশি বেশি নেক আমল করার তাওফিক দান করুন। উপরোক্ত গুনাহ থেকে সবসময় বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।