ধর্ম ডেস্ক
১২ অক্টোবর ২০২২, ০১:১৬ পিএম
ঘুম বান্দার জন্য আল্লাহ তাআলার এক বিশেষ নেয়ামত। মানবশরীরে বিশ্রামের প্রয়োজন, তাই এই নেয়ামতের ব্যবস্থা করেছেন মহান আল্লাহ। ইরশাদ হয়েছে, ‘ওয়াজাআলনা নাওমাকুম সুবাতা’ অর্থাৎ ‘তোমাদের জন্য নিদ্রাকে করেছি ক্লান্তি দূরকারী।’ (সুরা নাবা: ৯)
এই বিশ্রামে যখন বিঘ্ন ঘটে, তখন স্বাভাবিকভাবেই শরীরে ক্লান্তি অনুভব হয়, এবং টানা এভাবে চলতে থাকলে শরীর ভেঙে পড়ে। তাই সুস্বাস্থ্য রক্ষায় রাতে নিয়মমাফিক ঘুমানো জরুরি। কিন্তু দেখা যায়, রাতে অনেকের ঘুম আসে না। বিছানায় ছটফট করে সময় পার করতে হয়। তাই যারা অনিদ্রার রোগে আক্রান্ত তাদের জন্য আল্লাহর রাসুল (স.)-এর শেখানো দোয়া রয়েছে। সেই দোয়া পড়লে, আল্লাহ তাআলা অনিদ্রা দূর করে দেবেনে ইনশাআল্লাহ।
দোয়াটি হলো— اَللّٰهُمَّ غَارَتِ النُّجُوْمُ، وَهَدَأَتِ الْعُيُوْنُ، وَأَنْتَ حَيٌّ قَيُّوْمٌ، لاَ تَأْخُذُكَ سِنَةٌ وَّلاَ نَوْمٌ يَا حَيُّ يَا قَيُّوْمُ أَهْدِئْ لَيْلِيْ، وَأَنِمْ عَيْنِيْ ‘আল্লা-হুম্মা গা-রাতিন নুজুম, ওয়া হাদাআতিল উ’য়ুন, ওয়া আনতা ‘হাইয়ুন ক্বাইয়ুম, লা তাঅ্খুযুকা সিনাতুউ ওয়ালা নাওম, ইয়া ‘হাইয়ু ইয়া ক্বাইয়ুম, আহদিঅ্ লাইলী ওয়া আনিম ‘আইনি।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! তারকারাজি নিভে গেছে; (মানুষের) চোখগুলো (ঘুমে) শান্ত হয়ে গেছে; আর আপনি তো চিরঞ্জীব-চিরস্থায়ী—তন্দ্রা ও নিদ্রা যাকে স্পর্শ করতে পারে না। হে চিরঞ্জীব! হে চিরস্থায়ী! আমার রাতকে শান্তিময় করুন এবং আমার চোখে ঘুম দিন।’
জায়েদ ইবনু সাবিত (রা.) বলেছেন, তিনি আল্লাহর রাসুল (স.)-এর কাছে তাঁর দীর্ঘদিনের অনিদ্রা রোগের ব্যাপারে অভিযোগ করলে নবীজি (স.) তাঁকে উপরোক্ত দোয়াটি পড়তে বলেন। জায়েদ (রা.) বলেন, আমি এটি বললাম এবং মহামহিম আল্লাহ আমার সমস্যা দূর করে দিলেন। (বুসিরি, ইতহাফুল খিয়ারাহ: ৬/৪৬২; হাদিসটি দুর্বল, তবে আমলযোগ্য)
দুশ্চিন্তার কারণে ঘুমাতে পারতেন না হজরত খালেদ ইবনে ওয়ালিদ আল মাখজুমি (রা.)। তাই তিনি মহানবী (স.)-এর কাছে গিয়ে বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! দুঃশ্চিন্তা ও মানসিক চাপের কারণে আমি রাতে ঘুমাতে পারি না। রাসুলুল্লাহ (স.) তাকে বললেন, যখন তুমি বিছানায় আশ্রয় গ্রহণ করো (ঘুমাতে যাও) তখন বলো— اللَّهُمَّ رَبَّ السَّمَوَاتِ السَّبْعِ وَمَا أَظَلَّتْ وَرَبَّ الأَرَضِينَ وَمَا أَقَلَّتْ وَرَبَّ الشَّيَاطِينِ وَمَا أَضَلَّتْ كُنْ لِي جَارًا مِنْ شَرِّ خَلْقِكَ كُلِّهِمْ جَمِيعًا أَنْ يَفْرُطَ عَلَىَّ أَحَدٌ مِنْهُمْ أَوْ أَنْ يَبْغِيَ عَلَىَّ عَزَّ جَارُكَ وَجَلَّ ثَنَاؤُكَ وَلاَ إِلَهَ غَيْرُكَ وَلاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ ‘আল্লাহুম্মা রাব্বাস সামাওয়াতিস সাবয়ি ওয়া মা আজাল্লাত ওয়া রাব্বাল আরদিনা ওয়া মা আকাল্লাত ওয়া রাব্বাশ শায়াত্বিনি ওয়া মা আদাল্লাত কুন লি ঝারাম মিন শাররি খালক্বিকা কুল্লিহিম ঝামিআ। আইঁইয়াফরুত্বা আলাইয়্যা আহাদুম মিনহুম আও আইঁইয়াবগিয়া আলাইয়্যা আয্যা ও ঝাল্লা ছানাউকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা ও লা ইলাহা ইল্লা আংতা।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! সপ্ত আকাশ এবং যা কিছুর উপর তা ছায়া দেয়, সেসব কিছুর রব! জমিনসমুহ এবং যা কিছু সে বহন করছে, সেসব কিছুর রব! শয়তান ও যাদের সে গোমরাহ করে তাদের রব! তোমার সব সৃষ্টির অনিষ্ঠ থেকে তুমি আমার আশ্রয়দাতা হয়ে যাও। এদের কেউ যেন আমার উপর বাড়াবাড়ি করতে না পারে। সম্মানিত তোমার আশ্রয়প্রার্থী, মহিমান্বিত তোমার প্রশংসা, তুমি ছাড়া ইলাহ নেই, তুমি ছাড়া মাবুদ নেই।’ (আল-কালিমুত তাইয়্যিব: ৪৭/৩৩; মেশকাত: ২৪১১, তিরমিজি: ৩৫২৩)
সুতরাং দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপে কিংবা অন্য যেকোনো কারণে ঘুম না আসলে মুমিন মুসলমানের উচিত বিশ্বনবী (স.)-এর শেখানো দোয়াটি পড়া। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সেই তাওফিক দান করুন। আমিন।